সেই ১৯৭৬ সালের কথা। আইন নিয়ে লেখাপড়া করা এক নবাগত অভিনেতাকে দেখলেন বাংলার দর্শক। মুক্তি পেল ‘জন অরণ্য’। সত্যজিৎ রায়ের ছবি। অনেক খুঁজে পেতে এই নবাগত অভিনেতা প্রদীপ মুখোপাধ্যায়কে ‘জন অরণ্য’-এর সোমনাথের চরিত্রে বেছে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ। ছিমছাম চেহারা। চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। বুদ্ধিদীপ্ত। সেটাই ছিল ‘জন অরণ্য’ ছবিতে প্রদীপের লুক। ছবিটি ‘কাল্ট’ হয়ে থেকে গিয়েছে দর্শকের নজরে।
‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিতে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, ‘সীমাবদ্ধ’-এ বরুণ চন্দর মতোই ‘জন অরণ্য’-এ সত্যজিতের আবিষ্কার ছিলেন প্রদীপ। এবং প্রথম ছবিতেই দর্শকমনে দাগ কেটেছিলেন অভিনেতা। তারপর বহু-বহু ছবিতে কাজ করেছিলেন প্রদীপ। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘দূরত্ব’, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উৎসব’ সেই তালিকায় উল্লেখযোগ্য। আজ সোমবার (২৯ অগস্ট, ২০২২) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে কলকাতায় প্রয়াণ ঘটেছে প্রদীপের। দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চলছিল তাঁর চিকিৎসাও। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল বছর ৭৬-এর বর্ষীয়ানকে। জীবনযুদ্ধে জয়ী অভিনেতাকে শেষমেশ মৃত্যুর কাছে হার স্বীকার করতে হয়।
বিগত কয়েক বছরে বেশকিছু বাংলা ছবিতে কাজ করছিলেন প্রদীপ। মনের জোর ছিল এতটাই যে, শরীর খারাপ থাকা সত্ত্বেও ‘দত্তা’ ছবির শুটিং করতে গিয়েছেন কিছুদিন আগে। ১১ অগস্ট ছিল তাঁর জন্মদিন। ‘দত্তা’র পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী সেদিন তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ফেসবুকে। প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদন জগতে। ‘জন অরণ্য’-এ তাঁর সহ-কর্মী লিলি চক্রবর্তী বিশ্বাসই করতে পারছেন না প্রিয় প্রদীপ পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
লিলি চক্রবর্তী প্রদীপ মুখোপাধ্যায়কে দেখেছিলেন এক্কেবারে নবাগত রূপে। TV9 বাংলাকে তিনি বলেছেন, “আমি যখন ‘জন অরণ্য’-এ কাজ করি, প্রদীপ এক্কেবারে নতুন। এক্কেবারে ফ্রেশ। শান্ত এবং ভদ্র। তা ছাড়া, মানিকদার সেটে শান্ত থাকাই ছবি দস্তুর। কেউই বেশি উচ্চবাচ্য করতেন না। শব্দ করতেন না। সে যাই হোক… কী করে যে কী হয়ে গেল, সেটা তো আমি বুঝতেই পারছি না। শুনে খুবই খারাপ লাগছে আমার।”
‘জন অরণ্য’র সেটে দেওর-বউদির ভালই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। লিলি সেখানে ছিলেন প্রদীপের দেওর। পর্দার বাইরেও তাঁকে বউদিদির মতোই সম্মান করতেন প্রদীপ। লিলি বলেছেন, “আমার সঙ্গেই বেশি পাঠ ছিল প্রদীপের। ‘জন অরণ্য’র ডাবিংয়ের সময় মুম্বইয়ে আমার বাড়িতেই ছিল। বলেছিল, ‘বউদি আমি কিন্তু আপনার বাড়িতেই থাকব’। আমার স্বামীও সঙ্গে-সঙ্গে বলে উঠলেন ও আমাদের বাড়িতেই থাকবে। জানেন তো, আমার জন্য একটি শাড়ি কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রদীপ। আমি বকেছিলাম। বলেছিলাম, ‘আমার বাড়িতে থাকবে বলে শাড়ি এনেছ?’ তারপর অন্যান্য অনেক শুটিংয়ে দেখা হয়েছিল আমাদের। কিন্তু ওই কালো ফ্রেমের মোটা চশমা আর রোগা ছেলেটাকে আমি ভুলব না কোনওদিন…”