রঙিন উত্সব (Holi 2023) মানেই হরেক রকমের রকম। আর রঙের খেলা মানেই ঠান্ডাইয়ের (Thandai) ফোয়ারা। সঙ্গে থাকে জিভে জল আনা মিঠাই, সিঙ্গারা, গজার মতো সুস্বাদু খাবার। খাওয়া-দাওয়া ছাড়া কোনও উত্সবেরই আনন্দ অনুভব হয় না। ঠান্ডাই হল প্রচলিত একটি ঠান্ডা সুমিষ্ট পানীয়, যেটি ভারতের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। শুকনো ফল, বীজ, ও বেশ কয়েকটি মশলার মিশ্রণে তৈরি ঠান্ডাই ভারতের সব প্রান্তেই জনপ্রিয়। এছাড়া ঘন দুধ, চিনি, বাদামের মিশ্রণ তো থাকছেই। ভাং ছাড়া দোল, ভাবাই যায় না। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঐতিহ্যবাহী ঠান্ডাইয়ে ভাং বা গাঁজা মেশানো হয়।
সাধারণত রঙিন উত্সবে নেশা করতে ভাং মেশানো ঠান্ডাই খাওয়া হয়। আমরা সকলেই জানি, ভাং (Bhang) বা গাঁজা খাওয়া কতটা অস্বাস্থ্যকর। ভাঙের একটি নিজস্ব ও প্রাকৃতিক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাতে শরীরে নানা রকম অস্বস্তি, দ্রুত হৃদস্পন্দন, শুষ্ক ত্বক, দুর্বল স্মৃতিশক্তি, উদ্বেগ, প্যারানিয়া হতে পারে। ভাং ও ঠান্ডাইকে স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবেও ধরা হয়। কারণ এই সুস্বাদু পানীয় পান করলে শরীরে আলাদা রকমের শক্তি অনুভূত হয়। দ্বিগুণ হয় রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও। হজমশক্তিরও উন্নতি হয়। আবহাওয়া বদলের সময় এই পানীয়ের প্রয়োজনীয়তা কিন্তু কার্যকরী হয়ে ওঠে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ভাং মেশানো ঠান্ডাই ভীষণ প্রিয় মহাদেবের। শিবরাত্রির দিনও পান করা হয় ঠান্ডাই। শিবরাত্রির কয়েক সপ্তাহ পরেই তৈরি পালন করা হয় এই রঙিন উত্সব। সাধারণত উত্তর ভারতের বেনারসে ঠান্ডাই হল বিখ্যাত। গুজিয়ার সঙ্গে এই ঠান্ডাই মূলত পরিবেশন করা হয়। এছাড়া মাথরি, মালপুয়া, পুরাণপুলি, দইয়ের সঙ্গে এই ঠান্ডাই খাওয়া একেবারে অমৃতের সমান।
ঠান্ডাই বানানোর জন্য কী কী উপকরণ লাগে?
ঠান্ডাই হল দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি একটি অসাধারণ স্বাদের পানীয়। এছাড়া তাতে থাকে আমন্ড, কাজুবাদাম, পেস্তা, মৌরী বীজ, তরমুজের দানা, মেথি কস্তুরি, গোলমরিচ, পোস্ত বীজ, এলাচ, কেশর, গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ভালো করে পেস্ট বানানো হয়। ঠান্ডাই তৈরি করার সময় ভাং পাতা বেটে দেওয়া হয়। তবে মনে করা হয়, পাথরের স্ল্যাবের উপর যদি বাটা হয়, তাহলে তার স্বাদই আলাদা হয়।
ঠান্ডাইয়ের উপকারিতা
ভাং ছাড়া যদি ঠান্ডাই খাওয়া হয় তাহলে তার উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে থাকা উপাদাগুলি ঠান্ডাইয়ে স্বাস্থ্যকর মিশ্রণ করে তোলে। হাই প্রোটিন ও ফাইবারে ভরপুর এই পানীয় খেলে দ্রুত শরীরের ভিতর শক্তি সঞ্চারিত হয়। ঠান্ডাই শরীরকে ঠান্ডা করতে দারুণ কার্যকরী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে সাহায্য করে।
– পোস্ত, তরমুজের বীজ, বাদাম একসঙ্গে মেশানো হয় এতে। ফলে এই মিশ্রণটি ফাইবারে ভরপুর থাকে। স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ঠান্ডাই খাওয়া বেশ উপকারী বলে মনে করা হয়। এছাড়া আমন্ড হল ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ।
– মৌরী বীজ ধীরে ধীরে শরীরকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। এছাড়া পরিপাকতন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে, পেট ফাঁপা রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে।
– পোস্ত বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এছাড়া এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ও হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ কার্যকরী।
– শুকনো গোলাপের পাপড়িতে থাকে ফাইটোকেমিক্যাল, ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী।
– এলাচ ও গোলমরিচ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।)