মাধবী মুখোপাধ্যায়
মনটা খুবই খারাপ লাগছে আমার। যে সব পরিচালকরা ছিলেন তপন সিনহা, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়… তাঁদের দলেই ছিলেন তরুণবাবু। বেশ কয়েক বছর ধরে তরুণবাবু ছবি তৈরি করছিলেন না। কেন করছিলেন না জানি না। অনেক রকম ব্যাপারই তো আছে। তরুণবাবুর ছবিতে সন্ধ্যার (অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়) অবদান ছিল। আজ তরুণবাবু নেই, ঠিক কথা। প্রত্যেক মানুষকেই চলে যেতে হয়। জন্ম নিলে, মরতে হবেই। কিন্তু মানুষ অমরত্ব লাভ করে কর্মের দ্বারা। তরুণবাবুও কিন্তু তাঁর কর্মের দ্বারাই অমরত্ব লাভ করলেন। যে সব ছবি তিনি তৈরি করেছেন, তা যদি মানুষ দেখেন, তা হলেই বুঝতে পারবেন কত পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। তা ছাড়াও, তিনি ৪টি খণ্ডের বই লিখেছিলেন। সেই বই পড়লেও বোঝা যায় সিনেমা নিয়ে তরুণবাবুর জ্ঞানের বৃদ্ধি কতখানি। গান সম্পর্কে আইডিয়া ছিল ভাল। মিউজ়িক খুব ভাল বুঝতেন। ফটোগ্রাফিও ভাল বুঝতেন।
জানেন, অভিনয় নিয়েও তরুণবাবুর ধারণা ও জ্ঞান স্বচ্ছ ছিল। কেউ অভিনয় করতে না পারলে তাঁকে নিজে অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন। কাজেই বড় পরিচালককে আমরা আজ হারালাম। ‘গণদেবতা’য় আমি তাঁর পরিচালনায় অভিনয় করেছিলাম। আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিলই। অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে তাঁর দেখা হত। তরুণবাবুকে যাঁরা অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানাতেন, সেখানে আমাকেও ডাকা হত।
সন্ধ্যার সঙ্গে তরুণবাবুর ছাড়াছাড়ি নিয়ে অনেক কথা হয়। আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলি, স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার তো, তা নিয়ে অন্য কেউ কিছুই বলতে পারেন না। কেবল একটা কথা বলতে পারি, কোনও মেয়েই চায় না তাঁর ঘর-সংসার ছেড়ে বেরিয়ে চলে আসতে। ফলে সন্ধ্য়াকে এ ব্যাপারে আমি কোনও দোষ দিতে পারব না।
যাই হোক, আমার নিজের শরীরটাও ভাল নেই। তরুণবাবুও তো চাইতেন থাকতে। কেউ কি যেতে চান। যার যেমন ভাগ্য, সে তখনই চলে যাবে।