Satyam Bhattacharjee: আমি জানি না কে প্রথম বলেন যে, বাংলা ছবির পাশে দাঁড়াতে হবে: ‘রায়বাহাদুর’ সত্যম
Bengali Movie; আমাদের সিনেদুনিয়ায় কাজের বড়ই অভাব। অভিনয়টাই করতে চাই। ভাল ছবি এলে করতে চাই। আমার কেরিয়ারে ডাউনফল হবে না, তেমন ছবির প্রস্তাব পেলেই করব। এখন নিজেই নিজের প্রতিযোগী।
Follow Us
জয়িতা চন্দ্র
‘সপরিবারে দেখার মজার ছায়াছবি’—রমরমিয়ে চলছে অনির্বাণ ভট্টাচার্য পরিচালিত প্রথম ছায়াছবি ‘বল্লভপুরের রূপকথা’। থিয়েটারের টিম, সত্যম-সুরঙ্গনা জুটি, নাট্যকার বাদল সরকারের প্রতি ট্রিবিউট, অন্য রকমের লিরিক্স… সব মিলিয়ে বাঙালি দর্শক খুশি। টলিউডের নতুন আবিষ্কার ‘বড়পর্দার’ অভিনেতা সত্যম ভট্টাচার্যকে। TV9 বাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজা ভূপতি রায়।
সকলের ভালবাসা, সকলের আশীর্বাদ। আমার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে চিন্তার ছিল বিষয়টা, তবে অনির্বাণদা জানত কাকে দিয়ে কী করিয়ে নেওয়া যায় অথবা যাবে। আমি শুধু সেইটুকুই করেছি। অনেকগুলো লুকস ছিল, তবে চরিত্রগুলোকে যেহেতু খুব কাছ থেকে চিনি, তা-ই ভাঙতে সুবিধে হয়েছে আমার। যেমন রঘুদা আর ভূপতির মধ্যে তফাৎটা খুব স্পষ্ট। রঘুদা যেহেতু কবি, নারী পছন্দ করে, ফলে সেই চরিত্রের উপস্থাপনাটা একটু গ্রেসের সঙ্গে করার চেষ্টা, এই যা… তবে যাঁরা আমার পোশাক তৈরি করেছিলেন, লুক সেট করেছিলেন, তাঁদের জন্যই আমার পক্ষে এতটা সহজসাধ্য হয়েছে এই চরিত্রগুলোকে ভাগ নেওয়াটা। এরপর অনির্বাণদার সাজেশন, ‘অতিরঞ্জিত করবি না কিছুই’, ‘খুব সহজ রাখবি’… সেগুলো মাথায় রেখেছিলাম। আসলে এই ছবির ক্ষেত্রে অভিনয়টা একটা বিশাল অস্ত্র।
সহজ বিষয়টাকে সহজভাবে উপস্থাপনা করাটা কতটা কঠিন ছিল
দেখুন, সহজ বিষয়টা তুলে ধরাটা কিন্তু বেশ কঠিনই। আমাদের ছবি তৈরির যে প্রসেস, সেটা যে ভীষণ মসৃণ হয়ে গিয়েছে, এমনটা নয়। বর্ষার সময়ের শুট, পোড়ো একটা বাড়ি, বারে বারে যেখানে জল ঢুকে যাচ্ছে। আমরা নিজেরাই সকলে মিলে শুটিং থামিয়ে সেটা পরিষ্কার করছিলাম। সত্যি বলতে কী, আমাদের টিমের প্রত্যেক সদস্যই খুব ডেডিকেটেড ছিলেন। এটা যেমন একটা বিষয় ছিল, ঠিক তেমনই আবার তথাকথিত কোনও বিগ স্টার না-থাকায় ছবি প্রচারের ব্যাপারটা প্রযোজনা সংস্থার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। সেটাও বেশ কঠিন ছিল। ফলে নিঃসন্দেহে এই সহজ ছবিটা তৈরি করতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি তো হতে হয়েইছে।
‘বল্লভপুরের রূপকথা’র এতটা সফল হওয়ার পিছনে কী-কী কারণ আছে বলে আপনার মনে হয়?
