AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

সত্যজিতের হাত ধরে কোন ভয়ের কথা বলেছিলেন উৎপল দত্ত?

মাথার উপর থাকা বড় ফ্য়ানটি তখন আওয়াজ করে ঘুরছে। অগোছালো ঘরে মাঝে চেয়ারে সত্যজিৎ বসে আর অপরদিকের সিঙ্গল সোফায় বসে রয়েছেন উৎপল দত্ত। সময়টা আটের দশক। সত্য়জিৎ তখন সবে শেষ করেছেন আগন্তুক ছবির চিত্রনাট্যের প্রথম খসড়া। আর তা শেষ হতেই উৎপল দত্তকে ডাক।

সত্যজিতের হাত ধরে কোন ভয়ের কথা বলেছিলেন উৎপল দত্ত?
Image Credit: Facebook
| Updated on: Sep 11, 2025 | 4:19 PM
Share

‘আমি যা যা বলতে চেয়েছিলাম, তা আমি তোমার মুখ দিয়ে বলাতে চাই’, হ্যাঁ, উৎপল দত্তকে ঠিক একথা বলেছিলেন সত্যজিৎ। ডান হাতে চিত্রনাট্যের খাতা আর সামনের সোফায় বসে ছিলেন উৎপল। সত্যজিতের রায়ের মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা স্তম্ভিত হয়েছিলেন তিনি। সত্যজিতের এমন কথার কী উত্তর দেওয়া যায়, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

মাথার উপর থাকা বড় ফ্য়ানটি তখন আওয়াজ করে ঘুরছে। অগোছালো ঘরে মাঝে চেয়ারে সত্যজিৎ বসে আর অপরদিকের সিঙ্গল সোফায় বসে রয়েছেন উৎপল দত্ত। সময়টা আটের দশক। সত্য়জিৎ তখন সবে শেষ করেছেন আগন্তুক ছবির চিত্রনাট্যের প্রথম খসড়া। আর তা শেষ হতেই উৎপল দত্তকে ডাক। উৎপল যখন সত্যজিতের ঘরে পা দিলেন, তখন চোখ বন্ধ করে চেয়ারে বসে গা হেলিয়ে ছিলেন সত্যজিৎ। উৎপল ঘরে ঢুকতেই তাঁকে ইশারায় সোফায় বসতে বলেন, তারপর সত্য়জিৎ বললেন, আগন্তুকই আমার শেষ ছবি হবে। কেননা, আমার এতদিন যা যা বলার ছিল এই ছবিতেই বলতে চাই। আর তোমার মুখ দিয়ে তা বলাবো। সত্যজিৎতে না বলার মতো সাহস বা ইচ্ছা কোনওটাই ছিল না উৎপলের। কেননা, আগুন্তুক ছবির চিত্রনাট্য পড়ে তিনি বুঝেছিলেন, এই ছবি শুধুই সিনেমা নয়, বরং এক দলিল। চার দেয়ালের মাঝেই তিনি শুনিয়েছেন সভ্যতা নামের ফাঁকা কলসির শব্দদূষণ। প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি চরিত্র, যেন ‘কূপমুন্ডক’ মানুষের প্রতিধ্বনিকেই বার বার পর্দায় নিয়ে এসেছেন। এই ছবি যে মোটেই সহজ ছিল না, তা বুঝতে পেরেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা উৎপল দত্ত। তাঁর ভয় ছিল তিনি যদি চরিত্রটিকে ঠিকঠাক ফুটিয়ে তুলতে না পারেন, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সত্যজিতের চিন্তা-ভাবনা। সেই দুশ্চিন্তা নিয়েই প্রথমে সত্যজিৎকে না বলেছিলেন উৎপল দত্ত। আর তার এই দুশ্চিন্তার নেপথ্যে ছিল তাঁর শারীরিক অসুস্থতা।

সেই সময় নানা কারণে উৎপল শারীরিকভাবে ছিলেন অসুস্থ। প্রায় দু-তিনমাস অন্তরই উৎপলকে ছুটতে হত হাসপাতালে। এই অসুস্থতা নিয়ে একটানা ছবির শুটিং প্রায় সম্ভবই ছিল না উৎপল দত্তর। এই অসুস্থতার কথাই সত্যজিৎকে জানিয়ে ছিলেন উৎপল। অন্যদিকে, ঘরে বাইরে ছবির সময় সত্যজিৎও হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তারপর থেকেই সত্যজিৎ যেন দ্রুত তাঁর জমানো কাজ শেষ করতে চাইতেন। এমনকী, আগন্তুক ছবির সময়ও বার বার বলতেন, এই ছবি আমাকে শেষ করে যেতেই হবে! উৎপলের অসুস্থতার কথা শুনে সত্যজিৎ তাঁকে একটা কথাই বলেছিলেন, তুমি পারবে। দেখো আমরা ঠিক এই ছবিটা বানাতে পারব।

সময়টা ১৯৯০ সালের শেষ । আগন্তুক-এর শেষ দৃশ্যের শুটিং চলছে। উৎপল দত্তকে নিয়ে শুট শেষ হওয়ার পর, সত্যজিতের কাছে দৌঁড়ে এলেন উৎপল। আচমকা হাত চেপে ধরলেন তাঁর প্রিয় মানিকদার। ছলছলে চোখে সত্যজিৎকে তিনি বললেন, ‘আমার খুব ভয় হচ্ছে। আমি কি পারলাম, তোমার ভাবনার মতো কাজ করতে!’ উৎপল দত্তর মতো কিংবদন্তি অভিনেতার মুখে এমন শিশুসুলভ কথা শুনে হেসেই ফেললেন সত্যজিৎ। তারপর উৎপলকে জড়িয়ে ধরে তিনি বললেন, ‘তুমি পেরেছো বলেই তো, ছবিটা শেষ হল উৎপল! আমার যা বলার তোমাকে দিয়েই বলিয়ে দিলাম!’