বই পড়তে পড়তে বা টিভিতে কোনও মৃত্য়ুর খবর দেখে কিংবা মোবাইলে দুঃখজনক খবর পড়ার পরই কি দুচোখ বেয়ে জল (Crying) নেমে আসে? শুধু দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর খবরে নয়, আনন্দেও কেঁদে ফেলা কি আপনার অভ্যেস? অনেক সময় মানসিক চাপ (Mental Stress) সহ্য করতে না পেরে অনেকেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন। আশেপাশের লোকজন বিদ্রুপ করলেও কান্না চেপে রাখতে পারেন না তারা। ক্রাই বেবি (Cry Baby) বলে অফিসে বা পরিবারে সকলেই পিছু লাগে তাদের। তবে এই ক্রাই বেবি হওয়া মোটেই খারাপ কিছু নয়। বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিক ভাবে মানসিক চাপ ও কাজ বা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এই কান্না। এমনকি অন্যদের প্রতি মানবিক হতে, সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করতেও সাহায্য করে। তাই লোকচক্ষুর ভয়ে কান্না চেপে আর মুখ লুকিয়ে নয়, প্রকাশ্যেই কেঁদে নিতে সাহসের দরকার হবে না। চোখের একটি গ্রন্থি রয়েছে যা থেকে অশ্রু নির্গত হয়। এটিতে ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি বলা হয়। যদিও অনেকে এই অশ্রু নির্গতকে কন্ট্রোল করে দমন করতে চান। তবে একজনের আবেগ প্রকাশের জন্য এই সুবিধা কিন্তু অনেক দামি।
কেন কান্না চেপে রাখা উচিত নয়, তা জানলে আপনার এমনিই অবাক হয়ে যাবেন। মনের কষ্টে দুদণ্ড কান্নাকাটি করাও এখন সীমিত। তাই চোখ বেয়ে জল নেমে চলে এলে থেমে থাকবেন না, এর কিছু উপকারিতা রয়েছে, যা এখানে দেখে নিন একনজরে…
স্নায়ুকে শান্ত করে- মানসিক চাপ কমাতে বা দুঃখকষ্ট প্রশমিত করতে অনেকেই নিজের পছন্দের কাজগুলি করতে শুরু করেন। তবে যাঁরা অল্পতেই কেঁদে ফেলেন, তাঁদের এই কান্না স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব পড়ে। শরীর ও মনকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
মুড শ্যুয়িং করা বন্ধ হয়- চোখের অশ্রুর সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের যে যোগ রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। এই অশ্রুতে রয়েছে স্নায়ুকে সুস্থ রাখার মন্ত্র। এতে রয়েছে একটি প্রোটিন যা ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিতে পাওয়া যায়। এই প্রোটিন নিউরনের বৃদ্ধিতে ও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। নিউরাল প্লাস্টিসিটির বিকাশ কান্নার সময় মেজাজকে ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ম ভূমিকা পালন করে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করে- প্রতিবার একপলকে চোখ থেকে বেসাল টিয়ার নির্গত হলে চোখকে ধুলোবালি ও দূষণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। চোখের মধ্যে সূক্ষ্ম ধুলোবালির কণা পড়লে তা জ্বালাভাব ও অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। অশ্রুধারা চোখকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। তাত চোখের শুষ্কতার লক্ষণ দূর হয় ও ঝাপসা দৃষ্টি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
ব্যথা ও স্ট্রেস থেক মুক্তি মেলে- কান্না মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। মানসিক যন্ত্রণা বা ব্যথাবেদনা থেকে কান্না হলে শরীরের এন্ডোরফিন ও অক্সিটোসিন নিসৃত হয়। তাতে মানসিক কষ্ট ও শারীরিক ব্যথা কমায়। স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে ও সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
চোখ পরিস্কার করতে সাহায্য করে- চোখের জল চোখকে দ্রুত পরিস্কার করতে সাহায্য করে। টক্সিন থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে অশ্রুজল। চোখের জলের মধ্যে রয়েছে লাইসোজাইম নামে এক ধরনের তরল, যা চোখের ব্যকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম।