আতঙ্ক নিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে বর্তমানের ত্রাস মাঙ্কিপক্স ভাইরাস (Monkeypox Virus)। বৃহস্পতিবারই ভারতের প্রথম মাহ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত করেছে কেরল (Kerala)। ফলে সঠিক পরিকল্পনা করে সচেতন ও ব্যবস্থা না নিলে দেশে এই ভাইরাস যে ছড়িয়ে পড়তে পারে তার তীব্র আশঙ্কা প্রকাশ করেছে চিকিত্সকমহল। তাই মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ ও প্রধান লক্ষণগুলি সম্পর্কে জেনে রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ করোনার দাপট (COVIV19) এখনও কমেনি। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ফলে দেশে মাঙ্কিপক্সের প্রবেশে উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুণ। শরীরের সর্বত্র লাল রঙের ছোট-বড় ফুসকুড়ি হল মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ। তবে এমন লক্ষণ অনেক কিছুর জন্যই হতে পারে। তাহলে উপসর্গ থেকে কীভাবে বুঝবেন আপনি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কিনা!
মাঙ্কিপক্স ছড়ায় কীভাবে?
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ হয় স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের উপসর্গের মতোই। তবে, গুটি বসন্তের থেকে এই রোগের প্রভাব অনেকটাই মৃদু। মাঙ্কিপক্স সংক্রমণে মৃত্যুর হারও খুব কম। এর উপসর্গদের মধ্যে রয়েছে জ্বর, গায়ে ফোসকা ওঠা। ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে, সংক্রামক ফুসকুড়িগুলির মাধ্যমে বা শারীরিক তরলের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলি কী কী?
মাঙ্কিপক্সের বেশিরভাগ রোগীই কেবল জ্বর, শরীরে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা এবং ক্লান্তি অনুভব করেন। আরও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের মুখে এবং হাতে ফুসকুড়ি এবং ক্ষত হতে পারে যা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা শুরু হলে তাতে আমরা ম্যাকুলস বলি। এগুলো শুধু লাল ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। তারপর এটি প্যাপিউলে অগ্রসর হয়। এমন পর্যায়ে গেলে ফুসকুড়িগুলি থেকে বেশ যন্ত্রণা অনুভব হয়। লাল হয়ে বড় আকার ধারণ করে তা ফোসকার মত হতে শুরু করে। এরপর বেশি পেকে গেলে তা থেকে সাদা রঙের তরল বের হতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলি আবার শুকিয়েও যায়। যত শুকোতে শুরু করে তত বেশি চুলকানি শুরু হয়। এরপর স্ক্র্যাবগুলি উঠে ধীরে ধীরে সেরে যায়। মাঙ্কিপক্সের ফুসকুড়ি সাধারণত মুখ দিয়ে শুরু হয়। কখনও কখনও মুখে, তারপর হাতে ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে।
চিকেনপক্স ভেবে অনেকেই ভুল ধারণা করতে পারেন। কারণ মাঙ্কিপক্সের সব উপসর্গই চিকেনপক্সের মত। তাই বিভ্রান্তি ছড়ায় বেশি।
স্ক্র্যাবিস– মাইট বা একধরনের পোকা যখন ত্বকের ডিম পাড়ে তখন তা স্ক্র্যাবিস বলে ধরা হয়। ফুসকুড়ি শরীরের যে কোনও জায়গায় হতে পারে। তবে এতে সাংঘাতিক চুলকানি দেখা যায়। বিশেষ করে আঙ্গুলের মধ্যবর্তী স্থানে প্রথম ও বেশি দেখা যায়।
পোকামাকড়ের কামড়- যদি কোনও সময় বেডবাগ কামড়ায় তাহলে প্রথম চুলকানি, তারপর লাল হয়ে গর্তের আকার ধারণ করে। এতে জ্বালাভাবও দেখা যায়।
মোলাস্কাম- একটি সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ, মোলাস্কাম শরীরের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে চুলকানি, জায়গায় জায়গায় শক্ত হয়ে যাওয়া, ছোট গর্ত তৈরি হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়। সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি মোলাস্কাম দেখা যায়।
সারা বিশ্বের মাঙ্কিপক্স যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চলতি বছরের শুরু থেকে ২২ জুন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪১৩ জন। মোট ৫০ টি দেশে এই রোগের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। এই প্রথমবার এতগুলি দেশে একসঙ্গে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আর সেখানেই ভয় পাচ্ছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তারা।