কাজের চাপেই হোক কিংবা প্যান্ডেমিকের কারণে একঘেয়েমি জীবন, আজকের দিনে অ্যালজাইমার বা স্মৃতি লোপ পাওয়া খুব সাধারণ একটা রোগ। ‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি’-এই কথাটা আমাদের মধ্যে খুব প্রচলতি আছে। ভীমরতি কেন বলা হয় তারও যদিও খুব সুন্দর একটা কারণ আছে। পুরাণে একজন মানুষের বয়স সাতাত্তর বছর সাত মাস হওয়ার পর সপ্তম রাত্রির নাম ভীমরতি। ভীম মানে ‘ভীষণ’ আর রতি মানে ‘রাত্রি’। সুতরাং ভীমরতি মানে ‘ভীষণ রাত্রি’। বলা হয়, এই রাতের পর মানুষের জীবনে ভীষণ পরিবর্তন আসে। তারা খানিকটা শিশুর মতো আচরণ করা শুরু করে।
কিন্তু, সমস্যার সৃষ্টি অন্য জায়গায়। আজকের দিনে বয়সটা ৭৭ না হয়ে, ১৭ তেও এই ‘ভীমরতি’ দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হল ডিমেনসিয়া। আমরা মাঝে মাঝেই খুব সহজ হিসেব করতে ক্যালকুলেটরের ব্যবহার করি। ‘সকালে কী খেলে?’-এর উত্তরটা দুপুরে মাথায় থাকে না। মনে হয়তো পড়ে, কিন্তু তখন হয়তো আপনি ডিনার টেবিলে। এই ডিমেনসিয়ার অনেকরকমের কারণ হতে পারে। তাদের মধ্যে অন্যতম হল জ্ঞানের সহজলভ্যতা।
কোনওরকম প্রশ্নের উত্তর ‘পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসছে না’ এই অবস্থায় আমরা ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে ফেলি। এতে আমাদের মস্তিস্কের ব্যায়াম হয়ে ওঠে না। আজকাল বই পড়ার চল কমেছে। আমাদের মধ্যেকার শৈল্পিক সত্ত্বা বিলুপ্ত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। এই অবস্থায় প্যান্ডেমিকের প্রভাবে মস্তিস্কের স্বাস্থ্য খুব বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্যে পৃথিবীর ৬০-এর বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যে ৭০ শতাংশই স্মৃতি হারিয়ে ফেলবেন। এই মুহূর্তে দেশের ৬০ লক্ষ মানুষ ডিমেনসিয়ার আক্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ২০ শতাংশই স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন।
সাধারণ ভুলে যাওয়াগুলোকে আবার ডিমেনশিয়া ভেবে নেবেন না। অনেক সময়ই সঠিক পুষ্টির অভাবেও এই ধরনের প্রভাব দেখা যায়। যদি ডিমেনসিয়া হয়ে থাকে, তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেও আপনার ভুলে যাওয়া কোথা মনে পড়বে না। এদের জন্যেই খোলা হয়েছে মেমোরি ক্লিনিক। পূর্ব ভারতে ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে অভিনব এই ক্লিনিকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও ওষুধ নয়, শুধুমাত্র গান, ছবি আঁকার সরঞ্জাম দিয়েই স্মৃতি ফেরানো হচ্ছে ‘বারীণ ভৌমিক’-দের।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কের ভেতরে চারটি লোব থাকে। ফ্রন্টাল লোব, প্যারাইটাল লোব, অক্সিপিটাল লোব এবং টেম্পোরাল লোব। এই চারটি লোবই মস্তিষ্কের যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। ডিমেনসিয়ার কারণে এই চারটি লোবের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গান শোনা আর তা শুনে চিনতে পারা কিংবা সেই গানের দৃশ্য মনে মনে কল্পনা করা- এগুলোর মাধ্যমে মস্তিষ্কের সেই বেসুরো যোগাযোগ আবার ছন্দে ফিরে আসে। এভাবেই কাজ করে ছবি আঁকা। পাহাড় আঁকার সময় তিনকোণা দাগ কাটা, তাতে খয়েরি রঙ করা, এ সবের মাধ্যমেও ক্রমশ লোবগুলির সংবেদনশীলতা বাড়তে থাকে আর আমাদের মস্তিষ্ক আগের অবস্থায় ফিরে যেতে থাকে।
আরও পড়ুন: Health Tips: স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকায় সঠিক তেল বেছে নেওয়া কেন জরুরি জানেন?