AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

সুচিত্রা সেনের মেয়ে মাধবী মুখোপাধ্যায়! সত্যজিতের কানে আসতেই অভিনেত্রীকে ডেকে পাঠালেন, তারপরের ঘটনা টলিউড কাঁপানো

তবে এহেন অভিনেত্রীকেও এক সময় বার বার বাতিল করেছেন বহু নামজাদা পরিচালক-প্রযোজক। একের পর এক অডিশন দিয়েও ছবি জুটত না তাঁর কপালে।

সুচিত্রা সেনের মেয়ে মাধবী মুখোপাধ্যায়! সত্যজিতের কানে আসতেই অভিনেত্রীকে ডেকে পাঠালেন, তারপরের ঘটনা টলিউড কাঁপানো
| Updated on: Jul 16, 2025 | 8:12 PM
Share

তিনি মাধবী মুখোপাধ্যায়। সত্যজিতের ‘চারুলতা’। ঋত্বিকের বাধ্য শিষ্যা। মৃণাল সেনের প্রিয় নায়িকা। উত্তম হোক বা সৌমিত্র, যাঁর সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন, পর্দায় চলেছে ম্য়াজিক। সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া চৌধুরী, অঞ্জনা ভৌমিক, এমনকী, বাংলা সিনেমায় বলিউডের মালা সিনহা এবং তনুজার দাপটের মাঝেও মাধবী তৈরি করেছিলেন নিজের জগৎ। তবে এহেন অভিনেত্রীকেও এক সময় বার বার বাতিল করেছেন বহু নামজাদা পরিচালক-প্রযোজক। একের পর এক অডিশন দিয়েও ছবি জুটত না তাঁর কপালে। কিন্তু ছয়ের দশকের একটা ঘটনাই তাঁর জীবনকে রাতারাতি বদলে দিয়েছিল। যে ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেনও। তারপরই আচমকা মাধবীর কাছে এল ফোন। ফোনের ওপারে সত্যজিৎ রায়!

কী ঘটেছিল জানার আগে, চলে যাওয়া যাক মাধবী মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবনের স্ট্রাগলের সময়। কারণ, এই ঘটনার সূত্রপাত, তাঁর ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার কয়েক বছর পরেই। অনেকেই মনে করেন মাধবী মুখোপাধ্যায় সত্যজিতের আবিষ্কার। তবে মাধবী তাঁর বায়োগ্রাফিতে ধূলিসাৎ করে দেন সেই ভাবনা। বরং তাঁকে অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম সুযোগ দিয়েছিলেন পরিচালক দীনেন্দ্রনাথ মিত্র। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৩। ছবির নাম ‘দুই বেয়াই’। এরপর তপন সিনহার ‘টনশিল’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন মাধবী। অভিনয় করেছিলেন ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণরেখা’তেও। এই তিন ছবিতেই মাধবীর অভিনয় প্রশংসিত হলেও, পরের ছবি পেতে গিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে জুতোর সুখতলা খুইয়ে ছিলেন অভিনেত্রী। সেই সময় সিনেমায় সুযোগ পাওয়ার তাগিদে কড়া নেড়েছিলেন নানা পরিচালক ও প্রযোজকের দরজায়। কিন্তু পরিচালক, প্রযোজকরা তাঁকে আশাহত করেছিলেন বার বার। ইন্ডাস্ট্রির একাংশ তাঁর গায়ে লাগিয়ে দিয়েছিল, আর্ট হাউজের অভিনেত্রী তকমাও।  তবে বাংলা সিনেমার দাপুটে এই অভিনেত্রী এত সহজে দমে যাননি। বরং জেদ বেড়েছিল একশো গুণ। নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদে, শুধু একটিবার ফের ক্যামেরার সামনে আসতে মরিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। এমনকী, সেই তাড়নায় এমন চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন মাধবী, যা কিনা তাঁর কেরিয়ারকে উন্নত করার বদলে শেষ করে দিতে পারত। শুভাকাঙ্খীরা অন্তত, তেমনই আশঙ্কার কথা জানিয়ে ছিলেন মাধবীকে। কিন্তু মাধবী শোনেননি। কেন মাত্র ১০ মিনিটের স্ক্রিন টাইমের চরিত্রে রাজি হয়েছিলেন ‘মরিয়া’ মাধবী! কীসের টানে? উত্তর, মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।

