মাত্র ২ মাসের মধ্যেই ৪২টি দেশে হানা দিয়েছে বিরল ও অজানা ভাইরাস মাঙ্কিপক্স ( Monkeypox Virus)। সারা বিশ্বজুড়ে যে হারে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে বেশ উদ্বিগ্ন চিকিত্সামহল। মাঙ্কিপক্স নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে চলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এই ভাইরাস কীভাবে দ্রুত সনাক্ত করা যায়, তার উপর বিশেষ জোড় দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি সদ্যোজাত শিশু (Children) থেকে গর্ভবতী মহিলাদেরও (Pregnant Women) ঝুঁকি বাড়ছে। এই কারণে আগামী ২৩ জুন এক জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কোভিডের পর মাঙ্কিপক্স বিশ্বের সামনে নতুন বিপদ ডেকে আনছে কি না, তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে ওই বৈঠকে। তৈরি হবে নয়া নির্দেশিকাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডক্টর টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, “মঙ্কিপক্সের বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব স্পষ্টতই অস্বাভাবিক এবং উদ্বেগজনক।”
গর্ভবতী মহিলাদের উপর মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে বোঝা না গেলেও, ডব্লিউএইচও একটি বিবৃতি জারি করেছে যা বলে, “সীমিত তথ্য থেকে বোঝা যায় যে সংক্রমণ ভ্রূণ বা নবজাতক শিশু এবং মায়ের জন্য প্রতিকূল ফলাফল হতে পারে।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণ মানুষের জন্য বর্তমানে ঝুঁকি কম। সংক্রমণ রোধ করার জন্য পিপিই কিট না পরে স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি কোনও রোগীর সংস্পর্শে আসেন তবে তাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। আরও বলা হয়েছে, যে যদি মাঙ্কিপক্স আরও বেশি দুর্বল গোষ্ঠীতে এবং তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটির স্বাস্থ্যের উপর বৃহত্তর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গুরুতর রোগ এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সময়মত চিকিত্সা না করানোর ফলে ব্যক্তিদের মধ্যে দ্রুতহারে এইচআইভি সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, এখনও পর্যন্ত ৪২টি দেশে ২,১০৩টি সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত তথ্য অনুসারে, মাঙ্কিপক্সের কারণে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দেখামাত্রই সাবধানতা ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে হু। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলন এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স একটি বিরল রোগ। সাধারণত হালকা সংক্রমণথেকে এর তীব্রতা শুরু হয়। আফ্রিকার কিছু অংশে সংক্রমিত বন্য প্রাণী থেকে ধরা পড়ে। এটি প্রথম গবেষণার জন্য রাখা বানরের মধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের NHS ওয়েবসাইট অনুসারে এই রোগটি গুটিবসন্তের একটি আপেক্ষিক সংক্রমণ। যার ফলে প্রায়শই মুখে ফুসকুড়ি শুরু হয়।
লক্ষণ
মানুষের মধ্যে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস একটি সিস্টেমিক অসুস্থতা এবং ভ্যারিওলার মত ভেসিকুলার ফুসকুড়ি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। জ্বর, ঠাণ্ডা, পেশী ব্যথা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ফুসকুড়ি এবং লিম্ফডেনোপ্যাথি (ফোলা লিম্ফ নোড) ইত্যাদি দেখা যায়। ফুসকুড়ি সাধারণত প্রকাশের এক থেকে তিন দিন পরে উপস্থিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগটি গুরুতর নয় এবং লক্ষণগুলি সাধারণত ১৪-২১ দিন স্থায়ী হয়।
হু-এর মতে, কিছু ক্ষেত্রে রোগ হওয়ার ২১ দিন পরেও লক্ষণগুলি প্রতিফলিত হতে পারে। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির মতে, মাঙ্কিপক্স একটি বিরল সংক্রমণ। তবে এটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে না। সংক্রামিত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষত এবং তাদের দ্বারা ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে, গামছা, জিনিসপত্র এবং বিছানার সংস্পর্শে আসা এড়ানো উচিত।
কোথা থেকে, কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?
মানুষের কাছ থেকে মাঙ্কিপক্স ধরা খুবই অস্বাভাবিক, কারণ এটি মানুষের মধ্যে সহজে ছড়ায় না। কম রান্না করা মাংস বা সংক্রমিত পশুর পশুজাত দ্রব্য খাওয়া থেকেও একজন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ভাইরাসটি সাধারণত অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে ইঁদুর,কাঠবিড়ালি, গাছ কাঠবিড়ালি থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। মাঙ্কিপক্সের কারণে ত্বকের উপর ফোস্কা বা স্ক্যাব স্পর্শ করার মাধ্যমে বা সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি এবং হাঁচির খুব কাছাকাছি যাওয়ার মাধ্যমেও এই রোগটি ছড়াতে পারে বলে জানা গিয়েছে।