স্নেহা সেনগুপ্ত
মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার (০৮.০৮.২০২৪) রাতের ঘটনা। রোগী দেখে সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান ‘তিলোত্তমা’ (নাম পরিবর্তিত)। বাড়িতে মায়ের সঙ্গে কথাও বলেন। তারপর সব শেষ। চেস্ট মেডিসিন বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়ার মৃতদেহ মেলে শুক্রবার, সেই সেমিনার হলের মেঝেতেই। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন, ধর্ষণ ও খুনেরও ইঙ্গিত মিলেছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। মৃতার পরিবার অভিযোগ জানিয়েছে, মেয়েকে ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছে। ঘটনার ভয়াবহতা নিয়ে টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালের কাছে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ও সিরিয়ালের লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
টিভি নাইন বাংলা ডিজিটাল: ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন?
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়: গতকালই গিয়েছিলাম। দেখলাম তদন্ত চলছে। আমাদের দেখে মনে হয়নি তদন্তে ত্রুটি আছে। ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে-সঙ্গেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। একটাই কথা বলব, মৃতার পরিবারের পাশে রয়েছে রাজ্যের মহিলা কমিশন।
টিভি নাইন বাংলা ডিজিটাল: মহিলা কমিশন আলাদা করে কী পদক্ষেপ করছে?
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়: আমাদের কাজ তদন্ত ঠিক মতো এগোচ্ছে কি না, সেটা দেখা। সেটা হচ্ছে। আমরা পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। এই ঘটনার অস্বাভাবিকতা আছেই। তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
টিভি নাইন বাংলা ডিজিটাল: মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন?
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়: গতকাল (শুত্রবার–০৯.০৮.২০২৪) কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাঁরা কেউই কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। তবে আমরা বলেছি এর মধ্যে কথা বলব। ওঁদের বাড়ি যাব।
টিভি নাইন বাংলা ডিজিটাল: হাসপাতাল চত্বরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে…
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়: যদি সত্যিই প্রমাণিত হয়, মেয়েটির ‘হত্যা’ হাসপাতাল চত্বরেই হয়েছে, তা হলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। তা হলে আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। আমাদের যেটা প্রথম থেকেই মনে হয়েছে, মানুষ এখন অনেক অস্থির। ফলে নৃশংসতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যে যাই পড়তে আসুক, যে যেভাবেই থাকুক না কেন, প্রত্যেকেরই মেন্টাল হেল্থের কাউন্সিলিং প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বিষয়গুলো।
টিভি নাইন বাংলা ডিজিটাল: এই রাজ্যটা কি আদতেও নিরাপদ আছে আর?
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়: এই রাজ্যের মহিলারা নিরাপদেই ছিলেন। আমি একজন মহিলা। আমি নিজেও দীর্ঘকাল এই রাজ্যে কাজকর্ম করি। অনেক মহিলাকেই চিনি যাঁরা ১০টা, ৫টার চাকরি ছাড়াও এমন চাকরি করেন, যেখানে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে না। এখন দেখছি, কোথাও-কোথাও নিরাপত্তার অভাব ঘটছে। সেটা যখন হচ্ছে, আমার মনে হয় অনেক বেশি অ্যালার্ট হওয়া দরকার। তার মানে এটাও নয়, আজ থেকে রাজ্যের সব মেয়ে বিপদের মুখে পড়ে গেলেন। তবুও এই ধরনের ঘটনা ঘটলে শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে। মহিলাদেরও অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে। পরিবেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। মহিলারা কোন পরিবেশে থাকবেন, সেটা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। এমন চিন্তা আসার কথা নয়। নিজস্ব কর্মক্ষেত্রের পরিধিতে থেকেও যদি এটা ঘটে, তা হলে প্রশ্ন তৈরি হবেই। প্রশাসনকে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। অনেক সতর্ক হতে হবে।
টিভি নাইন বাংলা ডিজিটাল: অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার প্রাক মুহূর্তে কী করবেন মহিলারা?
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়: বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের ছোট থেকেই সুকুমার কলার শিক্ষা দেন। নাচ-গান-আঁকার প্রশিক্ষণ দেন। আমার মনে হয় শরীর শিক্ষাও দেওয়া প্রয়োজন। ক্যারাটের মতো শরীর শিক্ষা থাকা অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়। ছুরি, লঙ্কার গুঁড়ো, পেপার স্প্রে নিয়ে ঘোরা–এটা দরকারি হলেও কাঙ্খিত নয়। কেনই বা এত ভয় পাবেন মেয়েরা। কিন্তু ক্যারাটের মতো শরীর শিক্ষার বেসিকটা জানলেও নিজেদের নিরাপত্তার হাতিয়ার নিজেরাই হতে পারবেন তাঁরা। তবুও বলব, প্রশাসনকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে।