Belashuru: বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ছবির মুক্তি, ‘শেষে’র এই ‘শুরু’ সম্পর্কে যা বললেন দুই কন্যা
Soumitra-Swatilekha: 'বেলাশেষে' ও 'বেলাশুরু' কতখানি জুড়ে আছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর জীবনে? জানালেন পৌলমী বসু ও সোহিনী সেনগুপ্ত।
স্নেহা সেনগুপ্ত
২০ মে (আগামী শুক্রবার) মুক্তি পাচ্ছে নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘বেলাশুরু’। ব্লকবাস্টার ও সারা দেশে সাড়া ফেলে দেওয়া ছবি ‘বেলাশেষে’-এর গোটা টিম রয়েছে এই ছবিতে। রয়েছেন দুই কিংবদন্তি তারকা অভিনেতাও। একজন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও অন্যজন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। যে সৌমিত্র ও স্বাতীলেখা সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সন্দীপ ও বিমলার চরিত্রে। সেই জুটিকেই তাঁদের ‘বেলাশেষে’ ছবিতে নিয়ে এসেছিলেন নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ছবিটি হিট করে। ফের সেই জুটিকে নিয়েই তাঁরা তৈরি করেন ‘বেলাশুরু’। ছবির ট্রেলার, ছবির গান ‘টাপা টিনি’, ‘সোহাগে আদর’-এ হিট করেছে ভীষণরকম। সেই সঙ্গে সৌমিত্র-স্বাতীলেখার অভিনয়, ট্রেলারে যার ঝলক পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু দুঃখের কথা এটাই, সৌমিত্র ও স্বাতীলেখা দু’জনের কেউই আর বেঁচে নেই। আমাদের মাঝে তাঁদের শারীরিক উপস্থিত নেই ঠিকই, কিন্তু অভিনেতার তো কোনও মৃত্যু হয় না। তাই সেই কথাকে শক্তি হিসেবে গ্রহণ করেই এগিয়ে চলেছে টিম ‘বেলাশুরু’। দর্শক তো বটেই, ‘বেলাশুরু’র টিমের ক্ষেত্রেও তাই… সৌমিত্র-স্বাতীলেখাকে স্ক্রিনে দেখার জন্য সকলে অপেক্ষারত। কিন্তু সৌমিত্রর কন্যা পৌলমী বসু ও স্বাতীলেখার কন্যা সোহিনী সেনগুপ্ত… তাঁরা কী বলছেন? ছবি মুক্তির আগে TV9 বাংলার মুখোমুখি পৌলমী ও সোহিনী।
‘বেলাশেষে’ ও ‘বেলাশুরু’ কতখানি জুড়ে আছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর জীবনে?
TV9 বাংলাকে পৌলমী বসু বলেছেন:
“‘বেলাশেষে’ নিয়ে বাপি খুবই খুশি ছিলেন। কারণ, ‘বেলাশেষে’র যে প্যান ইন্ডিয়া প্রভাব ছিল, সারা ভারতবর্ষ যেভাবে ছবিটি দেখেছিল, অনেক অবাঙালি আমাকে ও আমার বাবাকে ছবিটা নিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন, বাহবাও জানিয়েছিলেন। বাপির কাছে এটা খুব বড় ব্যাপার ছিল। যে অবাঙালিরা ছবি দেখে প্রশংসা করেছিলেন। এটা ছিল খুবই বড় প্রাপ্তি। বাংলা ছবি তৈরি করে অবাঙালিদের ঘরে-ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাপি। এটা আমার বাবাকে খুব খুশি করেছিল। উনি খুবই তৃপ্ত ছিলেন। নন্দিতাদি (নন্দিতা রায়) ও শিবপ্রসাদ (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) যে ধরনের ছবি তৈরি করেন, প্রত্যেকটি কনটেন্টভিত্তিক। ওঁদের আমার বাবা খুবই বাহবা দিতেন।
যে ছবিগুলিতে বাপি অভিনয় করেনওনি, যেমন ‘হামি’, ‘কণ্ঠ’, সেগুলি তাঁর ভাল লেগেছিল বিষয়বস্তুর কারণে। বাপি সেগুলি নিয়ে আমাদের কাছে প্রশংসা করেছিলেন। নন্দিতাদি-শিবুদার কাজের প্রতি নিষ্ঠা নিয়েও খুশি ছিল। ‘বেলাশুরু’ নিয়ে কথা বলার আগেই বাবা চলে গেলেন। কিন্তু ‘বেলাশেষে’ নিয়ে বাপি এক্সাইটেড ছিলেন খুব। তিনি বলতেন বাংলা ছবি করে যে এত অবাঙালির কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়, সেটা বাপির কাছে ছিল বিশাল বড় ব্যাপার।
বাপির কাছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটাই ছিল মস্ত বড় পরিবার। কাজ করতে খুব ভালবাসতেন বাপি। ‘বেলাশুরু’ বা ‘বেলাশেষে’র অভিনেতারা খরাজ মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা অপরাজিতা আঢ্য, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শঙ্কর চক্রবর্তী… বাপি ওদের খুবই ভালবাসতেন। আমি ‘বেলাশুরু’র ট্রেলার লঞ্চে গিয়েছিলাম। মনামী ঘোষ বলছিলেন, শুটিংয়ের সময় বাপি ওদের সঙ্গে অনেক গল্প করতেন। বাপির কাছে সেটা ছিল আনন্দের একটা কাজ। সকলে মিলে পরিবারের মতো কাজ করে যাওয়া বাপির কাছে ছিল দারুণ উপভোগ্য একটা বিষয়। সুখকর বিষয়।”
TV9 বাংলাকে সোহিনী সেনগুপ্ত বলেছেন:
“‘বেলাশেষে’ ও ‘বেলাশুরু’ মায়ের জীবনে অনেকটাই জুড়েছিল। মা তো খুব একটা ছবিতে অভিনয় করেননি। যে কটা করেছিলেন, সেগুলো সুপারহিট। এবং আমি নিশ্চিত জানি ‘বেলাশুরু’ও সুপারহিট হবে। আমার মা যে ধরনের অভিনেত্রী ছিলেন, যে কোনও চরিত্রেই অসামান্য অভিনয় করতেন। আমি মাকে কোনওদিনও কোথাও খারাপ অভিনয় করতে দেখিনি। স্ত্রিনে যেখানে-যেখানে কাজ করেছিলেন, তিনি অসামান্য ছিলেন। আমার বিশ্বাস ‘বেলাশেষে’র চেয়েও ভাল হবে ‘বেলাশুরু’। আমি ছবিটা দেখেছি। শিবু (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) আমাকে ছবিটা দেখিয়ে দিয়েছে। সবাইকে বলছি, দারুণ তৈরি করেছে ছবিটা।
সৌমিত্রকাকু ও আমার মায়ের অনস্ক্রিন জুটি দারুণ। দু’জনের মধ্যে দারুণ কেমিস্ট্রি। ক্যামেরার বাইরে বহু বছর ধরে তাঁরা বন্ধু। সুখে-দুঃখে, ঝগড়ায় ও ভালবাসায় তাঁরা বন্ধু। ওঁদের খুব মিস করি। নান্দিকারের ফেস্টিভ্যালের মধ্যে ‘বেলাশুরু’ র শুটিং করেছিলেন মা। সৌমিত্রকাকু শুটিং করেছিলেন থিয়েটার সামলে। আমরা মিলে মিশে কাজ করে নিই। বোঝপড়া থাকলে সব ঠিক থাকে। সব কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে।
‘বেলাশুরু’ ছবিটা ২০ তারিখ রিলিজ় করছে। কিন্তু ছবির এই দুই প্রোটাগনিস্ট – সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত এই পৃথিবীতে নেই। এরকম তো ঘটে না সচরাচর। মানব দেহ নশ্বর। চিরকাল কেউই থাকেন না। কিন্তু আর্টিস্টের মজা হল, তিনি চলে গেলেও মানুষের মনে বেঁচে থাকেন। স্মৃতিতে বেঁচে থাকেন। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেয়া চক্রবর্তী, শম্ভু মিত্রর মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একটি ছবিও নেই। কিন্তু মানুষ তাঁদের মনে রেখে দিয়েছেন। কেন না তাঁদের কাজ ভোলার নয়। শিল্পের জন্য কোনও শিল্পীর অবদান ভোলার নয়।”