অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে জীবনে থাবা বসায় ডায়াবেটিস (Diabetes)। অতএব সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই পারে টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে। যে কোনও বয়সের ব্যক্তিই এখন আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়াবিটিসে। যদিও ছোটরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, যেখানে শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন উৎপাদন তৈরি করতে পারে না। অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা। সুস্থ জীবনযাত্রার প্রধান শর্ত হল— শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যালোরি মেপে খাওয়া। এক কথায় ডায়েটে নিয়ন্ত্রণ। আর দ্বিতীয়টা হল নিয়মিত এক্সারসাইজ বা যোগব্যায়াম করা। বাধা ধরা নিয়মের বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না এখানে। সুস্থ থাকতে গেলে, রোগকে দূরে রাখতে হলে এই দুটি শর্ত আপনাকে মেনে চলতেই হবে। সাধারণত ওষুধ খেয়ে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু লাইফস্টাইল মেনে না চললেই বিপদ।
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ডায়েটের দিকে নজর দিতে হবে। কিন্তু আলাদা করে কোনও খাবার খাওয়ার দরকার নেই। দৈহিক উচ্চতা অনুযায়ী শারীরিক ওজন ঠিক থাকলে ভাত, রুটি, সবজি, মাছ (অর্থাৎ সুষম খাবার) খেলেই চলবে। ভারতীয় থালি কিংবা মধ্যবিত্ত বাড়িতে যে সব রান্না হয়, সেগুলো খেলেই সুস্থ থাকা যায়। শুধু এই বেশি পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি খান। সুতরাং ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারে সবজি বাদ দেবেন না। সবজিতে ক্যালোরির পরিমাণ থাকে অল্প। ফলে শরীরে ক্যালোরি কম ঢোকে। এছাড়া পেটও ভর্তি থাকে। উপরন্ত এমন ফল ও সবজি খান যেটায় শর্করার ভাগ কম এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি। মরশুমি ফল ও সবজির সাহায্য নিতে পারেন এই ক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি প্রসেস ফুড এবং ফাস্ট ফুড খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
ব্যস্ত জীবনযাত্রায় আলাদা করে ব্যায়াম করার সময় নেই। অনেকের আবার জিমে যাওয়ার সময় নেই। যদিও ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এত কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না। যাদের বাড়িতে হাঁটার উপযোগী ছাদ বা উঠোন আছে তাঁরা সেখানেই হাঁটুন। কতক্ষণ হাঁটবেন? পাক্কা ৪৫ মিনিট। এছাড়া বাড়িতে কোনও একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন। এমনকী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ডান-পা, বাম-পা ওপরে তুলে-নামিয়েও এক্সারসাইজ করা যায়। ঘাম ঝরানো যায় ওঠ-বোসের মতো এক্সারসাইজের সাহায্যেও। যাঁদের হাঁটুতে সমস্যা আছে তারা দেহের ওপরের অংশের ব্যায়াম করতে পারেন। মনে রাখবেন, সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট এক্সারসাইজ করলে ভাল হয়। সকাল এবং বিকেল— দু’বেলা সময় ভাগ করে এক্সারসাইজ করলেও উপকার পাবেন।
এক্সারসাইজ করতে আগ্রহ নেই? সমস্যা নেই। ডায়াবেটিকরা বরং ঘর ঝাঁট দেওয়া, ঘর মোছার মতো কাজ করুন। এই ধরনের ঘরের কাজেও যথেষ্ট ভাল কসরত হয় শরীরের। নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে খাবার খাওয়ার পর অনেকটা গ্লুকোজ পেশিতে প্রবেশ করতে পারে। লিভার থেকেও সুগার রক্তে কম মেশে। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা চট করে বাড়তে পারে না। শরীর সুস্থ থাকে। সুগার থেকে অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতিও হয় না।