বলিউড হোক অথবা টলিউড (টালিগঞ্জের টলিউড এবং দক্ষিণের টলিউড, দু’ক্ষেত্রেই)—সর্বত্রই পুলিশকে নিয়ে তৈরি সিনেমা-সিরিজ়ের গল্প দর্শকদের মনে ধরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। শুধু মনে ধরাই নয়, আরও নির্দিষ্ট করে বললে হয়তো এভাবে বলা যায়: রামগোপাল ভার্মার সৌজন্যে ‘সত্যা’, ‘কোম্পানি’-র সূত্রে যেমন একদিকে গ্যাংস্টারদের ‘অন্য’ জীবনের ছবিটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল এক সময়, ঠিক একইভাবে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ অথবা ‘মাচো’ পুলিশের ইউনিফর্ম-পরা পরিচিত চেহারার বাইরের ‘অন্য’ ছবিগুলোও ধীরে-ধীরে, স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়েছিল হলমুখী অডিয়েন্স। বলিউডের দিকে তাকালে দেখা যায়, বছরের পর বছর প্রিয় নায়ক যখন পর্দায় পুলিশের পোশাকে আবির্ভূত হয়, তখন সিনেমা হল সিটি-হাততালিতে ভরে ওঠে। সিঙ্গল স্ক্রিনে একসময় পুলিশ-নায়কের এন্ট্রি সিন-এ খুচরো পয়সা ছুড়ে ফেলা ছিল রেওয়াজ। একদম হালফিলের ছবি ‘জওয়ান’-এর কথাই যদি বলা হয়, তাহলেও দেখা যাচ্ছে যে, শাহরুখ খানের পুলিশরূরী চরিত্র আজ়াদ-ও ‘মোগ্যাম্বো খুশ হুয়া’র মতো আনন্দ দিয়েছে অডিয়েন্সকে। গল্পে চমক থাকলেও মূল ফর্মুলাটা কিন্তু সেই ‘ওল্ড ওয়াইন ইন আ নিউ বটল’। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে সেই পুলিশ। সমাজের জঞ্জাল সাফ করতেই তাঁর আগমন (‘অব তক ছপ্পন’-এ তো নানা পাটেকরের মুখে সংলাপই ছিল: ‘সোসাইটি কা কচড়া সাফ করনে নে লিয়ে হম’)।
বলিউডের সৌজন্যে পুলিশ-নায়কের ছবির সিক্যুয়েল তৈরির ট্রেন্ডও কিছু নতুন নয়। যেমন সলমন খানের ‘দাবাং’-এর সাফল্যের পর ‘দাবাং’ সিরিজ তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে, পরিচালক রোহিত শেট্টি তো এক কদম এগিয়ে পুলিশের আস্ত একটা বাহিনিই তৈরি করে ফেলেছেন। ‘সিংহম’ দিয়ে যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন, পরবর্তীতে ‘সিম্বা’, ‘সূর্যবংশী’-র মাধ্যমে তাঁর কপ সিরিজ় এবং বৃহত্তর কপ ইউনিভার্স সুপারহিট। এবার এই ছবিগুলির ‘কমন ফ্যাক্টর’ হল একাধিক পুলিশ চরিত্রকে একই ছবিতে দেখা। বিভিন্ন ছবির পুলিশ চরিত্র একত্রিত হয়ে একটি নতুন গল্প বলা। একেই বলা হচ্ছে ‘কপ ইউনিভার্স ফিল্ম’।
এই ট্রেন্ড এখন টলিউডেও হাজির। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এই কপ-কাহিনির জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবি দিয়ে, পরবর্তী সময়ে তিনি এনেছেন ‘ভিঞ্চিদা’। এখন এই দুই ছবির প্রধান পুলিশ চরিত্র, প্রবীর চক্রবর্তী আর বিজয় পোদ্দারকে একসঙ্গে এনে ছবি তৈরি হয়েছে ‘দশম অবতার’। ২০২৩-এর দুর্গোৎসবে এই ছবির মুক্তি। এই ছবির ট্রেলারে দুই পুলিশ চরিত্র প্রবীর ও বিজয়রূপী প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের লুক অ্যান্ড ফিল দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে ইতিমধ্যেই। টলিউডের অন্দরের খবর, কপ ইউনিভার্স-এর ফর্মুলাকে ব্যবহার করে আগামী দিনে ‘শত্রু’ ছবির পুলিশ শুভঙ্করকে নিয়ে নতুন ছবির পরিকল্পনা চলছে। আর এই বিষয়ে সবথেকে বেশি উৎসাহী অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত সাদা-কালো ‘শত্রু’ ছবির পুলিশ শুভঙ্করের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টলিউডের অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। এই ছবির সাফল্য দর্শকদের এখনও মনে রয়ে গিয়েছে। এই ছবি ছাড়াও রঞ্জিত মল্লিক আরও বেশ কিছু ছবিতে পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। যার মধ্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘নবাব’, ‘ইন্দ্রজিৎ’-এর মতো সিনেমা। মাঝে অভিনয় থেকে সরে গিয়েছিলেন অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। তবে আশার কথা এখন বেশ কিছু ছবি ও ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছেন রঞ্জিতবাবু। তার মধ্যে আবার ‘তারকার মৃত্যু’ ছবিতে পুলিশের চরিত্রে দেখা যাবে প্রবীণ এই অভিনেতাকে। তাই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও রঞ্জিত মল্লিককে যদি আবার একসঙ্গে ‘কপ ইউনিভার্স ফিল্ম’-এ দেখা যায়, সেই আশায় অবশ্যই থাকবে দর্শক। হলিউডের সুপারহিরো মাল্টিভার্স ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই বলিউড ও টলিউডের এই ‘কপ ইউনিভার্স ফিল্ম’-এর রমরমা। তবে বলিউডের মতো টলিউডের ‘দশম অবতার’ সফল হলে টলিউডেও এই ‘কপ ইউনিভার্স’ ছবির ট্রেন্ড শুরু হয়ে যাবে বলে ধারণা ইন্ডাস্ট্রির একাংশের। এর ফলাফল হিসেবে রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যকেও একসঙ্গে দেখা যেতে পারে, এমনই বিশ্বাস ওয়াকিবহাল মহলের।