বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়
আমি বেশকিছু কাজ করেছি তরুণ মজুমদারের সঙ্গে। ‘পরশমণি’, ‘আগমন’ অন্যতম। আমি যদি অভিনয় করে থাকি, সেই শিক্ষা তরুণবাবুর কাছ থেকেই পেয়েছিলাম। দারুণ ভাল একজন মানুষ তরুণ মজুমদার। সংযত কথা বলতেন, মার্জিত ব্যবহার ছিল। ‘তরু’দার (তারকারা এই নামেই ডাকেন তাঁকে) মতো মানুষকে কোনওদিনও হতাশার কথা বলতে শুনিনি।
আজ সকালেও আমি খোঁজ নিয়েছিলাম তরুণবাবু। যতদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, ততদিন আমি ওঁর খোঁজ নিয়েছি। আজ তিনি চলে গেলেন। মানুষটার মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে বারবারই। আমি ফোন করেও কথা বলেছি অনেক। প্রায়সই ফোনে কথা হত আমার সঙ্গে।
তরুণ মজুমদারের মতো পরিচালক এই বাংলায় আর দুটো পাওয়া যাবে কি না জানি না। এক্কেবারে অন্যরকম ছিলেন তিনি। ওঁর মতো মানুষ পাওয়া দুষ্কর। কাউকে ‘তুমি’, ‘তুই’ বলতে শুনিনি। ‘আপনি-আগ্গে’ করে কথা বলতেন, সে যেই হোন না কেন। মাথা খাটিয়ে পরিচালনা করেছিলেন। সাহিত্য নির্ভর ছবি করতেন বেশি। কিন্তু সেই গল্পেও নিজস্ব টাচ ছিল তাঁর। বিরাট মাপের ক্ষতি হলে গেল ইন্ডাস্ট্রির। এই ক্ষতি মেটার নয়। আর তো কেউ রইল না।
বয়স হয়েছিল এটা তো ঠিকই। কেউ তো আর সারাজীবন বাঁচেন না। ভেবেছিলাম হাসপাতালে যাব। খোঁজ নিয়েছি নিয়ত। খুব কষ্ট হচ্ছে জানেন। খুব কষ্ট হচ্ছে। মন খারাপ লাগছে আমার। ভাল লাগছে না কিছুই। মানুষগুলো হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মধ্যে থেকে, বেদনা এটাই। এটাই…
অনেক সুন্দর-সুন্দর ছবি উপহার দিয়েছেন তরুণ মজুমদার। তাঁকে মানুষ মনে রাখবেন। বাংলা আজ এক নক্ষত্রকে হারাল।