স্নেহা সেনগুপ্ত
তাঁকে বাংলার এক নম্বর ইউটিউবার বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না। তিনি ‘দ্য বং গাই’ কিরণ দত্ত। কিন্তু কিরণের জীবনেও স্ট্রাগল আছে প্রচুর। অনেক কষ্টের পর এই সাফল্যের জায়গাটা তৈরি করেছেন কিরণ। কিরণ অভিনয় করেছেন সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ়ে। গত বছর মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি ‘কলকাতা চলন্তিকা’। পাভেল পরিচালিত ওই ছবিতে তিনি ছিলেন দিতিপ্রিয়া রায়ের বিপরীতে। সেই অর্থে দেখতে গেলে কিরণ এখন টলিউডেরও অংশ। একটা সময় নেটিজ়েনদের কমেন্টে গালাগালি দেখে কেঁদে ফেলতেন। সেই খারাপ লাগা কাটিয়ে কীভাবে বাংলার একনম্বর ইউটিউবার হয়ে উঠলেন কিরণ… রইল সেই কাহিনি। সঙ্গে কিরণ TV9 বাংলার সঙ্গে শেয়ার করেছেন তাঁর প্রেমকাহিনিও।
প্রশ্ন: বাংলার জনপ্রিয় ইউটিউবার কিরণ দত্ত সিনেমা-ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করে ফেললেন, মুম্বই থেকে কি কোনও অফার এল?
কিরণ: অডিশন ক্লিপ পাঠাতে বলেন অনেকে। মুকেশ ছাবরা টেক্সট করেছিলেন। ভাববেন না, আমি বিরাট কেউ হয়ে গিয়েছি। কিন্তু সত্যিটা হল এটাই যে, আমার অভিনয়ে ইন্টারেস্ট খুব কম। তাই অনেক ক্ষেত্রে এড়িয়েও যাই বিষয়টা। ‘কলকাতার চলন্তিকা’ সিনেমায় অভিনয়ের পর আমার আর সেভাবে ক্লিপ পাঠানোও হয়নি।
প্রশ্ন: সর্বভারতীয় স্তরে অনেক ইউটিউবার আছেন: যেমন প্রাজক্তা কোলি, ভুবন বাম… আপনার প্রিয় কে?
কিরণ: সত্যি বলতে ভুবন বাম। আমি যে সময় ইউটিউবার হিসেবে যাত্রা শুরু করি, সেই ২০১৫ সালে, সেই সময় ইন্ডিয়াতে ছিলই কেবল ভুবন বাম, টিভিএফ, এআইবি… স্বতন্ত্র ক্রিয়েটার বলতে আমি প্রথম দেখি ভুবন বামকেই। বাংলাদেশে ছিল ‘সলমন দ্য ব্রাউন ফিশ’, যাকে দেখে প্রথমে বাংলায় কনটেন্ট ক্রিয়েট করার আইডিয়া মাথায় আসে।
প্রশ্ন: ভুবন বামের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ নাকি এসেছিল?
কিরণ: এইটা বললে লোকে বাড়িতে এসে আমাকে মেরে যাবে। আমি যা-যা কাণ্ড ঘটিয়েছি একটা সময়! নিজেরও ভাবলে অবাক লাগে এখন। ভুবনের টিম থেকেই প্রথম প্রস্তাব এসেছিল। আমাদের কোল্যাব (কোল্যাবরেশন অর্থাৎ এক্ষেত্রে ডিজিটাল কন্টেট ক্রিয়েটারদের একসঙ্গে কাজ) করার কথা ছিল। সেই সময় ভুবনের প্রথম ওয়েব সিরিজ় ‘ঢিন্ঢোরা’ আসছিল। সর্বত্র্ই প্রোমোট করতে চাইছিল। ভুবনের ম্যানেজারের সঙ্গে আমার সম্পর্কও ভাল। সেই সময় আমার ওঁর সঙ্গে কো-ল্যাব করার ইচ্ছে ছিল খুবই। পাশাপাশি এসেছিল জিতদার সঙ্গে ভিডিয়ো তৈরি করার অফারও।
প্রশ্ন: ভিডিয়ো তৈরির আইডিয়া পাচ্ছেন না, এই বিষয়গুলো কিরণ দত্তকে কতখানি যন্ত্রণা দেয়?
