জয়িতা চন্দ্র
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত—’হত্যাপুরী’র পর আবারও ফেলুদা তিনি। এবার ‘নয়ন রহস্য’। TV9 বাংলার সঙ্গে তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে ইন্দ্রনীল অকপটে বলেছেন, ‘এই সিস্টেমটাকে দায়িত্ব নিয়ে আমি বদলাতে পারব না। একা মানুষ বদলাতে পারে না, একজন-দু’জন বদলাতে পারে না। আমি যেটা করতে পারি, এই বিষয়টা থেকে দূরে থাকতে পারি, এটা এড়িয়ে যেতে পারি।’ আজ সেই সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব।
এই যে কোরাপশনের প্রসঙ্গে আপনি বললেন, আপনার কি কখনও মনে হয়, এর জন্য অনেক চরিত্রই হয়তো আপনার দরজায় পৌঁছতে পারেনি?
ঠিক আছে। এটা নিয়ে ভাবি না এতো। কেন জানেন, কোরাপশন কোথায় নেই বলুন তো? একটা ছবি বানাতে তো টাকাও লাগে। যাঁর কাছে টাকা আছে, ক্ষমতা আছে, তিনি বা তারা যদি সেটাকে অন্যভাবে কাজে লাগায়, তবে সেখানে আমার কী করার আছে। আর যে যেটায় বিশ্বাসী… সবার তো নিজস্ব একটা নীতি রয়েছে। কেউ চায় পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার সঙ্গে একটা আসন অর্জন করতে। কেউ-কেউ সুপারিশের জন্য, টাকার জন্য একটি আসন পেয়ে থাকেন। ডোনেশনের আসনও তো শিক্ষা ক্ষেত্রে থাকে। আমি তো পরীক্ষা দিয়ে চেষ্টা করার পক্ষে, তাই বলে কি আমি অভিযোগ করতে পারি, অমুকের জন্য আমার সিটটা পাওয়া হল না? আমি যেটা ভাবতে পারি, আমার আরও পরিশ্রম করা উচিত ছিল, আরও পড়া উচিৎ ছিল, পরের বার আরও খাটব নিজেকে প্রমাণ করতে। ব্যস, এতটাই সহজ। এবার অনেকে হয়তো আশা করেন, আরও ভাল ছবি পেতে পারতেন… হ্যাঁ, হয়তো পেতাম। কিন্তু বিশ্বাস করুন, নেই কোনও আক্ষেপ। যা পেয়েছি, তাতেই খুশি। দেখুন আমি অনেকদিন ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছি। আমার সময়কালে কতজন এলেন, চলেও গেলেন। আমি রয়ে গিয়েছি। এটাই তো বড় পাওয়া।
ছবির জগতে কোনওদিন কোনও কাছের মানুষ তৈরি হয়েছে?
স্নেহের ব্যক্তি, কাছের বন্ধু, সুখ-দুঃখে পাশে থাকা মানুষের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বলতে পারি, আমার কোনওদিন কোনও ‘গডফাদার’ ছিল না। কোনওদিন কোনও লবির অংশও আমি হইনি, বিশ্বাস করুন। আমি কোনও বন্ধুর সঙ্গে কাজ করিনি। কোনও পরিচালক আমার বিশেষ বন্ধু নন। কোনও জায়গায় আমি পিআর(Public Relation)-এর কাজ করেছি, এমনটাও নয়। যেটা পাইনি, সেটা হয়নি। যাঁদের ছবি, তাঁদের মনে হয়েছে আমি ছাড়া অন্য কাউকে নিলে হয়তো আরও ভাল হবে, তাই সেই ছবিগুলো আমার কাছে আসেনি। খুব সহজ হিসেব।
এবারের ফেলুদার চ্যালেঞ্জটা কী?
প্রথমবার ফেলুদা হয়ে ওঠাটা ছিল চ্যালেঞ্জ। এখন সেটা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এবার ভাল করে গল্পটায় কাজ করাটা চ্যালেঞ্জ। আরও ভাল করার চ্যালেঞ্জ। এই চেষ্টাটা তো ৩০তম ফেলুদার ক্ষেত্রেও থাকবে।
রাজনীতিতে কি ইন্দ্রনীল কোনওদিন আসবেন?
না, রাজনীতিটাই আমি পছন্দ করি না। সে পরিবারের রাজনীতি হোক কিংবা রাজ্যের রাজনীতি, শিক্ষা জগতের রাজনীতি হোক কিংবা চলচ্চিত্র জগতের রাজনীতি, যেখানেই রাজনীতির গন্ধ পাই, সেখান থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি।
অভিনয় ছাড়া অন্য কোনও পেশায় কি সাবলীল আপনি?
ব্যবসা আমার আসে না। প্রযোজক হওয়ারও ইচ্ছে নেই। তবে হ্যাঁ, আমি ছবিটা তুলতে পারি। তবে আমার মনে হয় এখন সেই সময়টা চলে গিয়েছে, একটা ক্যামেরার মাধ্যমে গল্প বলা, এটা খুব ধৈর্যের কাজ। এটা হয়তো আর আমি পেরে উঠব না। তবে ছবি দিয়ে আমি গল্প বলতে পারি। অনেকেই তাই পরিচালনার কথা বলেন। সেটা সম্ভব নয়। সিনেমার মাধ্যমে গল্প বলা, আমার মনে হয় না সেটা আমার মধ্যে এখন কাজ করবে।
এবার ‘নয়ন রহস্য’-এ এবার বিশেষ কী থাকছে?
‘হত্যাপুরী’র একটা ভাল বিষয় আমি আপনাকে বলতে পারি, সেটা ‘নয়ন রহস্য’র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সন্দীপ রায়ের ফেলুদা ভীষণ সহজ। নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছি, ভাববেন না দয়া করে। যেমন বইয়ে লেখা, তেমনই গল্প। সেখানে কোনও রঙ চড়িয়ে গল্প বলার চেষ্টা থাকে না। যা লেখা নেই, তা ছবিতেও নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রে এই সহজ বিষয়টা দেখা যায় না। কোনও বিতর্কে না গিয়েই বলতে পারি, যখন পরিচালক অভিনেতাকে কাস্ট করেন, তখন ছবি হয় পরিচালকের দর্শন অনুযায়ী। আর যখন অভিনেতা পরিচালক স্থির করেন, তখন ছবিটা হয়, অভিনেতার নজরে। দুইয়ের মধ্যে তো ফারাক থাকবেই।