ধূপ হাতে বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে রোজ সকালে কী বলতেন উত্তম কুমার? ভাইয়ের প্রশ্নে দেন উত্তর…
তরুণ কুমারের কলমেই একাধিকবার উঠে এসেছিল সেই অধরা মহানায়কের নানা কাহিনি। তিনি প্রতিদিন স্নান করে উঠে কী করতেন জানেন? আমার দাদা উত্তমকুমার-এ তরুণ কুমার লিখেছিলেন...

উত্তম কুমার, পর্দার সামনে যেখানে তিনি গ্ল্যামার, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, পর্দার পিছনে সেই মানুষটাই কতটা সাধারণ ছিলেন, তা প্রতিটা পদে লিখে গিয়েছেন অভিনেতার ভাই তরুণ কুমার। দাদাই তাঁর জীবনের সবটা জুড়ে ছিলেন। সকাল থেকে রাত, উত্তম কুমার যা-যা করতেন সবটাই তাঁর জানা। তাঁর মতো করে উত্তম কুমারকে কেউ জানতেন না।
আর সেই তরুণ কুমারের কলমেই একাধিকবার উঠে এসেছিল সেই অধরা মহানায়কের নানা কাহিনি। তিনি প্রতিদিন স্নান করে উঠে কী করতেন জানেন? আমার দাদা উত্তমকুমার-এ তরুণ কুমার লিখেছিলেন, “আসলে বাবার মৃত্যুর পর চোখে পড়েছিল, দাদার মধ্যে বাবার কিছু গুণ প্রবল পরিমাণে আছে। হয়তো বাবার উপস্থিতিতে তা চোখে পড়েনি। বাবা মারা যাবার পর চোখে পড়ল। বাবাকে কখনও স্নান করে উঠে ভক্তির ভড়ং দেখাতে দেখিনি। বাবার একটা চওড়া লাল পাড়ের ধুতি ছিল। স্নান করে উঠে বাবা সেই ধুতিটা পরে ঠাকুরের ছবির সামনে দাঁড়াতেন মিনিট দুয়েক। তারপর একটা প্রণাম ঠুকে নিজের দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। বাবা মারা যাওয়ার পর একদিন চোখে পড়ল দাদাও স্নান করে উঠে বাবার ছবির সামনে ধূপ হাতে মিনিট দুয়েক চুপচাপ দাঁড়িয়ে। চোখ দুটো বোজা। নীরব, নিস্পন্দ যেন।”
এই সময় মনে মনে কী বলতেন উত্তম কুমার? প্রশ্ন জেগেছিল তরুণ কুমারের মনে। তিনি প্রশ্নও করেছিলেন মহানায়ককে। উত্তরে কী জেনেছিলেন, লিখেছিলেন তাও। তরুণ কুমার লেখেন, “কৌতূহল চাপতে না পেরে দাদাকে জিজ্ঞেসা করেছিলাম-গায়ত্রী জপ করতেও তো মিনিট পনেরো সময় লাগে। তুমি এত অল্প সময়ে কী প্রার্থনা করো? দাদা হেসে উত্তর দিয়েছিল-বেশি সময় ধরে বেশি কথা বললেই কি বেশি ভক্তি দেখানো হয়। মনে নেই বাবা কী করতেন। বাবার মধ্যেও কোনও ভড়ং ছিল না। বাবা আমায় একদিন বলেছিলেন-ঠাকুরের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আমি শুধু বলি-আমাদের শান্তি দাও। বাবার সেই কথা আজও আমার কানে বাজে। তাই তো বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলি-আজ তুমি স্বর্গে আছো। ওখান থেকেই আমাদের আশীর্বাদ করো। শান্তি দাও।”
