Mumtaz Sorcar: কেবল বার্বিডলের মতো সাজিয়ে দিলেই অভিনয় করব না: মুমতাজ
Tollywood Inside: আমি এটা বলিনি যে, আমার তালিকায় থাকা প্রতিটা ছবিই 'এ ওয়ান'। পেটের দায়ে, টাকার জন্য আমাদের সকলকেই সব রকমের ছবি করতে হয়েছে... হয়ও।
Follow Us
জয়িতা চন্দ্র
বেশকয়েকদিন পর টলিউডের বড়পর্দায় আসতে চলেছেন অভিনেত্রী মুমতাজ সরকার। ১৬ বছরের অভিনয় জীবনে একাধিক চরাই-উৎরাইয়ের সাক্ষী থেকেছেন তিনি। টলিউড থেকে শুরু করে বিভিন্ন সিনে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে অভিনয় জগতের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে বহু। মুমতাজের চোখে কেমন এই চাকচিক্যে মোড়া সিনেদুনিয়া? সেই গল্পই TV9 বাংলাকে শোনালেন অভিনেত্রী।
বাংলা ছবি ‘দ্য রেড ফাইলস’-এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে মুমতাজ। সামাজিক বার্তা দেওয়ার জন্যই কি এই চরিত্র বেছে নেওয়া?
১৯৯০ সালে বানতলার ঘটনা নিয়ে ছবি। শুধু এই একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নয়, এমন অনেক ঘটনা বর্তমানেও ঘটে চলেছে, যেখানে অভিযুক্তের শাস্তি, অপরাধীর বিচারের পরও থেমে নেই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এই ছবিতে আমি একজন আইপিএস অফিসার। কোনও রাজনৈতিক রঙ বা মতাদর্শকে আক্রমণ করা নয়, সমাজের কাছে আরও একবার একটা বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। একটা প্রশ্ন তোলা: কেন এর কোনও সমাধান নেই? এই বিষয়টাই আমার ভাল লাগে।
বরাবরই আপনি একটু ভিন্নস্বাদের চরিত্র বাছাই করেছেন। বর্তমানে টলিউডে কাজ পরিধিও অনেক বেড়েছে। টলিউডের এই পালাবদলটা আপনি বা আপনার প্রজন্ম কীভাবে দেখছেন…
আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখনও টলিউড একটা ট্রান্জিশনের (পরিবর্তন) মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। এই পরিবর্তন বা বদলের হাওয়ায় যাঁরা ছিলেন, আমি তাঁদেরই একজন। তার আগে যে ধরনটা ছিল, সেটা ভীষণ আলাদা। আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই এই বদলের ভাবনাটা শুরু হয়। তবে অভিনেতা হিসেবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাটা অনেক বেশি কঠিন ছিল তখন। ভাবনার জগতে থাকলেও তা পরিবেশন করার ক্ষেত্রে একটা ‘কিন্তু-কিন্তু’ ভাব কাজ করত, কারণ এই ধরনের ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা সন্দিহান থাকতাম। তবে এখন দর্শকের গ্রহণক্ষমতা অনেক বেড়েছে। ফলে এখন সেইসব ভাবনার প্রতিফলনও দেখা যায়।
তাহলে ওটিটি অন্য স্বাদের ছবির একটা বাজার তৈরি করেছে বলে আপনি মনে করেন?
কিছু বছর আগেও ওটিটির কোনও অস্তিত্ব ছিল না। এখনও বিষয়টার আরও বিস্তার হবে। আরও প্রসারিত হবে। তখন ধীরে-ধীরে বিনোদনের স্বাদ, গ্রহণ, বর্জনগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ফলে বদল এখনও বর্তমান। তবে এই বদল নিঃসন্দেহে ভালর জন্যই। আগে যেমন আমরা ছকভাঙা ছবিতে কাজ করতে ভয় পেতাম, এখন সেই জড়তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। আগে ছবি মানে বড়পর্দা, তারপর তার স্যাটেলাইট রাইটস বিক্রি… কত-কত ছবি তো চ্যানেলে বিক্রিই হত না। সেগুলো তো মানুষের অদেখাই থেকে যেত, মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যেত।
মুমতাজ বরবরই অন্য স্বাদের ছবি উপহার দিয়ে এসেছেন। প্রথম সারির বাণিজ্যিক ছবিতে তবে সেভাবে নেই কেন আপনি? অপছন্দ নাকি সুযোগের অভাব?
