না, সরাসরি শক্ত বাঁশ (Bamboo) খাওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। এমনকী রূপক অর্থেও বাঁশ খাওয়ার কথা হচ্ছে না। তবে কচি বাঁশ বা বাঁশের অঙ্কুরের (Bamboo Shoots) সত্যিই বহু উপকার। ভিন্ন স্বাদের জন্য জাপান, চিন ও তাইওয়ানে বাঁশের অঙ্কুরের বিভিন্ন ধরনের পদ তৈরির প্রচলন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাঁশের অঙ্কুরের সেবন ডায়াবেটিস রোগীর (Diabetes Patients) সুগার নিয়ন্ত্রণে দারুণ কার্যকরী প্রমাণিত হতে পারে। ১৮ সেপ্টেম্বর হল বিশ্ব বাঁশ দিবস (World Bamoo Day)। বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে সবুজায়নের প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই এই দিনটি পালন করা হচ্ছে। ঘাস পরিবারের অংশ বাঁশ। ঘাসের মতোই বাঁশও দ্রুত বেড়ে ওঠে ও বংশবৃদ্ধি করে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল পরিবেশেও বাঁশ বেড়ে উঠতে পারে। মানবকল্যাণে নানাভাবে বাঁশ ব্যবহার করা যায়।
বিশ্ব বাঁশ দিবসে উদ্ভিদটি নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতাবৃদ্ধিমূলক কর্মশালার আয়োজন করা হয় নানা সংস্থার পক্ষ থেকে। বাঁশের চাষ এবং বাঁশ সংগ্রহ নিয়ে এই ধরনের সংস্থাগুলি লাগাতার প্রচার চালিয়ে আসছে। সাধারণভাবে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার হয় বলেই আমরা জানি। বিশেষ করে ঘরের মেঝে ও ছাদ তৈরিতে বাঁশ ব্যবহার হয়। তবে জানলে অবাক হবেন বাঁশ অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি উদ্ভিদ। বেশ কিছু দেশে খাদ্য হিসেবেও বাঁশ ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর সুগার কন্ট্রোলে বাঁশ বিশেষ উপযোগী বলেই জানা যাচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা থেকে।
ব্যাম্বু শুট কী?
বাঁশের অঙ্কুরকে বলা হয় ব্যাম্বু শুট। মাটি থেকে সোজাসুজি শঙ্কু আকৃতির যে বাঁশের অঙ্কুর বেরয় তাই হল ব্যাম্বু শুট। মূল কাণ্ডের চারপাশে পাতার স্তর পরপর জড়িয়ে থাকার কারণে অঙ্কুরকে দেখতে অনেকটা শঙ্কুর মতো লাগে। কুড়মুড়ে গঠন আর ভিন্ন স্বাদের জন্য বাঁশের অঙ্কুর নানা দেশে অন্যতম জনপ্রিয় পদ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশ যেমন জাপান, চীন ও তাইওয়ানে বাঁশের অঙ্কুর খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
বাঁশের অঙ্কুরের পুষ্টিগুণ
অর্ধেক কাপ পরিমাণে বাঁশের অঙ্কুরে থাকে—
– ২০ ক্যালোরি এনার্জি,
– ০ গ্রাম ফ্যাট ,
– ২ গ্রাম সুগার ,
– ২ গ্রাম প্রোটিন ,
– ৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম,
– ২ গ্রাম ফাইবার ,
– ৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
এছাড়া থাকে পটাশিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ এবং ভিটামিন এ, বি৬, ই, ক্রোমিয়াম, নিয়াসিন, থায়ামিনের মতো ভিটামিন।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কীভাবে কার্যকরী?
কোনও ব্যক্তির দেহে ইনসুলিন রেজিজস্টেন্স থাকলে ইনসুলিন হর্মোন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ইনসুলিন হর্মোন রক্তের সুগারকে কোষে কোষে পৌঁছতে সাহায্য করে। ইনসুলিন সঠিকভাবে কার্যকরী না হলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়েই থাকে। এভাবে দেখা দেয় টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
রক্তে সুগারে মাত্রা একটানা বেড়ে থাকলে তা দেহের নানা অঙ্গে জমা হতে থাকে। ফলে অঙ্গগুলির ধীরে ধীরে বিকল হতে থাকে। এর ফলে হতে পারে কিডনি ফেলিওর, ডায়বেটিক রেটিনোপ্যাথি, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো সমস্যা। এছাড়া সংক্রমণ হলে সহজে ছাড়তে চায় না। এমনকী ক্ষত তৈরি হলেও সহজে শুকোতে চায় না ও সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে পচনও ধরতে পারে। বাদ দিতে হতে পারে ওই অঙ্গটিকেও।
বাঁশের অঙ্কুর তাই ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বরদান স্বরূপ। কারণ নিয়মিত বাঁশের অঙ্কুর খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হয়। কারণ—
কিছু খাদ্য থাকে যেগুলি খাওয়া মাত্রই রক্তে সুগারের মাত্রা হু হু করে বাড়তে থাকে। এদের বলে হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফুড। উদাহরণ হিসেবে চিনি, মিষ্টির কথা বলা যায়। তবে ব্যাম্বু শুট-এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অত্যন্ত কম। ফলে বাঁশের অঙ্কুর খেলেও অত্যন্ত ধীরে ধীরে খাদ্যটি থেকে গ্লুকোজ মেশে রক্তে। ফলে চটজলদি রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ে না। দ্বিতীয়ত ক্যালোরিও অত্যন্ত কম। ফলে অনেকটা মাত্রায় খেলেও শরীরে ক্যালোরি ঢোকে নগণ্য। এছাড়া প্রচুর ফাইবার থাকায় একবার খেলে পেটও দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে। তাই দ্রুত অন্য খাদ্যও খেতে হয় না। ইনসুলিনের পক্ষেও রক্তের স্বল্প মাত্রার সুগার নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়। তাই নিয়মিত পাতে রাখুন বাঁশের অঙ্কুর। সুস্থ থাকুন। সচেতন হন।