অবশেষে ডিসেম্বরের মাঝে শীতের আমেজ ঠিকভাবে অনুভব করতে পারছে শহরবাসী। সোয়েট শার্টের পর পুলওভার, কম্বল নেমেছে আলমারি থেকে। বাজার থেকে রোজ বাড়িতে আসছে কমলালেবু, পালং শাক, মূলো, বেগুন, মেথি শাক, গাজর, বিট আরও কতকিছু। শীতের দিনে যেমন জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা যায় তেমনই শীতের দিনে বিভিন্ন রোগ-জ্বালাও জাঁকিয়ে বসে। তার মধ্যে অন্যতম হল সর্দি-কাশির সমস্যা। শীতকালে ঠাণ্ডা লাগে বুকে কফ, সর্দি বেশি বসে। এছাড়াও অনেকের অ্যাজমার সমস্যা থাকে। তাদের এই শীতে বেশি সাবধানে থাকতে হবে। বুকে কফ জমলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। বুকে ব্যথা হয়। কাশি লেগেই থাকে। সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, খাবারে অরুচি এসব লেগেই থাকে।
কেন শীতে বেশি সর্দি জমে বুকে?
শীতে বুকে সর্দি জমার অন্যতম কারণ হল উত্তুরে বাতাস। সেই সঙ্গে শীতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ায় প্রকোপ বাড়ে। এছাড়াও এই সময় শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকে। ঠাণ্ডায় সংক্রমণ বেশি বাড়ে বলেই সর্দি, কাশি বেশি হয়। সেই সঙ্গে ফুলফুসে জ্বালা, ব্যথা, অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লেক্স সমস্যা, নিউমোনিয়া, সিওপিডি এসব বাড়ে শীতেই। ফাইব্রোসিসের কারণেও বুকে কফ বসতে পারে।
যাদের ঠাণ্ডা লাগার ধাত রয়েছে তাদের শীতে তাই একটু সাবধানেই থাকতে বলা হয়। সেই সঙ্গে গরম জলে স্নান করা, পর্যাপ্ত শীত পোশাক পরা, প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়া ( গরম দুধ, জল, কাড়া, মধু) এসব মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে নুন জলে গার্গল করা, ওষুধ খাওয়া, বারবার আদা দিয়ে চা খাওয়া এসব মেনে চলুন।
পাশাপাশি আশপাশে থাকা এই সব সবজিও কাজে লাগান রোজ-
আদাকে প্রাকৃতিক ভাবে ডিকনজেস্ট্যান্ট এবং অ্যান্টিহিস্টামিন হিসেবে কাজ করে। সেই সঙ্গে আদার অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বুকে জমে থাকা অতিরিক্ত কফ, সর্দি দূর করতেও সাহায্য করে। আর তাই কফ বসলে দিনের মধ্যে অন্তত ২ বার আদা চা খান। এছাড়াও সামান্য নুন দিয়ে আদা খেতে পারেন। এতেও কফ গলবে।
রেড বেলপেপার বা লাল রঙের ক্যাপসিকামও সর্দি, কাশির দারুণ উপশম করে। এছাড়াও লাল রঙের বড় যে বোম্বাই লঙ্কা পাওয়া যায় তাও ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে থাকে ক্যাপসাইসিন নামের একটি উপাদান। যা জমে থাকা কফ পাতলা করতে সাহায্য করে।
কফের খুব ভাল ওষুধ হল রসুন। রসুনের মধ্যেকার অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে কফ তৈরিতে বাধা দেয়। শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে ও মুখের রুচি ফেরাতে সাহায্য করে। গরম ভাতে রসুন আর শুকনো লঙ্কা একসঙ্গে ভেজে খেতে পারলেও উপকার পাবেন।
পার্সলে পাতাও খুব ভাল কাজ করে সর্দি, কাশির নিরাময়ে। পার্সলে পাতার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য। যা হজমে সাহায্য করে। তাই সবজি, স্যালাড বা স্যুপে পার্সলে পাতা দিয়ে খান।
পেঁয়াজ সর্দি, কাশি, গলাব্যথাতে দারুণ ভাল কাজ করে। এছাড়াও শীতে যে মুড়ি পেঁয়াজ পাওয়া যায় তাও দারুণ ভাল কাজ করে। ভাত বা মুড়ির সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ খান। এছাড়াও ভিনিগারে পেঁয়াজ ভিজিয়ে রেখে তা খেতে পারেন। এছাড়াও পেঁয়াজ ৬-৮ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। এবার তা গ্রেট করে নিয়ে রস বের করে নিয়ে জলের সঙ্গে মিশিয়ে রাখুন। রোজ তিন থেকে চার চামচ এই জল খেলে কফ দূর হবেই।