Films: ছবির সাফল্যে সিক্যুয়েল বা প্রিকুয়্যেলের ভূমিকা, কী বলছে সিনেমহল?

Sucharita De | Edited By: Sneha Sengupta

Nov 28, 2023 | 3:23 PM

Sequels-Prequels: তবে সব ক্ষেত্রেই যে সিনেমার সিক্যুয়েল বক্স অফিসে সফল হয়েছে, এমন নয়। ছবির গল্প বলার স্টাইল আগে থেকে নির্ধারণ করা না থাকলে অনেক সময় সিনেমার সিক্যুয়েল বক্স অফিসে সফল হয়না। ছবি সুপারহিট মানেই ছবির গল্প বাড়িয়ে নতুন ছবি, বেশিরভাগ সময়ে বক্স অফিসের মন পায় না।

Films: ছবির সাফল্যে সিক্যুয়েল বা প্রিকুয়্যেলের ভূমিকা, কী বলছে সিনেমহল?

Follow Us

‘টাইগার’ হোক অথবা ‘দাবাং’, ‘সূর্যবংশী’ অথবা ‘সিংঘম’, নইলে বাংলায় ‘একেনবাবু’র গল্প। ছবি হিট হলেই তার সিক্যুয়েল বানাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইন্ডাস্ট্রি (হলিউড অনেক দিন ধরেই এই সিক্য়ুয়েল-প্রিক্যুয়েলের ব্যবসায় সিদ্ধহস্ত)। বলিউড থেকে টলিউড বা দক্ষিণের ছবি, কোনও সিনেমা বক্স অফিসে সাফল্য পেলেই সেই কাহিনির সিক্যুয়েল নিয়ে কাজ করতে বেশি আগ্রহ থাকে পরিচালক-প্রযোজকদের। তবে সবসময় এই ফর্মুলা কি কাজে দেয় বক্স অফিসে? কী বলছেন টলিউডের কলাকুশলীরা। সলমন খানের ‘টাইগার’ হিট হতেই একের পর এক গল্প নিয়ে সিক্যুয়েল দেখা গেছে বড় পর্দায়। দক্ষিণের ছবিতেও ‘বাহুবলি’ হিট হতেই প্রিক্যুয়েল এসেছে, তা অবশ্যই সুপারহিটও হয়েছে। ঠিক তেমনই ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর সাফল্য পেতেই সেই ছবির প্রিক্যুয়েল-সিক্যুয়েল নিয়ে হাজির সিনেমার পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ওয়েব সিরিজেও সিক্যুয়েল খুবই জনপ্রিয়। সিরিজের গল্প সেভাবেই সাজানো থাকে। দর্শকদের ‘এর পর কী হবে’-র চাহিদার রসদসমূহ চিত্রনাট্যেই সাজানো থাকে।

তবে সব ক্ষেত্রেই যে সিনেমার সিক্যুয়েল বক্স অফিসে সফল হয়েছে, এমন নয়। ছবির গল্প বলার স্টাইল আগে থেকে নির্ধারণ করা না থাকলে অনেক সময় সিনেমার সিক্যুয়েল বক্স অফিসে সফল হয়না। ছবি সুপারহিট মানেই ছবির গল্প বাড়িয়ে নতুন ছবি, বেশিরভাগ সময়ে বক্স অফিসের মন পায় না। তবে এই বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মতে, “সিনেমা হিট হলেই যে তার সিক্যুয়েল সাফল্য পাবে, এমনটা নয়। তবে ছবির গল্প যদি পরবর্তী পর্যায়ে বলতে হয়, তাহলে অনেক সময় সেই আগের ছবি সফল হলে তার একটা ভাল প্রভাব পড়ে। তবে জোর করে কোনও গল্প বলার চেষ্টা করলে তা অনেক সময় ব্যুমেরাং হয়ে যায়, ভাল ফল নাও করতে পারে। সবটাই নির্ভর করবে গল্পের চাহিদার উপর।” প্রসঙ্গত কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ সিনেমা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস থেকে ওই ছবি তৈরি করেছিলেন। সারা বাংলায় হইচই পড়ে গিয়েছিল। এর পর এই ছবির সিক্যুয়েল করেছিলেন, নাম ‘অ্যামাজ়ন অভিযান’। সেই ছবির গল্প কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের লেখা। তবে বক্স অফিসে সেরকম সাফল্য আসেনি।