সুচিত্রা ততদিন টলিউডের ম্যাডাম সেন। তাঁর এক ইশারায় ইন্ডাস্ট্রির হাওয়া বদলায়। অন্যদিকে মাধবী একেবারেই নবাগতা, তাঁর ঝুলিতে রয়েছে আর্টহাউজ ছবি। সুপারহিট শব্দটা তখনও মাধবীর নামের পাশে আসেনি। ভাল একটা ব্রেক পাওয়ার জন্য স্ট্রাগল করছেন তিনি। তবে তাই বলে ১০ মিনিটের চরিত্র? তাও আবার সুচিত্রার মেয়ের রোলে! অফারটি পেয়ে মাধবী শুধু ভেবেছিলেন সুচিত্রার সঙ্গে একফ্রেমে দাঁড়ানোর কথা। ভেবেছিলেন সবার নজরে আসার এটাই সুযোগ । এমনকী, ছক কেটে ফেলেছিলেন ১০ মিনিটেই বাজিমাত করার। আপনজনেরা বার বার সতর্ক করে ছিলেন তাঁকে। স্পষ্টই জানিয়ে ছিল সুচিত্রার ছায়ায় তিনি কখনই বেড়ে উঠবেন না। কিন্তু মাধবীর পাখির চোখ তখন একটা সুযোগের দিকে! মাধবী অডিশন দিলেন, কিন্তু বিফল হলেন। আঘাত পেলেন। তবে ততদিনে নিয়তি তাঁর ললাটে লিখে ফেলেছে রূপকথার গল্প। যে গল্পের নায়ক সত্যজিৎ রায়। বলা ভাল মাধবীর ‘পরশ পাথর’।

সময়টা ছয়ের দশক। সত্য়জিতের হাতে ‘মহানগর’ ছবির চিত্রনাট্য। ছবির আরতি চরিত্রের জন্য নতুন মুখ খুঁজছেন সত্যজিৎ। ঠিক সেই সময় ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণরেখা দেখে মাধবীকে পছন্দ হয়ে গেল সত্যজিতের। ইন্ডাস্ট্রির নানা সূত্র থেকেও মাধবীর স্ট্রাগলের কথা তাঁর কানে এল। তারপরই সোজা ফোন অভিনেত্রীকে। ফোনের এপারে মাধবী, ওপারে সত্যজিৎ। ব্যারিটন স্বরে সত্যজিৎ বলে উঠলেন, ”তোমাকে আরতি হিসেবে চাই, কালকে আমার বাড়ি এসে চিত্রনাট্য পড়ে নিও!” সত্যজিতের কথা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি মাধবী। প্রথমে ভেবেছিলেন সত্যজিতের সঙ্গে দেখা করবেন না। তাঁর মনে হয়েছিল, এই সাক্ষাতের ফল, নিস্ফলা! এমনকী, সত্যজিৎকে অন্যের মারফত তা জানিয়েও ছিলেন মাধবী। কিন্তু সত্যজিৎ অনড়। এবার আর ফোন নয়, সত্যজিৎ লোক পাঠালেন মাধবীর বাড়িতে, রীতিমতো গাড়ি পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে আসলেন। সত্যজিতের এমন আচরণে অবাকই হয়েছিলেন মাধবী। তাই আর একটিবারও ভাবেননি, উঠে পড়েছিলেন সত্যজিতের গাড়িতে। জানলার কাচের বাইরে কলকাতা শহরকে দেখতে দেখতে মাধবী যেন বিভোর হয়ে গিয়ে ছিলেন সেদিন। আর সেই স্ট্রাগলে ক্লান্ত, শহর দেখা দুই চোখেই ‘মহানগর’ ছবির আরতিকে খুঁজে পেয়েছিলেন সত্যজিৎ। এর পরের ঘটনা ইতিহাস। সত্যজিৎ রায়ের শুধু নয়, মাধবীরও সিনে কেরিয়ারের অন্যতম মাইলফলক ‘মহানগর’ ও প্রতিবাদী ‘আরতি’!