পিরিয়ড বা মাসিক খুবই সাধারণ একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। সব মেয়েদের জীবনেই এই দিনটি আসে, যে দিন তাদের প্রথম পিরিয়ড বা মেন্সট্রুয়েশন সাইকেল শুরু হয়। নিজের শরীরের আচমকা এই পরিবর্তনের কথা সব মেয়েই প্রথম তার মাকে এসে বলে। তবে অনেকেই আগে থেকেও বিষয়টি জেনে থাকে স্কুলে বন্ধুদের কাছ থেকে। বিষয়টি জানার পর থেকে পিরিয়ড সংক্রান্ত বিভিন্ন মিথ নিয়ে ছোট মেয়েদের মধ্যে কৌতূহল থাকে। তাই সেই সব ভয়-ভীতি ভাঙিয়ে দেওয়ার কর্তব্য বাড়ির অভিভাবকদের। কেন প্রতি মাসে পিরিয়ড হয় সেই ধারণা যেমন স্পষ্ট থাকা দরকার তেমনই ছোট থেকেই মেন্সট্রুয়াল হাইজিন বিষয়েও সুঅভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। আগে মেয়েদের পিরিয়ড শুরুর গড় বয়স ছিল ১৪-১৬। কিন্তু ইদানিং কালে তা এগিয়ে এসেছে। এখন ১২-১৩ বছর বয়সের মধ্যেই পিরিয়ড শুরু হয়ে যায়। কিছুক্ষেত্রে তারও আগে শুরু হয়ে যায়। আর তাই পিরিয়ডকালীন এই কয়েকটি হাইজিন মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞরা।
পিরিয়ড ট্র্যাক রাখা- কতদিন গ্যাপে পিরিয়ড হচ্ছে, অনিয়মিত পিরিয়ড হচ্ছে কিনা, রক্তপাতের পরিমাণ এসব কিন্তু ট্র্যাক রাখা জরুরি। আজকাল অধিকাংশ মেয়েই ভুগছেন পিরিয়ডের সমস্যায়। ওভারিতে সিস্ট, পিসিওএস-এর মত সমস্যা প্রায় ৮০ শতাংশেরই। আর তাই মেন্সট্রুয়াল ক্র্যাম্প, কতদিন পর পিরিয়ডস হচ্ছে, ঠিক দিনে হচ্ছে কিনা তা নোট করে রাখা জরুরি।
প্রতি ৪ ঘন্টা অন্তর প্যাড বদলানো- স্যানিটারি ন্যাপকিন খরচ সাপেক্ষ নিঃসন্দেহে। তবুও নিজের শরীর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই তার সঠিক ব্যবহার জরুরি। ৪ ঘন্টা অন্তর প্যাড বদলানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সব সময় তা সম্ভব না হলে ৬ ঘন্টা অন্তর করুন। নইলে অ্যালার্জির সম্ভাবনা থেকে যায়।
পিরিয়ড চলাকালীন ওয়াক্সিং নয়- পিরিয়ড চলাকালীন শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়। শরীর অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। আর তাই এই সময়ে ওয়াক্সিং না করাই শ্রেয়। এতে শরীরের নরম কোষের ক্ষতি হয়। থেকে যায় রক্তপাতের আশঙ্কাও।
সুগন্ধযুক্ত ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহার করবেন না- সুগন্ধ দেওয়া ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহার করবেন না। এছাড়াও স্যানিটারি ন্যাপকিনে যাতে অতিরিক্ত কোনও সুগন্ধ না দেওয়া থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখুন। যোনি বার বার পরিষ্কার জল দিয়ে ধোবেন। প্রয়োজনে কোনও জীবাণুনাশক জলে মিশিয়ে নিতে পারেন।
রাতে ভাল ঘুম জরুরি- পিরিয়ডের দিনগুলোতে শরীর একটু বেশিই ক্লান্ত থাকে। আর তাই রাতে ভাল ঘুম হওয়া জরুরি। যতই কাজের ব্যস্ততা থাকুক না কেন ৫-৭ ঘন্টা ঘুম যেন হয় সেদিকে অবশ্যি খেয়াল রাখবেন। এতে ক্র্যাম্পের সমস্যা কম হয়। সঙ্গে বিরক্তি, রাগ, ডিপ্রেশনও কমে।
অতিরিক্ত কফি খাবেন না- পিরিয়ডের সময় শরীরে ফ্লুইড বেড়ে যায়। আর তাই শরীর ফুলে যায়। শরীর জুড়ে থাকে ফোলা ভাব। এই ফোলা ভাব এড়াতে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। তাতে ইউরিন পরিষ্কার হবে। খানিকটা হলেও সমস্যা কমবে। চেষ্টা করবেন এই দিনগুলোতে কফি এড়িয়ে যেতে। কফি খেলে সমস্যা বাড়ে, ঘুম আসে না সঙ্গে ক্র্যাম্পও বাড়তে পারে। পিরিয়ডের সময়ে অনেকেরই ভাজাভুজি, ফাস্টফুড, তেলেভাজা খাওয়ার প্রবল ইচ্ছে জাগে। এই লোভ কিন্তু নিজেকেই সংবরণ করতে হবে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।