আমাদের মধ্যে নেকেই আছেন যাঁরা সারা রাত বিছানায় ওপাশ-ওপাশ করেন। ঘুমোতে পারেন না। ঘুম না আসার রোগকে বলে অনিদ্রা। ভয়ঙ্কর অসুখ অনিদ্রা (Insomnia)। শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে অনিদ্রা রোগ। মডার্ন মেডিসিনে (Modern Medicine) অনিদ্রার ওষুধগুলি রোগীকে আসক্ত করে তুলতে পারে। তবে আয়ুর্বেদে (Ayurveda)এমন কিছু ভেষজ আছে যা খেলেই প্রাকৃতিকভাবেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন রোগী। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই!
অনিদ্রা এখন প্রতিটি ঘরের অসুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক উদ্বেগপূর্ণ জীবনযাত্রা, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, ধূমপান, কফিপানে আসক্তি, এক্সারসাইজের অভ্যেস না থাকা ডেকে আনে অনিদ্রা। প্রতিদিন সঠিকভাবে ঘুম না আসলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ(হার্ট অ্যাটাক, হার্টফেল)। এমনকী হতে পারে স্ট্রোকের মতো সমস্যাও। এছাড়াও স্থূলত্বও দেখা দেয় কিছু ব্যক্তির মধ্যে। গ্রাস করতে পারে অবসাদ, স্মৃতিভ্রংশের মতো অসুখও। এমনকী ছোটখাট ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যা দেখা যায়। কমে যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
সাধারণত কোনও ব্যক্তি অনিদ্রার মতো সমস্যা নিয়ে গেলে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে যে ঘুমের ওষুধ লিখে দেন। দেখা গিয়েছে, ঘুমের ওষুধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। বিশেষত ঘুমের ওষুধে একধরনের আসক্তি তৈরি হয় বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেন। এছাড়া একই ডোজের ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খেলে তা কম কাজ করে বলেও কেউ কেউ জানান। জানলে অবাক হবেন, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এমন কিছু ভেষজের সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে ভেষজগুলি সেবন করলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ঘুম আসবে। প্রশ্ন হল সারাদিনে আমাদের কতক্ষণ ঘুম দরকার?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কার কতটা ঘুমের দরকার তা নির্ভর করে বয়সের উপরে। জন্মের পর ১ বছর পর্যন্ত একটি শিশুর ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমের দরকার। ১ থেকে ২ বছরের বাচ্চার দরকার ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুম। ৩ থেকে ৫ বছরের বাচ্চার ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ৬ থেকে ১২ বছরের বাচ্চার দরকার ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুম। ১৩ থেকে ১৮ বছরের বাচ্চার প্রয়োজন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম। ১৮ বছরের বেশি বয়সে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের দরকার। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের অনেকেই তাঁদের জীবনযাত্রার কারণে ও উৎকণ্ঠায় ভোগার কারণে রাতে বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারেন না। তারা ভোগেন অনিদ্রায়। মনে রাখবেন, অনিদ্রার সমস্যায় ভুগলে তা রোজকার জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দৈনন্দিন জীবন বিষবৎ ঠেকে। একজন ব্যক্তির উৎপাদনশীলতায় প্রভাব ফেলে। তাই অনিদ্রা দূর করার উপায় পেলে অবশ্যই তা প্রয়োগ করা দরকার।
অনিদ্রায় ভেষজ—
অপরাজিতা: অপরাজিতা উদ্ভিদ এবং ফুল একাধিক নামে পরিচিত— শঙ্খপুষ্পী, কাম্বুমালিনী, শঙ্খিনী ইত্যাদি। আয়ুর্বেদে শঙ্খপুষ্পীর গুণ বর্ণিত আছে। সঠিক উপায়ে এই উদ্ভিদ ও ফুল সেবন করলে স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ে। বৃদ্ধি পায় ব্রেনের কার্যকারিতাও। মনোযোগ, শেখার ক্ষমতাও বাড়ে। এছাড়া শঙ্খপুষ্পীতে থাকা বিভিন্ন উপকারী যৌগ দূর করে মানসিক ক্লান্তি, উদ্বেগ, ডিপ্রেসনের সমস্যা। ফলে দনিয়মিত অপরাজিতা ফুল ও উদ্ভিদের সেবনে দূর হয় অনিদ্রার মতো সমস্যা।
জটামাংসী: একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অনিদ্রার অব্যর্থ সমাধান হল জাটমাংসী। জাটমাংসীর মন শান্ত করার ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিদ্রার পিছনে মূল কারণ হল মানসিক উদ্বেগ ও অবসাদ। জটামাংসীতে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যা অবসাদ দূর করে, মন শান্ত করে। ফলে দ্রুত ঘুম আসে।
ব্রাহ্মী: এই মারাত্মক উপকারী শাকের নাম অনেকেই শুনেছেন। নিয়মিত ঘি দিয়ে ভেজে ব্রাহ্মী শাক খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। অবসাদ দূর হয়। মনোযোগ ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া মাথা ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে।
তাহলে আর দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ও অনিদ্রা দূর করুন।