তালিবানের মুঠোয় আফগানিস্তান। বিশ্বজুড়ে উত্তপ্ত বাতাস বইছে। রাজধানী কাবুলে এখন তালিবানি নিশান। সরকারি দফতর থেকে বিনোদন পার্ক, সর্বত্রই তালিব-রাজ। এমতাবস্থায় ওই দেশের নিরীহ মানুষদের জন্য গান গাইলেন ঋদ্ধি সেন ও সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইলেন অর্থ সাহায্যও।
মোট দুইটি গান বেছে নিয়েছেন ওঁরা। প্রথমটি মার্কিনী পল্লিগীতি Wayfaring stranger ও দ্বিতীয়টি পল সিমনের গাওয়া Sound of Silence… গান গেয়েছেন ঋদ্ধি-সুরঙ্গনা দুজনেই। ঋদ্ধির হাতে গিটার-অস্ত্র। ভিডিয়ো শেয়ার করে অভিনেতা লিখছেন, “…চার দেওয়ালের মধ্যে বসে কিছু করাই বৃথা l ওখানে এখন একটা গোটা দিন সাধারণ নাগরিকরা কিভাবে কাটাচ্ছেন, সেটা আমাদের কল্পনার অতীত l বন্দুকের রাজনীতি আর বড়ো বড়ো দেশের দাবা খেলার সামনে এখনো একটা গানের সুর বা একটা কবিতা খুব ক্ষীণ হলেও বড্ডো সত্যি, এমন একটা সত্যি যেটা থেকে যাবে, বন্দুকের আওয়াজের উর্ধে l আমরা আমাদের মতো করে দুটো গান করার চেষ্টা করেছি …”। তিনি যোগ করেন, “এই পৃথিবী যেন আফগানিস্তানকে ভুলে না যায়। নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ করতে থাকুন l” পাশাপাশি জাতিসঙ্ঘের রিফিউজি এজেন্সির একটি ফান্ড রেইজার লিঙ্ক শেয়ার করে ঋদ্ধি অনুরোধ করেন,যারা এই গান শুনছেন এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁরা যেন নিজেদের মতো করে ওই সব মানুষের পাশে দাঁড়ান।
গত সোমবার থেকেই কাবুল ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রথম দিকে কিছু সংখ্যক মানুষ ভাগ্যক্রমে বিমানবন্দরে ঢুকতে পারলেও পরে তাদের পিছু নেয় তালিবান মুজাহিদ্দিন। তারা বিমানবন্দর দখল নেওয়ার চেষ্টা করতেই পাল্টা গুলি চালায় মার্কিন সেনা। দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই শেষ আশ্রয়ের খোঁজে নানা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আফগান বাসিন্দাদের।
সম্প্রতিই ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল, বিমানবন্দরে একটি প্লাস্টিকের বড় ট্রে তে পড়ে রয়েছে একটি শিশু। আশেপাশে তাঁর মা-বাবার কোনও চিহ্ন নেই। সেই ছবি মনে করিয়েছিল সিরিয়ায় আয়লানের ছবি, যাকে সমুদ্র সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ভাইরাল হয়েছে অপর একটি ছবিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে উচু পাঁচিলের এ পার থেকেই বিমানবন্দরের ভিতরে থাকা মার্কিন সেনার হাতে নিজের সন্তানকে তুলে দিচ্ছেন এক মহিলা। পাঁচিলের ও পারে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছিল কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে নিজের সন্তানকে তালিবানদের হাত থেকে রক্ষা করার শেষ চেষ্টা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল অবধি তালিবানি শাসনে মহিলাদের শিক্ষা-স্বাধীনতার অধিকার কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে যৌনদাসী বানানো বা প্রকাশ্যে খুনের মতো বহু ঘটনার জেরেই এ বার আর তালিবানের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করতে রাজি নয় আফগান বাসিন্দারা। সেই কারণেই তারা বিভিন্ন দেশের বিমানে করে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ। এর শেষ কোথায়? জানেন না কেউই– জানেন না ঋদ্ধি-সুরঙ্গনাও।
আরও পড়ুন- বাইপাসে ধাক্কা মারল গাড়ি, ভয়ানক পথ দুর্ঘটনার কবলে অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়