এক জন ছিলেন ফ্রান্সের নিউ এজ ছবির জনক, আর অন্য জন এ দেশে চলচ্চিত্র জগতে এনেছিলেন বিপ্লব। দুজনেই প্রয়াত। একজন বেছে নিয়েছেন ‘অ্যাসিস্টেড সুইসাইড’ আর অন্যজন বার্ধক্যজনিত রোগে প্রয়াত হন বছর খানেক আগে। তবু বহু বছর আগে এই দুই মহারথীর সাক্ষাৎ হয়েছিল কোনও এক অনুষ্ঠানে। জঁ লুক গদার ও মৃণাল সেনকে এক ফ্রেমে বন্দি করেছিল কোনও এক চিত্রগ্রাহক। গদার প্রয়াত হয়েছেন গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার। তাঁর মৃত্যুদিনেই এই অমূল্য ছবি শেয়ার করেছেন মৃণাল-পুত্র কুনাল সেন।
লিখেছেন, “সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় একটি রেট্রোস্পেক্টিভ চলাকালীন আমি প্রথমবার গদারের বহু ছবি দেখেছিলাম। অল্পবয়সী ‘আমি’র সে সময় তাঁর ছবি অনুধাবন করা বেশ কষ্টসাধ্যই ছিল। কিন্তু এখনও মনে পড়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। বাবার সঙ্গে তাঁর এই ছবিটি আমার কাছে রয়েছে।”
নিষ্কৃতি মৃত্যু বেছে নিয়েছিলেন গদার, এএফফিকে তাঁর আইনজীবি প্যাট্রিক জিনারেট জানিয়েছেন এমনটাই। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন ‘একাধিক অসুস্থতা নিয়ে জর্জরিত’। কী এই অ্যাসিটেড সুইসাইড ওরফে নিষ্কৃতি মৃত্যু? ইংল্যান্ডের ন্যাশনা হেলথ সার্ভিস জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে শারীরিক ভাবে সংকটজনক কোনও ব্যক্তিকে কষ্ট থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি বা মুক্তি দেন তাঁর কাছের মানুষের সহায়তা নিয়ে। তবে ফরাসি পত্রিকা ‘লিবারেশন’এর একটি প্রতিবেদনে গদারের নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে লেখা হয়েছে, “উনি অসুস্থ ছিলেন না। ছিলেন ক্লান্ত। সেই কারণেই নিজেই নিজের জীবন শেষ করেছেন। এটি তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল।”
১৯৩০ সালে প্যারিসে জন্ম নেন তিনি। জন্ম হয়েছিল উচ্চবিত্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন ডাক্তার। মা ছিলেন ‘ব্যাঙ্ক পারিবাস’ নামক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতার কন্যা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা লেকের তীরে ছিল তাঁর বিদ্যালয়। ‘জাম্প কাট’ছিল তাঁর কৃষ্টির অন্যতম মহৎ সৃষ্টি।
পরিচালক হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের প্রথম অধ্যায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত।১৯৬০ সালে তাঁর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘের ছবি ‘ব্রেথলেস’ নতুন এক সিনেমার ভাষা জন্ম দেয়। এরপর ‘ম্যাস্কুলিন ফেমিনিন’, ‘দ্য লিটল সোলজার’, মেড ইন ইউ এস এ’-এর মতো একের পর এক কালজয়ী ছবি উনি আমাদের উপহার দিয়েছেন। সিনেমার নিজস্ব ভাষা তৈরিতে যে সমস্ত বিশ্ব-সেরা পরিচালকদের অবদান আছে,তাঁদের মধ্যে অন্যতম জঁ-লুক গদার। অনেক পরিচালকের কাছেই তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মার্টিন স্কোরসেজি, কোয়েন্টিন টারান্টিনো, ব্রায়ান ডে পালমা, স্টিভেন সোডারবার্গ, ডি. এ. পেনবেকার, রবার্ট অল্টম্যানসহ প্রমুখ।