করোনা অতিমারিতে সংক্রমণের সংখ্যা নিম্নমুখী হলেও ভদ্বেগ বা আতঙ্কের রেস কিন্তু কমছে না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সারা দেশ এখন মারাত্মক ফ্লুয়ের হামলায় কাবু। শিশু থেকে প্রবীণ সকলের স্বাস্থ্য নিয়ে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন চিকিত্সকবিজ্ঞানীরা। সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী ফ্লুয়ের প্রাদুর্ভাব এত বেশি, যা কোভিড ১৯ ভাইরাসের চেয়ে মানুষের জন্য গুরুতর আকার ধারণ করেছে। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ গবেষণা ও নীতি কেন্দ্রের ডিরেক্টর অধ্যাপক মাইকেল অস্চারহোমের মতে, বিশ্বের ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব কোভিড মহামারির চেয়ে অনেক খারাপ হতে পারে। ভাইরাসের সংকেত ও মডেলগুলি দেখে জানা গিয়েছে, এই ধরনের ফ্লুয়ের প্রভাবে মাত্র ৬ মাসে ৩৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যেতে পারে।
জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি আরও জানিয়েছেন, কোভিড ১৯-এর আগে ইনফ্লুয়েঞ্জাই একমাত্র মানুষের জন্য প্রথম ও এক নম্বর বায়োলজিক্যাল রিস্ক ছিল। কোভিডের পর সেটি মোটেও পরিবর্তন হয়নি। ১৯৮১ থেকে ২০১৮, ১০০ বছরের মধ্যে আমাদের চারটি ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি হয়েছিল। এটি স্পষ্ট যে কোভিড অতিমারিতে ইনফ্লুয়েঞ্জার ঝুঁকি একটি মারাত্মক এবং ভয়ংকর প্রভাব বিস্তার করতে চলেছে। তবে এই সময় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কোভিডের মধ্যেই কি আরেকটি ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী হবে, যদি হয় তবে কখন?
তিনি আরও জানিয়েছেন, মৌসুমী ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরির একটি রোডম্যাপ করা হয়েছিল। এই বছর যে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বাড়বে তা আগেই আশা করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আগেই সতর্কতা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-সহ অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি। জানা গিয়েছে, প্রচিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জার রোষে প্রায় ২ লক্ষ ৯০ হাজার থেকে ৬ লক্ষ ৫০ হাজারের মতো মানুষ মারা যান। প্রসঙ্গত, প্রতি ২৫ বছর পর একবার ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ব। নতুন ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ফ্লু-এর প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে ভলভাবে বোঝা থেকে শুরু করে মজবুত আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী একটি রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান ফ্লু ভ্যাকসিনগুলি ১৯৪০-এর দশকে প্রথম প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়। রোগের কোন প্রজাতিগুলি প্রবাহিত হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে প্রতিবছর পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যদিও গত ১০ বছরে ভ্যাকসিনের উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান উন্নতি হয়েছে। আমাদের এখনও এমন টিকা একটিও নেই, যেটি দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তিশালী স্ট্রেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে শরীরকে রক্ষা করবে। এমনটাই মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ড. মার্টিন ফ্রিডে।
প্রসঙ্গত, একটি ইউনিভার্সাল ফ্লু ভ্যাকসিন যা প্রতিবছর প্রয়োগ করতে হয় না। বিভিন্ন প্রজাতির বিরুদ্ধে কার্যকর এনং অনুন্নত দেশগুলিতে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিত্সকবিজ্ঞামীদের কথায়, কোভিড অতিমারির থেকে শিক্ষা নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্তুত করা দরকার।
আরও পড়ুন: Food for Children: কোন কোন খাবারে শিশুর বুদ্ধি বাড়ে? মজবুত থাকে হাড় ও পেশী?