পিয়া সেনগুপ্ত
আমি এখনও আতঙ্কে আছি। নেই নেই করে প্রায় ১০-১২টা ছবিতে কাজ করেছি আমি আর অভিষেক। আমাদের প্রোডাকশনেও কাজ করেছে ও। আমি ওর হিরোইন হয়ে কাজ করেছি, বোন হয়েছি, বান্ধবী হয়েছি। তপন দত্তর ‘মায়া জালের খেলা’ ছবিতে আমি, ইন্দ্রাণী হালদার, অভিষেক… আমরা তিনজন ছিলাম। সেটাই আমাদের একসঙ্গে করা শেষ কাজ। সৌমিত্র জেঠু (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) ছিলেন সেই ছবিতে।
আমার পরিবারে ওর নিত্য যাতায়াত ছিল। আমার সঙ্গে ওর খুবই ভাল বন্ধুত্ব ছিল। ‘দাদার আদেশ’, ‘মায়ের আঁচল’, ‘ঘর জামাই’… কত ছবি করলাম একসঙ্গে। আজ অভিষেক নেই। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এখনও। আমার স্বামী অনুপের (পরিচালক অনুপ সেনগুপ্ত) ছবিতেও তো ও কাজ করেছে। তালিকায় প্রায় ১২টা ছবি তো হবেই।
ভাল কাজ করছিল। কেন যে ও উধাও হয়ে গেল আমি জানি না। অভিষেক অবশ্য একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিল, ওর সঙ্গে রাজনীতি হয়েছে। প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার দিকে আঙুলও তুলেছিল। কিন্তু আমার মনে হয় আরও অন্য কারণ ছিল। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা সরকারী চাকরি তো নয়। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভীষণ কপাল কাজ করে।
নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে আঙুল তোলা, কেউ কেরিয়ার নষ্ট করে দিয়েছে… এটা ব্যক্তিগতভাবে আমার কিন্তু খুবই ফেক মনে হয়। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের হাতে কতখানিই বা ক্ষমতা থাকে বলুন তো। তাই যদি হত, তবে কি অভিষেক-ঋতুপর্ণা একসঙ্গে ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি ‘দহন’-এ কাজ করতে পারত? অভিষেক নিজে মুখে অনেক কথাই বলেছে, সেটা হয়তো কোনও কারণে ফিল করেছে বলেই বলেছিল।
কিন্তু আমি ওর চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। জানতে পেরেছি ও নাকি শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে হতে চাইনি। ওকে নাকি ডাক্তারও হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিল। ও বলল যাবে না। আর সবাই সেটা শুনল। আশ্চর্য! অসুস্থ মানুষ মানেই রোগী, পেশেন্ট। রোগীর কথা শোনা হয় নাকি এই সবক্ষেত্রে। জোর করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল ওকে। কেউ নিয়ে গেল না। না শুটিং লোকের লোকজন, না পরিবারের কেউ। বড্ড অবহেলা হয়ে গিয়েছে। সেদিন যদি বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে শুটিং ফ্লোর থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, অভিষেক আজ আমাদের মধ্যে থাকত… এভাবে চিরদিনের মতো চলে যেত না।
আরও পড়ুন: Abhishek Chatterjee Demise: ‘হয়তো ওঁর মনের মধ্যে অনেক ক্ষোভ ছিল,’ কাঁদতে-কাঁদতে কেন বললেন ঋতুপর্ণা?