বাঙালি তো এমনই গল্প দেখতে-শুনতে অভ্যস্ত, ‘স্বর্ণযুগ’ বলতে আমরা যা বুঝি, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘মৌচাক’, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’… সবই খুব সাধারণ মানুষেরই গল্প ছিল। আর সেই সাধারণ মানুষের গল্প দেখতেই তো সাধারণ দর্শক দলে-দলে ভিড় জমাতেন প্রেক্ষাগৃহে।
প্রতিটা ফ্রেমে নতুনত্বের ছোঁয়া…
একদম, এই চেষ্টাটা ছিল প্রথম থেকেই। আগে থেকে কিছু ভেবে নেওয়া, আবার কিছু জিনিস চর্চা করতে-করতে নতুন সংযোজন করা, সিনেমা শুরুর আগে তবে ধূমপানকে কেন্দ্র করে সতর্কীকরণ আর শেষ ফ্রেমে অনির্বাণদার (পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য) পড়ে যাওয়াটা কিন্তু অনির্বাণদারই ভাবনা। অনির্বাণদা কখনওই ছবির মেজাজ থেকে বেরিয়ে যেতে চাননি।
দর্শক কি তবে বাংলা ছবির পাশে দাঁড়াল?
আমার মতে যে সহজ জিনিসটা মানুষকে টানছে, সেই বিষয়টা বাঙালির মনের কোণে কোথাও যেন একটা লুকিয়ে ছিল। এই ছবির হাত ধরে আবার যেন তাঁরা ফিরে পেল। যেমন এই কমিউনিটি ওয়াচের বিষয়টা: পরিবারের সঙ্গে দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে দেখা, ছুটির দিন দেখে যাওয়া, ভাইবোনেরা একসঙ্গে দেখাতে যাওয়া, এটাই তো আমাদের সংস্কৃতি। কোথাও গিয়ে যেন হারিয়ে যাচ্ছিল এই বিষয়গুলো। সেটা করোনার জন্যও হতে পারে বা ওটিটির জন্যও হতে পারে। তবে এই যে সবাই মিলে একটু পপকর্ন হাতে নিয়ে ছবি দেখার আনন্দ, পরিবারের ছুটির দিনের পরিকল্পনায় ছবিকে আবার ফিরিয়ে আনা, এটা দারুণ বিষয়। তবে এই প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফেরানোর কাজটা তো একা ‘বল্লবপুরের রূপকথা’ করেনি, ‘কর্নসুবর্ণের গুপ্তধন’ করেছে, ‘লক্ষ্মীছেলে’ করেছে, ব্যোমকেশ’ও করেছে। তবে এটা যেহেতু খুব সহজ, সরল ছবি, সাধারণ মানুষদের নিয়ে সাধারণ একটা ছবি… সেটাই হয়তো একটু বেশি ক্লিক করে গিয়েছে।
আমি সত্যি জানি না কে বা কারা প্রথম এই কথাটা বলেন যে, বাংলা ছবির পাশে দাঁড়াতে হবে। আমার ঠিক জানা নেই। জানা থাকলে প্রশ্নটা আমি তাঁকেই করতাম। সত্যিই তো… কোনও দরকার নেই পাশে দাঁড়ানোর। সত্যি-সত্যি একটা ভাল ছবি তৈরি হলে দর্শক পাশে কেন, হল ভরিয়ে দেখবেন। আমার মনে হয়, কোথাও গিয়ে যেন আমরা আমাদের শিকড় থেকে সরে যাচ্ছি। আমরা যে বাঙালি, সেই পরিচয়টা কোথাও গিয়ে যেন হারিয়ে যাচ্ছিল। ফলে মানুষ হয়তো নিজের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারেনি।
ভাল ছবি তো এখনও হচ্ছে, তবে দর্শক কী চায় সেই বিবেচনাটা কি সিনেদুনিয়া করতে ভুলে যাচ্ছে?
