AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Dementia: অল্প বয়স থেকে কী-কী অভ্যাস করলে সহজে বার্ধ্যকে হানা দিতে পারবে না স্মৃতিভ্রংশের রোগ?

Alzheimer's: রোজকারের ব্যস্ত জীবনে কারও নাম ভুলে যাওয়া; ছোটখাটো কোনও জিনিস ঘরের কোন অংশে রেখেছিলেন, তা ভুলে যাওয়া; বাজার থেকে জিনিস আনতে ভুলে যাওয়া খুব সাধারণ। যখন রোজ যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরেন, সেটা যদি ভুলে যাওয়া অথবা নিজের সন্তান বা স্ত্রীর নাম চট করে মনে না পড়ে, তা কিন্তু অ্যালজ়াইমার্সের স্পষ্ট ইঙ্গিত।

Dementia: অল্প বয়স থেকে কী-কী অভ্যাস করলে সহজে বার্ধ্যকে হানা দিতে পারবে না স্মৃতিভ্রংশের রোগ?
| Updated on: Nov 08, 2023 | 10:51 AM
Share

মেঘা মণ্ডল

১৫টি সিগারেট এবং ৬ পেগ মদ্যপানের সঙ্গে একাকিত্বের কী সম্পর্ক? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জেন জেনারেল বিবেক মূর্তির মতে এই ১৫টি সিগারেট এবং ৬ পেগ মদ্যপানের সমতুল হতে পারে একাকিত্ব। এই একাকিত্ব যখন পরিণত হয় মানসিক সমস্যায়, তখন তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। একাকিত্বের মতো সমস্যা যখন আজকের পৃথিবীতে ক্রমশই বাড়ছে, তখন তার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার বৃত্তে আরও বেশি করে চলে আসছে বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নানাবিধ মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যার বা রোগের কথা। এবং সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে জন্মালেও আধুনিক থেকে আধুনিকতর নাগরিক জীবনে মানুষ যেভাবে ক্রমশ সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভুগছে, তাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জীবনযাত্রা এবং বিশেষ করে মস্তিষ্কের সচলতা বজায় রাখার নানাবিধ কৌশলের উপর। এই প্রসঙ্গেই অ্যালজ়াইমার্স ও ডিমেনশিয়া নিয়ে আগের তুলনায় অনেক বেশি আলাপ-আলোচনা এবং সচেতনতাবৃদ্ধির কথা হচ্ছে বিভিন্ন ফোরামে আজকাল।

ছোটখাটো বিষয় ভুলে গেলেই বলতে শোনা যায়—বয়সের সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। ভুলো মন নিয়ে এই ধরনের ব্যঙ্গকে অনেকেই পাত্তা দেন না। কিন্তু ঘটনাচক্রে বয়সের সঙ্গে বাড়ে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি। অ্যালজ়াইমার্স এক ধরনের ডিমেনশিয়ার অসুখ। যেখানে মানুষের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায়। দীর্ঘদিনের অর্জিত জ্ঞান, জীবনের ছোট-বড় অভিজ্ঞতা, এমনকি কাছের সম্পর্কের মানুষকেও ভুলে যায়। ২০২৩-এর জুনে প্রকাশিত ‘জার্নাল অব ইকনমিক লিটারেচার’-এর একটি পরিসংখ্যান বলছে, পঁয়ষট্টি-ঊর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বর্তমানে, ভারতে ৮৮ লক্ষ ষাটোর্ধ্ব মানুষ ডিমেনশিয়া ভুগছেন। গবেষণা বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯৭% বৃদ্ধি পাবে। যা বর্তমানের প্রায় তিন গুণ বেশি এবং উদ্বেগজনক তো বটেই।

ডিমেনশিয়ার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাছাড়া বিশ্বজুড়েও নানা গবেষণা, সমীক্ষা চলছে স্মৃতিভ্রংশ প্রতিরোধের উপায় নিয়ে। রোজকারের ব্যস্ত জীবনে কারও নাম ভুলে যাওয়া; ছোটখাটো কোনও জিনিস ঘরের কোন অংশে রেখেছিলেন, তা ভুলে যাওয়া; বাজার থেকে জিনিস আনতে ভুলে যাওয়া খুব সাধারণ। যখন রোজ যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরেন, সেটা যদি ভুলে যাওয়া অথবা নিজের সন্তান বা স্ত্রীর নাম চট করে মনে না পড়ে, তা কিন্তু অ্যালজ়াইমার্সের স্পষ্ট ইঙ্গিত। তবে, আপনি বয়সের সঙ্গেও বুদ্ধিমান থাকতে পারেন। কমাতে পারেন অ্যালজ়াইমার্সের ঝুঁকি।