আপনি যে ধরনের ছবির কথা বলছেন, যে ধরনের স্টারদের কথা বোঝাতে চাইছেন, তাঁরা সো-কল্ড কমার্শিয়াল ছবি করেন। অন্য ধারার ছবিতে তাঁদের কাজ করা শুরু অনেক পরে। যেটা আমি কেরিয়ারের শুরুতেই করেছিলাম। আমার প্রথম ছবি ‘জিরোথ্রিথ্রি’ (033), যা ভীষণভাবে একটি আর্বান অর্থাৎ শহুরে ছবি। তখন দর্শক স্বপন সাহার ছবি দেখতে অভ্যস্ত। ফলে ‘জিরোথ্রিথ্রি’ ছিল একটা চমক। তবে আমার পছন্দের কারণেই হোক বা আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই হোক, আমি স্টিরিওটাইপ থেকে বরাবরই বেরিয়ে আসতে চাই। চিরাচরিত পথে হাঁটা আমার একেবারেই পছন্দ নয়। তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটা রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করেছি। যে পথ আপনার কথায় বাণিজ্যিক ছবিতে গিয়ে মেশেনি। যাকে এক কথায় ‘জনতার ছবি’ বলে, তেমন ছবি তো করিনি। এই ছবিগুলোর ব্যাপ্তি অনেক বেশি, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার ‘রক্তকরবী’, যে ছবিটা অস্কারে গিয়েছিল, সেটা কতজন জানে? কতজন দেখেছে? কতজন আমার সেই ছবি নিয়ে কথা বলে? হয়তো প্রচারে থাকলে হতো। তবে আমি কোনওদিনই প্রচার চাইনি, পরিমাণে বেশি চাইনি, চেয়েছি ভাল মানের কাজ।
তবে কি আপনার নজরে, আপনার প্রতিটা ছবিই সেরা?
না, কখনওই নয়। আমি এটা বলিনি যে, আমার তালিকায় থাকা প্রতিটা ছবিই ‘এ ওয়ান’। পেটের দায়ে, টাকার জন্য আমাদের সকলকেই সব রকমের ছবি করতে হয়েছে… হয়ও। কিছু ছবি আছে, যেগুলোকে সেরা বলতে পারলাম না ঠিকই, তবে সেইসব ছবি করতে গিয়ে কি আমি কম পরিশ্রম করেছি? না, কখনওই নয়। ১০০০ শতাংশ উজাড় করে দিয়েছি নিজেকে। তবে এটা জেনেই করেছি যে, ছবিটা হয়তো আমার আর পাঁচটা ছবির মতো নয়।
তবে কি সো-কল্ড কমার্শিয়াল ছবিতে মুমতাজকে পাওয়া যাবে না?
যদি আমার মনে হয় যে, অন্য কোনও ছবির অনুকরণ করা হচ্ছে না, কেবলই ভাষা বদল করে (অভিনেত্রী এক্ষেত্রে ‘রিমেক’ বোঝাতে চেয়েছেন) ছবি করা হচ্ছে না, তবেই আমি করব। শুধু জামার রঙটা পাল্টে বাকিটা হুবহু টুকে দিলাম, সেটা আমার একেবারেই পছন্দ নয়। যদি আমায় অভিনয়টা করতে দেওয়া হয়, মানে বার্বিডলের মতো সাজিয়ে, ভীষণ সুন্দরী মুমতাজ, ভীষণ রোগা, খুব ভাল, চোখের পাতাগুলো খুব ভাল, ঠোঁটটা একেবারে জামরুলের মতো… যদি এর বাইরে গিয়ে আমায় চরিত্র দেওয়া হয়, যেখানে আমার কিছু করার আছে, তবেই আমি করব। আমি কাজ পাগল মানুষ। আমায় যত চ্যালেঞ্জিং কাজ দেবে, আমি করব। দর্শকদের আনন্দ দেওয়াটাই আমার কাজ। তাঁদের যেটা পছন্দ সেটা নিশ্চয়ই করব, তবে তাতে একটা অর্থ যেন থাকে।
‘আমি ফেভারিটিজ়মের শিকার’, মুমতাজের সাক্ষাৎকারের পরবর্তী অংশ আগামিকাল (১৩.১২.২০২২)