ব্যায়ামের সময় পেশী থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, এই হরমোন হল আইরিসিন। আইরিসিন মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে এবং কগনিশনে বিশেষ সাহায্য করতে পারে।
একটি আকর্ষণীয় নতুন গবেষণা দেখায় যে ব্যায়াম কীভাবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করতে পারে। গবেষণাটি যদিও একটা ইঁদুরের ওপর করা হয়েছিল। দেখা গেছে যে ব্যায়ামের সময় পেশীর থেকে উৎপাদিত একটি হরমোন মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে যা নিউরোনের স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুস্থ প্রাণী কিংবা আলজাইমার রোগ আক্রান্ত কেউ, উভয়ক্ষেত্রেই চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে এই হরমোন। আগে এক গবেষণায় দেখা গেছিল যে ব্যায়ামের সময় মানুষ একই হরমোন উৎপন্ন করে। একইসঙ্গে আরেক গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যায়াম করলে বার্ধক্য এবং ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মাত্রা কমতে পারে।
এই ধরনের প্রচুর প্রমাণ আছে যে ব্যায়াম মস্তিষ্কের জন্য ভাল। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী উভয়ের গবেষণায় দেখা যায় যে ব্যায়াম মস্তিষ্কে নতুন নিউরোন তৈরির ক্ষেত্রে সাহায্য করে। তারপর সেই নতুন কোষগুলিকে বাঁচতে, গ্রো করতে এবং মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কে সংগঠিত হতে সাহায্য করে। যেখানে তারা চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। বড় আকারের এপিডেমিওলজিক্যাল স্টাডিও ইঙ্গিত দেয় যে সক্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যায়াম না করা লোকদের তুলনায় আলজাইমার রোগ এবং অন্যান্য ধরনের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
কিন্তু কীভাবে অনুশীলন আমাদের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ কাজকে প্রভাবিত করে? বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে ব্যায়াম সরাসরি মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে জৈব রাসায়নিক পরিবেশ পরিবর্তন করতে পারে। বিকল্পভাবে, পেশী এবং অন্যান্য টিস্যু শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সময় কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন করতে পারে যা মস্তিস্কের মধ্যে চলাচল করতে সক্ষম। এই ধরনের পদার্থগুলি সেখানে কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু করে যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের একদল বিজ্ঞানী এক দশক আগে এই জটিল বিষয়গুলি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করেছিলেন। ২০১২ সালে, ব্রুস এম স্পিগেলম্যানের নেতৃত্বে এই গবেষকদের মধ্যে কয়েকজন প্রমাণ করতে পারেন যে, ব্যায়ামের সময় মানুষের শরীরে রক্ত প্রবাহে এক ধরনের হরমোন মুক্তি পায়। তাঁরা এই নতুন হরমোনের নাম দিয়েছিলেন আইরিসিন। গ্রীক বার্তাবাহক দেবতা আইরিসের নাম থেকে এই নামের উৎপত্তি।
রক্তে আইরিসিনের গতিপথ ট্র্যাক করে তাঁরা দেখতে পেয়েছিলেন যে এটি প্রায়ই চর্বিযুক্ত টিস্যুগুলিতে বাস করে। এবার এই হরমোনকে ফ্যাট সেলগুলি চুষে নেয়। এই জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া একটি ক্যাসকেড তৈরি করে যা সাধারণ সাদা ফ্যাটকে বাদামী করে দেয়। বাদামী চর্বি অনেক সাধারণ সাদা চর্বির তুলনায় বিপাকীয়ভাবে অনেক বেশি সক্রিয়। এটি প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি পোড়াতে পারে। তাই আইরিসিন বাদামী চর্বি তৈরিতে সাহায্য করে আমাদের বিপাককে বাড়াতে সাহায্য করে।