অ্যালজ়াইমার্স ও ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে কাজ আসতে পারে একাধিক ভাষা। গবেষণায় জানা গিয়েছে, মস্তিষ্কের বাম দিকে রয়েছে ‘ব্রোকাস এরিয়া’ (যা শব্দ উচ্চারণে সাহায্য করে) ও ‘ওয়েরনিকিস এরিয়া’ (যা বাক্যের অর্থ বুঝতে সাহায্য করে)। এই দুই অংশকে একত্রে বলা হয় ‘ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার’। নতুন-নতুন ভাষা শেখা থেকে তা রপ্ত করা এবং সেগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এই ‘ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার’ সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এই ‘ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার’ যত বেশি সক্রিয় থাকবে, ততই কমবে অ্যালজ়াইমার্সের ঝুঁকি। যদিও ছোট বয়সেই সবচেয়ে বেশি নতুন ভাষা শেখা যায় এবং সেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মস্তিষ্ক দক্ষ হয়ে ওঠে। এটাই পরবর্তীকালে বয়সের সঙ্গে অ্যালজ়াইমার্সের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে বলে মত বিজ্ঞানীদের।

কোভিড পরিস্থিতি চলাকালীন প্রকাশিত হয়েছিল একটি  গবেষণাপত্র। সেখানে ৫৮-৯০ বছর বয়সি ৭০০ জনের উপর করা এক সমীক্ষা বলছে, নতুন তথ্য সংগ্রহ করা এবং উদ্বূত কোনও পরিস্থিততে কী করাটা গুরুত্বপূর্ণ বা জরুরি, তার উপর জোর দেওয়া—মস্তিষ্কের এই দুই মূল কাজ বয়স্কদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে। বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস (NIMHANS)-এর করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে ব্যক্তি অন্তত দু’টি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন, তাঁর নিউরো ডিজেনারেশনের (মস্তিষ্কের নিউরনের এক ধরনের স্নায়ুবিক প্রক্রিয়া) প্রক্রিয়া ধীর গতিতে এগোয়। অর্থাৎ সহজ কথায়, এই ধরনের মানুষের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা অন্যদের তুলনায় বেশি হয়। বেশিরভাগ ভারতীয়ই একের বেশি ভাষায় কথা বলেন।

শুধু যে ভাষা শিখে এবং তা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে আপনি স্মৃতিশক্তিকে মরণকাল পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবেন, তা কিন্তু নয়। অ্যালজ়াইমার্সের ঝুঁকি কমাতে গেলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জীবনধারা বা লাইফস্টাইলেও আপনাকে বদল আনতে হবে। যেমন, ৪০ বছর বয়সে পৌঁছনোর পর আপনাকে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে যাতে রক্তচাপ ১৩০ এমএম এইচজি অথবা তার নীচে থাকা চাই। হাইপারটেনশনের ক্ষেত্রে অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ চিকিৎসা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে কার্যকর মেডিকেশন। ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে বাধা দেয় এমন ১২টি ঝুঁকি (risk factor)-এর কথা উল্লেখ করে করেছে ল্যানসেট কমিশন। যার মধ্যে রয়েছে কম শিক্ষা, হাইপারটেনশন, বধিরতা, ধূমপান, ওবেসিটি, ডিপ্রেশন, শারীরিকভাবে সক্রিয় না-থাকা বা স্থবিরতা, ডায়াবেটিস এবং কম সামাজিক মেলামেশা। পাশাপাশি রয়েছে মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত (traumatic injury), বায়ুদূষণ এবং অত্যধিক মদ্যপান। সপ্তাহে ২১ ইউনিটের বেশি মদ্যপান করলেই বাড়বে ডিমেশিয়ার ঝুঁকি। বুড়ো বয়সেও বুদ্ধিমান থাকতে গেলে মদ্যপান ও ধূমপান করা চলবে না। এমনকি শ্রবণশক্তিকেও সুরক্ষিত রাখা দরকার। এছাড়া ডায়াবেটিস ও ওবেসিটির মতো লাইফস্টাইল ডিজ়িজও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এসব বিষয়ে সচেতন থেকে আপনি বার্ধক্যে পৌঁছেও স্মৃতিশক্তিকে তাজা রাখতে পারবেন।