প্রতিযোগিতা নয়, নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই, আমি আমার থেকেও ভাল কিছু বানাব, আরও উন্নত মানের গল্প তৈরি করব। আর সেটা করতে গিয়েই দর্শকদের থেকে মাঝেমধ্যে দূরত্বটা বেড়ে যায়। একজন অভিনেতা হিসেবে বলতে পারি, যে ছবিগুলো চলেনি, সেই ছবিগুলোর কোথাও খামতি ছিল। মানুষ তো দিনের শেষে মানুষের গল্পই দেখতে চায়। সেই সংযোগটাই যদি স্থাপন না করা যায়, তাহলে মুশকিল। যেমন ‘লক্ষ্মীছেলে’, আমি এতটাই রিলেট করতে পেড়েছি, যে আমার খুব ভাল লেগেছে। দিনের শেষে প্রতিযোগিতা তো থাকবেই, সেটাকে এড়িয়ে না গিয়ে মোটিভেশন হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। তবে মানুষ কী চায়, দিনের শেষে সেটা ভুললে বোধহয় বিপদ। মানে ওই যুগের হাওয়ায় তাল মিলিয়ে ভেসে যাওয়া।
তবে খামতি থাকছে কোথায়?
আমরা অনেক সময় দর্শককে বোকা ভেবে ফেলি। দর্শক সব বোঝেন। গোটা বিশ্বের ছবি তাঁরা দেখছেন। তাঁরা রিলস দেখে ফেলেছেন, তাঁরা ওটিটি দেখছেন, ফলে তাঁদের স্বাদজ্ঞান যথেষ্টই আছে। এই ছবিকে পাতি কমেডি বলে ফেলে দিতে পারত, এই কমেডি কি চলে– বলতেই পারত।
দর্শক ‘আরআরআর’ দেখেছে, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ দেখেছে, ভিএফএক্স-এর কাজ দেখেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে রঘুদাকে সেই দর্শকই গ্রহণ করল। ট্রোলডও তো হতে পারত?
একদম। দেখুন, সবাই তো চায় তাঁর ছবি সকলে দেখুক, যেগুলো ট্রোলড হয়, আমার মনে হয় না যে কেউ জেনে বুঝে করছে। সেই ছবির ক্ষেত্রে ঠিক কী কাজ করেনি, সেটা আমার পক্ষে বলা খুব কঠিন। তবে হ্যাঁ, আমাদের টিমের এক সদস্যকে এক দর্শক বলেছেন, যে নাটমন্দিরে রঘুদার উঠে যাওয়াটা কেমন যেন পুতুল খেলার মতো লেগেছে।
টলিউডের নতুন আবিষ্কার সত্যম। এবার কি, অভিনয় না কি সহ-পরিচালনায় ফেরা?
আমাদের সিনেদুনিয়ায় কাজের বড়ই অভাব। অভিনয়টাই করতে চাই। ভাল ছবি এলে করতে চাই। আমার কেরিয়ারে ডাউনফল হবে না, তেমন ছবির প্রস্তাব পেলেই করব। এখন নিজেই নিজের প্রতিযোগী। দর্শক আশা তো করেনই। সেটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করব ভাল কাজ দিয়ে।
পরিবারের সকলের কেমন লাগল ‘রায়বাহাদুরকে’ পর্দায় দেখে?
দারুণ যে লেগেছে, সকলেই বলছে। এটাই তো বড় পাওনা। আমরা যখন প্রেক্ষাগৃহগুলোয় গিয়েছি, বিশেষ করে সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোয়, দেখছি প্রেক্ষাগৃহ বোঝাই দর্শক। প্রকৃত অর্থে হাউসফুল, মানুষ ভীষণ উচ্ছসিত। আমার পরিবারও, বিশেষ করে মায়েদের অনুভূতিগুলো খুব চেনা, একইরকম। সন্তানের সাফল্যে তাঁদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশটা চোখের জলেই ঘটে। তবে কেবল মা-ই নন, পরিবারের সকলেই ভীষণ আনন্দিত। আমার বান্ধবীও খুব খুশি।