টানা ২ সপ্তাহ ধরে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুমানোর পর কর্মক্ষমতা একই স্তরে থাকে না। যদি আপনি ২৪ ঘণ্টাই জেগে থাকেন তাহলেও সেই একই অবস্থার মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত হবেন। এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর উত্পাদনশীলতা হ্রাস হয় প্রায় ১৭ লক্ষের মতন। এর মূল সমস্যা হল অধিকাংশই ক্লান্ত বোধ করার পরিণতি বুঝতে পারেন না। একই সময়ে তারা কী খাচ্ছেন, কতটা ব্যায়াম করছেন তার উপর বেশি গুরুত্ব দেন। বিশেষজ্ঞদের কথায়, অন্যান্।দের তুলনায় বেশি কর্মক্ষমতা সম্পর্কে চিন্তা বাড়ালে তারা প্রথমেই ডায়েট ও ব্যায়ামের কথা ভাবেন। তবে আপনি যদি স্বাস্থ্যের তিনটি স্তরের মধ্যে যদি কিছুকে অগ্রাধিকার দিতে চান, তাহলে তা হল ঘুম। হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক স্টিভেন লকলি বলেছেন, গত তিন বা চার দশক ধরে সত্যিই ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জায়গা থেকে অনেক রকম তথ্য এসেছে। তবে সব ধারণার মূলেই রয়েছে ঘুম। ঘুমের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকতে পারে না। ব্যায়াম ও ডায়েটের থেকে ঘুম সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভাল করে না ঘুম হয় তাহলে পুষ্টির বিপাক ব্যাহত হয়। ক্লান্ত হলে ব্যায়াম করার ইচ্ছেশক্তিরও বিনাশ ঘটে। তাই এই তিনটি বিষয়জুড়ে ঘুমের গুরুত্বকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
হার্ভার্ড একাডেমিক বলেছে যে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ন্যূনতম সাত ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। এই নিয়মকে তোয়াক্কা না করলে কিছুজন খুব কম সময়ে সুখে থাকতে পারে। অধিকাংশের ধারণা, তাদের খুব বেশি ঘুমের প্রয়োজন নেই। আসলে কোনও সীমাবদ্ধ না থাকে, তাহলে তারা মাত্র ৬ ঘণ্টারও বেশি ঘুমিয়ে নেন। তবে এখানে রয়েছে একটি সহজ অঁক। যদি ভাবেন সারা সপ্তাহ টানা রাত জাগার পর সপ্তাহান্তে গিয়ে পুরো ঘুমের কোটা শেষ করবেন তাহলে আরও বিপদ ডেকে আনছেন। ধরা যাক আপনি সোম ও শুক্রবারের মধ্যে রাতে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন। তাহলে আপনি রাতে ২ ঘণ্টা করে কম ঘুমিয়েছেন। তার মানে আপনাকে সপ্তাহান্তে ১০ ঘণ্টারও বেশি ঘুম পেতে হবে। যার মানে হল শনি ও রবিবার দিনে ১২ ঘণ্টা ঘুম চাই। কিন্তু সেই সময়টা আপনার কাছে নেই।
রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর জন্য এখানে কিছু টিপস দেওয়া রইল…
ঘুমকে গুরুত্ব দিন: শিফটে যারা কাজ করেন না তাদের সকলের জন্য কর্মসূচি আগে থেকে সাজিয়ে রাখা উচিত। ঘুমকে রাখুন সবার আগে। তার বাকি যা যা করণীয় তা পরিকল্পনা করুন। মনে রাখবেন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হলে আপনাকে সাড়ে সাত বা সাড়ে আট ঘণ্টা বিছানায় থাকতে হবে।
পোষ্যদের নীচে নামিয়ে রাখুন: যতই আদরের হোক না কেন, বেডরুমে কোনও পোষ্য রাখবেন না। কারণ তারা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
আলো নিভিয়ে রাখুন:ঘুমানোর ২-৩ ঘণ্টা আগে আলো নিভিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। আলো যতটা সম্ভব আবছা হওয়া উচিত। লাল, কমলা বা নীল আলো ঘরকে ঠান্ডা করে তোলে। আলোর তীব্রতা কম থাকায় শরীরে থেকে মস্তিষ্কে অনেক কম প্রভাব ফেলে। রাতে গভীর ঘুমকে স্বাগত জানাতে বেডের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় পরিবর্তন করা যায় এমন লাইট বাল্ব ব্যবহার করতে পারেন।
ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করা বন্ধ করুন: ঘুমানোর আগে যতটা সম্ভব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা বন্ধ করুন। ঘুমতে যাওয়ার আগে ২-৩ ঘণ্টা ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল থেকে বিরত থাকুন। যদি ভাবে ৩০ মিনিট ব্যবহার করবেন, তাহলে তা ৩০ মিনিটই ব্যবহার করুন। বেডরুমে না রাখারই চেষ্টা করুন।