হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) ঘটনা এখন আকছার ঘটে চলেছে। যে কোনও সময় যে কারোর সঙ্গে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তা সে সেলেব্রিটি হোক বা সাধারণ মানুষ। জিম করার সময় কিংবা বাজার করা সময় অথবা ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে । প্রায়শই খবরের কাগজের পাতায় সেলেব্রিটিদের মৃত্যুর ঘটনা আরও উদ্বেগের হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে স্কুলে ক্লাস চলাকালীন হৃদরোগে স্কুল পড়ুয়ার (School Student) মৃত্যুর ঘটনা বেশ চিন্তার বিষয়। সম্প্রতি লখনউয়ের এক বেসরকারি স্কুলের ক্লাস টুয়েলেভের এক ছাত্র হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে স্কুল প্রশাসন ও অভিভাবকদের মধ্যে। ঘটনার পর পরই স্কুল ছুটির ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। অসুস্থ ছাত্রকে স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন ডাক্তাররা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি বলে জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, গৌতমপল্লী থানার অন্তর্গত ল্যামার্টিনিয়ার স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্র ক্লাস চলাকালীন হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই ছাত্রের নাম যশ সাক্সেনা। স্কুল প্রশাসনের দাবি, বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই ছাত্রের মন-মেজাজ ভাল ছিল না। স্কুলেও আসেনি। সকালে স্কুলে এলে ক্লাস চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে পড়ুয়ার জীবন বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হলেও ওই পড়ুয়াকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে এই স্কুলে এটিই প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও স্কুলের এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অষ্টম শ্রেনীর এক ছাত্র, রাহুল শ্রীধর সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে মারা গিয়েছিল। তবে এই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা সকলের সামনে প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক চাপ বর্তমানে শুধু চাকুরিজীবীদেরই নয়, পড়ুয়াদের মস্তিষ্ক ও স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব তৈরি করছে। পড়ুয়াদের সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মানসিক চাপ। একজন ব্যক্তির মানসিক প্রভাব মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক সুস্থতাকে প্রভাব ফেলে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত অনেক কিছু জড়িয়ে রয়েছে। আমরা কীভাবে চিন্তা করি, কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করছি, অনুভব করি, কাজ করা , পছন্দের জিনিস নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি, এইগুলি সবসময় মাথার মধ্যে অনবরত কাজ করে যাচ্ছে।
বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য – সমস্যা স্বল্প মেয়াদী হয়, আবার কখনও দীর্ঘ-মেয়াদীও হতে পারে। একজন ব্যক্তির মেজাজ, আচরণ, চিন্তাভাবনা ও সম্পর্ক করার ক্ষমতাতে এই স্বাস্থ্যসমস্যাগুলি প্রভাব তৈরি করতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক প্রভাব বাড়িয়ে দেয় হার্টের সমস্যাকেও। সরাসরি প্রভাবের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেও হার্টের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব তৈরি করে। দীর্ঘদিন ধরে অবসাদ বা হতাশায় ভুগতে থাকলে, উদ্বেগ ও মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে, এমনকি দীর্ঘদিন ধরে কোনও সমস্যায় ভুগতে থাকলে শরীরের উপপ কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রভাব অনুভূত হয়। যেমন হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন হাঁফ ছাড়ায়, দীর্ঘশ্বাস পড়া, হজমে গণ্ডগোল, হৃত্পিণ্ডে রক্ত প্রবাহ কম হয়ে যাওয়া, কার্ডিয়াক রিঅ্যাক্টিভিটি, কর্টিসলের উচ্চমাত্রার মত উপসর্গ দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যাগুলি ধীরে ধীরে অজান্তেই বাড়তে থাকে। তাতে ধমনীতে ক্যালসিয়াম তৈরি হয়ে হজমের কোনও কঠিন রোগ ও হৃদরোগের কারণ তৈরি করে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, হতাশা, উদ্বেগ, বিষন্নতা এই সব মানসিক ব্যাধিতে হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-সহ হার্টের নানা রোগের বিকাশ হতে থাকে। এই সব সমস্যা যদি থেকে থাকে তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। পাশাপাশি ধূমপান, মদ্যপান করা, নির্ধারিত ওষুধ গ্রহণে ব্যর্থতা হার্টের অসুখকে উস্কে দিতে সাহায্য করে।