বয়স মাত্র ৫৩। স্টেজে পারফর্ম করার সময় ঘামছিলেন দরদর করে। বারবার তোয়ালে দিয়ে মুছতে হচ্ছিল মুখ। এমনকী এসি নিয়েও তাকে অনুযোগ করতে শোনা গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে উক্ত শারীরিক লক্ষণের দিকে নজর দিলে সম্ভবত চরম দুর্ঘটনাটা ঘটত না। আসলে সাডেন কার্ডিয়াক অ্য়ারেস্টের (Sudden Cardiac Arrest) পর প্রথম কয়েকমিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে অ্যাটাকের (Cardiac Arrest) পর সিপিআর (CPR)দিতে পারলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য মেলা অবধি অনেকখানি সময় মেলে। হঠাৎ করে এমন প্রানহানি ঘটে সাধারণত অ্যারিদমিয়ার (হার্টের অনিয়মিত ছন্দ)কারণে। অ্যারিদমিয়া হতে পারে এক্সজশ্চন, আর্টারিতে ব্লকেজ এবং ঊর্ধ্বমুখী রক্তচাপের কারণে।
গত ৩১ মে দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে গুরুদাস কলেজের অনুষ্ঠান চলাকালীন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে মারা যান। প্রায় ১ঘণ্টা অনুষ্ঠান চলার পর তিনি শরীরে অস্বস্তি অনুভব করছিলেন। হোটেলে পৌঁছনোর পর শরীর ভারী ভারী লাগছিল বলেও জানিয়েছিলেন। খুব দ্রুত তিনি এলিয়ে পড়েন। নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে ব্রট ডেড বলেল ঘোষণা করেন। হাসপাতালে চিকিৎসকরা জানান, সম্ভবত কার্ডিয়াক অ্যারেস্টেই তাঁর মৃত্যু ঘটেছে। গায়কের পোস্টমর্টেম হয় এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা যায়, ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যটাকে’র কারণে গায়কের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া তাঁর লিভার ও ফুসফুসেরও স্বাস্থ্যও বিশেষ ভাল ছিল না। কিছু ভিডিয়ো দেখা গিয়েছে, গান গাওয়ার সময় স্টেজের ওপরে কেকে মারাত্মক ঘামছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতে আসা তথ্য থেকে পরিষ্কার যে প্রথম ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে যদি কেউ তাঁকে সিপিআর দিত, তাহলে সম্ভবত গায়ককে বাঁচানোর একটা সুযোগ বেড়ে যেতে ৪০-৫০ শতাংশ অবধি।
সিপিআর-এর সাহায্যে একজন ব্যক্তিকে সাহায্য আসা অবধি বাঁচানোর চেষ্টা করা যায় ও এরপর ডিফ্রিবিলেটরের সহায়তাও দেওয়া যায়। তবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যে যদি তা না করা যায় তাহলে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হতে থাকে। কারণ ততক্ষণে হার্টের পেশির যে ক্ষতি হয় তা আর পূরণ করা সম্ভব হয় না। ব্রেনেও রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। ফলে ব্রেনের কোষেরও প্রবল ক্ষতি হতে থাকে। তবে সিপিআর দিতে পারলে, মৃদু হার্টবিট জারি থাকলে, পালস ক্ষীণ হলেও বা ব্লাড প্রেশার ৪০-৫০ এ নেমে গেলেও মানুষটির বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে পুরোমাত্রায়। তাই সিপিআর প্রক্রিয়া প্রকৃতপক্ষেই জীবনদায়ী। তাই পুলিশ, ভলেন্টিয়ারদের সিপিআর ট্রেনিং দেওয়া থাকলে জীবন বাঁচাতে তা অত্যন্ত ফলদায়ী হতে পারে।
এছাড়া ঘাম, শরীরে প্রবল অস্বস্তি, বুকে ব্যথা শুরু হলে জলে ৩০০ মিলিগ্রাম অ্যাসপিরিন গুলে খাওয়ালেও তা জীবনদায়ী হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে হার্টের আর্টারিতে কোনও ক্লট (জমাট রক্তের কণা) তৈরি হলে তা আর বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় না। কিছু ক্ষেত্রে ক্লট গলিয়েও দেয়। সরবিট্রেটও সাহায্য করতে পারে এইসকল ক্ষেত্রে। শরীরে প্রবল অস্বস্তির সঙ্গে চেস্ট পেইন হলে ৫ মিলিগ্রাম সরবিট্রেট জিভের তলায় দেওয়া যায়। এই ওষুধটি হার্টের আর্টারিকে প্রসারিত হতে সাহায্য করে যাতে রক্তসঞ্চালনের সুযোগ তৈরি হয়। তবে কোনও ব্যক্তির ইতিমধ্যেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে গিয়ে থাকলে তাকে ওই ধরনের ওষুধ দিয়ে বিশেষ লাভ হবে না।
তাই বিশেষজ্ঞ না হলে এমন ওষুধ প্রয়োগ করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণ মানুষের জন্য শুধু সিপিআর ম্যাসাজ দেওয়াই উচিত। তবে হাইপোক্সিয়া না থাকলে, ফুসফুসের অবস্থার জন্য হার্টের সমস্যা হওয়া উচিত নয়। হাইপোক্সিয়া থাকলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সঙ্গে ব্রেন ইনজুরি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এছাড়া কোনও ব্যক্তির পায়ে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা পায়ের শিরায় রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা থাকলেও হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে। কারণ ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস-এর কারণে পায়ের রক্তবাহী নালীতে ক্লট তৈরি হয়। যা ভেঙে ছোট ছোট ক্লটে পরিণত হয় ও রক্তপ্রবাহের সঙ্গে ভাসতে ভাসতে ফুসফুসে পৌঁছে ফুসফুসের কাজে এমন ব্যঘাত ঘটায় হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এক্ষেত্রে হঠাৎ প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা আড়ানো যায় না।
লিভার ডিজিজও হঠাৎ করে হয় না। ধীরে ধীরে সমস্যা তৈরি হয়। তাই হঠাৎ করে প্রাণহানির পিছনে দায়ী করা যায় এক্সজশ্চনের কারণে হওয়া অ্যারিদমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও আর্টারিতে ব্লকেজকে। মনে রাখবেন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হার্টের আর্টারির প্রবল ক্ষতি করে। তাই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে নিয়মিত ওষুধ খান। মাঝেমধ্যে একটু পরিশ্রমেই বুকে ব্যথা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন— পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।