ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাস (Coronavirus)। চিনের সাংহাই ও ভারতের দিল্লির মত জায়গায় হঠাত করে যে হারে করোনা বাড়তে শুরু করেছে তাতে ফের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চিকিত্সক থেকে বিশেষজ্ঞদের। চিন ও ভারত ছাড়াও এশিয়া ও ইউরোপেও বৃদ্ধি পেয়েছে কোভিড (COVIS 19)। এখনও পর্যন্ত সবথেকে খারাপ অবস্থা উত্তর কোরিয়ার। এই দেশে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, এই বছরের শেষ নাগাদ কোভিডের জরুরি অবস্থার অবসান ঘটতে পারে। টিকাগ্রহণের সংখ্যা বৃদ্ধি ও জীবনরক্ষাকারী জিনিসপত্রের ব্যবহার করায় এই ভাইরাসের প্রসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে আরও সচেতন না হলে ফের ভাইরাসের প্রভাব বাড়তে পারে। চলতি মাসের এই সপ্তাহের শুরুতেই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ফের যে একটি তরঙ্গ ধেয়ে আসতে চলেছে তার অনুমান করা যায়।
রাজধানীতে ফের করোনার আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি হতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা নিয়ে সচেতন হলেও মানু। এখন অনেক হালকাভাবে নিতে শুরু করেছে। অতিমারি পরিস্থিতি এখনও চলে না গেলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগলিতে শীত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সহ্গে নয়া কোভিডের সংক্রমণের আরও একটি তরঙ্গের সম্ভাবনা রয়েছে। করোনাভাইরাস ঠান্ডা তাপমাত্রায় আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ির মধ্যে মানুষের ভিড় বেশি হয়ে গেলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত এতদিনে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে একমাত্র উপায় হল, এক শরীর থেকে অন্য শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়তে দেওয়া। সামাজিক দিক থেকে শিথিল হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ফের মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে এই মারণভাইরাস। প্রথম ও দ্বিতীয় তরঙ্গের মত ভয়ংকর আকার না নিলেও এবারের তরঙ্গে মানুষের মধ্যে বেশি সংখ্যক আক্রান্তের পরিমাণে বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এই চতুর্থ তরঙ্গে থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে কী কী করা প্রয়োজন, তা দেখে নিন একনজরে…
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক
২০১৯ সালের শেষের দিকে চিনের উহানে যখন প্রথম করোনাভাইরাস দেখা গিয়েছিল সেই সময় থেকেই বিশেষজ্ঞদের প্রথম পরামর্শ ছিল, সকলকেই মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে নাকের চারপাশ, মুখের মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখা প্রয়োজন। প্রশাসন ও সরকার পক্ষ থেকে মাস্ক পরার সুবিধা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র কাপড়ের মাস্ক পরেও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
জনসমাবেশ এড়িয়ে চলুন
মাস্ক ছাড়াও করোনাভাইরাসের দাবানল থেকে রেহাই পেতে সারা বিশ্বে লকডাউনের মত কঠিন পরিস্থিতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল। টানা ২ বছর ধরে সেই লকডাউনের কারণে গোটা জীবনের ধারাই পাল্টে গিয়েছিল। প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। জনসমাবেশ এড়িয়ে চলাই ভাল। মাস্কহীন মানুষের থেকে কমপক্ষে ১ মিটারের শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখা আবশ্যিক। এছাড়া ঘন ঘন স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ও বন্ধ জায়গায় ভিড়কে এড়িয়ে চলুন।
কোয়ারানটাইন
নিজেকে যদি অসুস্থ লাহে তাহলে স্বেচ্ছায় নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখতে পারে। কোভিড এমন একটি ভাইরাসজনিত অসুখ, বাড়ির মধ্যে একজনের হলেই সেটি দ্রুত অন্যের দেহে প্রবেশ করে। তাই সংক্রমিতের থেকে আলাদা করার জন্য কোয়ারানটাইনের ব্যবস্থা চালু করা হয়। যে ব্যক্তি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় সে ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড পর্যন্ত ১০-১৪ দিনের জন্য অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা উচিত। পরিবারের মধ্য বয়স্ক ও শিশুদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা মাথায় রাখা দরকার।
হাত পরিস্কার রাখা ও স্যানিটাইজেশন করা প্রয়োজন
বাড়ির বাইরে গেলে ঘন ঘন হাত স্যানিটাইজড করা আবশ্যিক। তবে করোনাকে প্রতিহত করাই নয়, যে কোনও ভাউরাসেক থেকে দূরে রাখার জন্যও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত। রান্না জন্যই হোক বা খাওয়ার আগে ভাল করে হাত ধোয়া উচিত। হাতে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিস্কার রাখার চেষ্টা করুন। করোনার পাশাপাশি বাচ্চাদেরও এই অভ্যাসের সঙ্গে পরিচালনা করার চেষ্টা করুন। খাওয়ার আগে ও পরে, টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোয়া শেখানো দরকার। তাতে বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার ঘটনা অনেকটা কমে যায়।
টিকাকরণ
করোনাভাইরাসের তীব্রতার ঝুঁকি কমানোর জন্য একমাত্র কার্যকর উপায় হয় টিকাকরণ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোভিডের ওমিক্রন তরঙ্গের সময় হাতপাতালে ভরতি হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। যার পিছনে প্রধান কারণ হল টিকা। ভ্যাকসিনের কারণে শরীরের মধ্যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।