কিরণ: ভীষণভাবেই ফেস করি বিষয়টা। আমি যেহেতু কমেডিটা করি, তাই মনে হয় সেটাই সবচেয়ে কঠিন। ইনফর্মেশন বেসড ভিডিয়ো তৈরি করা অনেক সহজ সেই অর্থে। কিন্তু যতক্ষণ না কমেডি আসছে মাথায়, জোর করে লেখা যায় না। ২০২৩ সালে এসে মানুষ অতিরিক্ত অসহিষ্ণু হয়ে গিয়েছে। তাই কী নিয়ে কমেডি করব, সেটা ভাবতে-ভাবতেই সময় চলে যায়। অনেক সময় এমনটাও হয় স্ক্রিপ্ট লিখি কিংবা জোকস লিখি, আর সঙ্গে-সঙ্গে সেটা মুছেও ফেলি।
প্রশ্ন: দেখলাম তো, বুম্বাদার (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়) সঙ্গে যখন ‘কাছের মানুষ’-এর প্রচার করছিলেন, বাসে ওঠার ছবিটা নিয়ে অনেক ট্রোলিং হয়েছিল…
কিরণ: হ্যাঁ। অনেকে অনেক কথা বলেছিলেন।
প্রশ্ন: ট্রোলিং করলে নিশ্চয়ই খারাপ লাগে?
কিরণ: লাগে। খারাপ লাগে। আরও বেশি খারাপ লাগত যখন শুরুর দিকে ভিডিয়ো বানাতে শুরু করেছিলাম। কমেন্ট দেখে আমি কাঁদতামও।
প্রশ্ন: সিরিয়ালসি? কান্নাকাটি করতেন?
কিরণ: হ্যাঁ। খুব কাঁদতাম। খারাপ লাগত খুব। বারবার মনে হত কী এমন খারাপ করলাম আমি। মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতাম তারপর থেকে। দেখলাম, যাই-ই করি না কেন, কিছুতেই কাউকে খুশি করতে পারছি না। আসলে গালাগালিগুলো খুব একটা কনস্ট্রাকটিভ নয়।
প্রশ্ন: আপনি লোককে রোস্ট করেন ঠিকই। কিন্তু গালাগালি করেন না। তবে অনেক ইউটিউবার সেটা করেন। বিষয়টাকে আপনি কী চোখে দেখেন?
কিরণ: অনেককে অনেক কিছু করতে দেখি। মহিলাদের বডি পার্টস নিয়ে মন্তব্য করেন তাঁরা। আমার দিকে আঙুল তোলেন। বলেন, এই তো ‘বং গাই’কে দেখেই শেখা। আমার কিন্তু তখন হেব্বি গায়ে লাগে। মনে হয়, আমি তো এগুলো কখনও বলিইনি। কাউকে এগুলো তো শেখাইনি। তবে গালাগালি নিয়ে আমার সেই অর্থে আপত্তি নেই। জোক করার সময় গালাগালি দিলে হয়তো ভালই লাগে। কিন্তু আমার -এও মনে হয়, বাংলায় ইউটিউবারদের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ গালাগালির ব্যবহারই অপ্রয়োজনীয়।
প্রশ্ন: স্যান্ডি সাহা খুবই জনপ্রিয়। ওঁর ভিডিয়ো কেমন লাগে?
কিরণ: স্যান্ডির কনটেন্ট আমার কোনওকালেই ভাল লাগেনি। কথাটা আমি ওঁকে সামনাসামনিই বলি। মানুষ হিসেবে হয়তো ভাল হতে পারে। কিন্তু কনটেন্ট আমার ভাল লাগে না। তাই আমি ওকে কনটেন্ট ক্রিয়েটার মানি না।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক ভিডিয়োয় প্রেমিকার পরিচয় অফিশিয়াল করলেন আপনি… সেটা কী খুব চাপে পড়ে বলতে হয়েছে?
কিরণ: আসলে যেই কারণে ওঁর নামটা বলছিলাম না, সেই বিষয়টাই ঘটছিল। দেখছিলাম, ওঁকে নিয়ে ১০টা উলটোপালটা ভিডিয়ো তৈরি হয়ে যাচ্ছিল। নোংরামো হচ্ছিল। সেটা থামানোর দরকার ছিল খুবই।
প্রশ্ন: আপনার প্রেমিকা অন্তরা রায় মজুমদারও তো কনটেন্ট ক্রিয়েটার…
কিরণ: ও জ্ঞানবাণীতে আবৃত্তি করত। ক্রিয়েটিভ কাজ করত। আমার ভাল লাগত তখন থেকেই। আমাদের একসঙ্গে ভিডিয়ো তৈরি করার প্ল্যানও ছিল। সেটা হয়ে ওঠেনি।