একেবারে প্রথম দিকে পিরিয়ড বা মাসিক নিয়ে সমাজে একাধিক ট্যাবুর প্রচলন ছিল সমাজে। সাধারণ এই জৈবিক প্রক্রিয়াকে মেয়েরা গুপ্তরোগের মতই লুকিয়ে রাখতেন। প্রকাশ্যে সমস্যা নিয়ে যেমন কথা বলতেন না, তেমনই অনেক সময় গুরুতর সমস্যা হলেও লোকলজ্জার ভয়ে তা চেপে রাখতেন। আজ থেকে ৫০ বছর আগে স্যানিটারি ন্যাপকিন বাজারেও আসেনি। ভরসা বলতে ছিল কাপড়ের টুকরো। এবার সেই কাপড়ের টুকরো যে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা হত, তা-ও নয়। ফলে সেখান থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনাও ছিল অনেক বেশি। পরবর্তীতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রচলন শুরু হলেও অনেকে তা ব্যবহার করতেন না। কারণ এখনও অনেকের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিলাসিতা, দামি।
দিন বদলায়, মানুষের মানসিকতাতেও এসেছে বদল। কাপড়ের টুকরোর তুলনায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ভাল হলেও তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসুবিধে রয়েছে। যার মধ্যে লিকেজের সমস্যা প্রধান। এছাড়াও স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে অনেকেই র্যাশের সমস্যায় ভোগেন। আর তাই সাম্প্রতিক কালে ব্যবহার বেড়েছে ট্যাম্পুন ও মেন্সট্রুয়াল কাপের।
মেন্সট্রুয়াল কাপ কী, কী ভাবেই বা এর ব্যবহার করা হয়, আদৌ সুরক্ষিত কি না এই বিষয়ে সব মেয়ের মধ্যেই থাকে অনেক প্রশ্ন। সবথেকে বেশি যে প্রশ্ন আসে তা হল মেন্সট্রুয়াল কাপ কি ভ্যাজাইনাতে আটকে যেতে পারে?
মেন্সট্রুয়াল কাপ এবং ট্যাম্পুন অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। যেখান থেকে দূষণ ছড়ানোর কোনও সম্ভাবনা থাকে না। যা থেকে যায় প্যাডের ক্ষেত্রে। তবে মেন্সট্রুয়াল কাপ কিন্তু বাজেট ফ্রেন্ডলি। ১৯৩০-এর দশক থেকেই এই মেন্সট্রুয়াল কাপের প্রচলন নয়। তবে ইদানীং এই কাপ খুবই জনপ্রিয়।
মেন্সট্রিয়াল কাপ নরম সিলিকন দিয়ে তৈরি হয়। দেখতে ছোট কাপের মত। পিরিয়ডের সময় এই কাপ ভাঁজ করে যোনিপথের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। মাসিকের যাবতীয় রক্ত জমা হয় এই কাপে। এখান থেকে লিকেজের কোনও সম্ভাবনা থাকে না। কোনও সংক্রমণও ছড়ায় না। এই কাপ দু’দিন পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। প্রথমদিকে হয়তো একটু ভয় বা অস্বস্তি হতে পারে। কিন্তু একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে অনেক সুবিধে পাবেন। যদি মনে হয় মেন্স্ট্রুয়াল কাপ যোনির অনেকটা ভিতরে ঢুকে গিয়েছে, তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু মেই। এই কাপ শরীরের ভেতর নিজে থেকে নড়াচড়া করতে পারে না। বসার ভঙ্গিমায় যোনিতে তীর্যক ভাবে চাপ দিলেই তা সহজে বেরিয়ে আসবে। সঠিক আকারের কাপ নির্বাচন করুন। তাতে সমস্যা কম হবে। মেন্সট্রুয়াল কাপ যে দিনগুলোতে ব্যবহার করবেন, সেই সব দিনে সহবাস এড়িয়ে চলুন।
প্রথমবার ব্যবহারের সময় মেন্সট্রুয়াল কাপ যদি যোনিপথে আটকে যায় তাহলে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। খুব সহজেই তা বের করে পুনরায় ঠিকভাবে যোনিপথে ঢোকাতে পারবেন। প্রয়োজনে ম্যানুয়াল পড়ুন। ব্যবহার সংক্রান্ত ভিডিয়ো দেখুন। মেন্সট্রুয়াল কাপ অত্যন্ত সাধারণ জিনিস। একবার ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে পারলে আরাম পাবেন। ব্যবহার করা হয়ে গেলে কাপ ইষদুষ্ণ জলে অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে ধুয়ে রেখে দিন। আর কাপ ব্যবহারের আগে নিজের হাত এবং যোনিপথও পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না। মেন্সট্রুয়াল কাপ যেমন খরচা কমায়, তেমনই কিন্তু পরিবেশ দূষণের হাত থেকেও রক্ষা করে। বাড়ির সামনের দোকান বা অনলাইন যে কোনও কোথাও থেকে কিনতে পারেন এই কাপ। শুরু হোক প্যাড-মুক্ত জীবন।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।