পরিচালক অভিজিত গুহ বললেন, “সিনেমার সিক্যুয়েল বেশিরভাগ সময়ে সফল হয় না। ‘শোলে’ একটি কাল্ট ছবি, তার তো সিক্যুয়েল হয়নি। আমার নিজের একটি ছবি সফল হওয়ার পর সিক্যুয়েল করেছিলাম। তবে সেটি আগের ছবিকে ছাপাতে পারেনি। খুব প্রয়োজন না হলে সিক্যুয়েল না করাই ভাল।” অভিনেত্রী পায়েল সরকারও মনে করেন, “গল্পের চাহিদা থাকলে সিক্যুয়েল-প্রিক্যুয়েল সব হতেই পারে। সেক্ষেত্রে সব সময় যে বক্স অফিসে তা সফল হবে এমন নয়, তবে দর্শকদের চাহিদা থাকলে তবেই পরিচালক-প্রযোজকদের মনে হয় কোন ছবির সিক্যুয়েল তৈরি হবে।”

সিনেমার কোনও গল্পের সিক্যুয়েল হতে পারে কি না, তা ছবি হিট হলেই হয় না। গল্পের চাহিদা, দর্শকদের মধ্যে কতটা রয়েছে তা অবশ্যই বিচার্য বিষয়। সিনেমাও আদতে ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ারের খেলা। তবে বহু সিনেমা কাল্ট হয়ে থাকলেও তার সিক্যুয়েল হয়নি। এছাড়াও আরও একটি বড় বিষয় হল সিনেমার সিক্যুয়েল অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম ছবিকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। স্বয়ং সত্যজিৎ রায় ‘অপুর ট্রিলজি’ করেছিলেন, ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বিসর্জন’, ‘বিজয়া’, এই দুই ছবি বক্স অফিসে কামাল দেখিয়েছে। আবার জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘একেনবাবু’র গল্প। তবে সবসময়ই যে সিক্যুয়েল বক্স অফিসে সাফল্য আনে, এরকমটা নয় মোটেই। ‘দ্য একেন’-এর পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “দর্শকদের পছন্দ হলেই তো ক্রিয়েটররা একের পর এক সিক্যুয়েল বানাবেন। এবং এই সবকিছুই নির্ভর করে দর্শকদের চাহিদার উপর। তাই ছবির সিক্যুয়েল হিট হবে কি না, আগে থেকে বোঝা যায় না। তবে আন্দাজ করেই ছবির সিক্যুয়েল করা হয়। আর একটি গল্প দর্শকদের পছন্দ হলে সেই গল্পের রেশ ধরে এগোলে তা অবশ্যই ভাল ফল করে থাকে।”

সিনেমার সাফল্য নির্ধারিত হয় বক্স অফিসে কত অর্থ উপার্জন হল, তার উপর (যদিও টেলিভিশন স্বত্ব আর সাম্প্রতিককালের ওটিটি স্বত্ব-ও লাভ উপার্জনের বড় উপায় প্রয়োজকদের কাছে)। তাই সিক্যুয়েলের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত থাকলেও আদতে শেষ কথা বলে বক্স অফিস। ছবি হিট হলেই দর্শকদের পছন্দ হচ্ছে আন্দাজ করা হয়। সেই সিনেমার সাফল্য ঠিক করে দেয় সিক্যুয়েলের পর আবারও সিক্যুয়েল হবে কি না। সম্প্রতি দেখা গিছে ‘গদর’-এর সিক্যুয়েল বহুবছর পর হয়েছে এবং তা সফলও হয়েছে। এই সাফল্য দেখে সুপারহিট ‘বর্ডার’-এর সিক্যুয়েল তৈরির খবর শোনা যাচ্ছে বলিউডের অন্দরে।