গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাশির সিঙ্গল ডোজ ভ্যাকসিন স্পুটনিককেও (Sputnik Light) ছাড়পত্র দিয়েছে ভারত। লাইট কোভিড (Covid Vaccine) ভ্যাকসিন হিসাবে জরুরি ব্যবহারের জন্যই অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই ভ্যাকসিনকে। DCGI- দ্বারা অনুমোদিত নবম ভ্যাকসিন হল এই স্পুটনিক। যার ব্যবহার কিন্তু সীমাবদ্ধ। শুধুমাত্র জরুরি ভিত্তিতেই ব্যবহার করা যাবে এই ভ্যাকসিন। তবে চিকিৎসকদের আশঙ্কা এর ফলে হয়তো বাজারে অকারণেই এই ভ্যাকসিনের বিক্রি বাড়বে। কারণ ভাঁড়ারে ভ্যাকসিন প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই থাকবে। এই ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া যেমন ট্যুইট করে জানিয়েছেন, অতিমারীকে রুখতে আরও জোরদার লড়াইয়ের জন্যই এই ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কই কিন্তু ইতিমধ্যে টিকা পেয়ে গিয়েছেন। ফলে এই নবম ভ্যাকসিন হল প্রয়োজন ছাড়াই অতিরিক্ত stockpiling.
ভারতের মহামারী বিশেষজ্ঞ এবং আইসিএমআর এনআইই-এর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ জয়প্রকাশ মুলিলের মতে-‘অতিরিক্ত ভ্যাকসিনের মজুদ থাকলে কোনও রকম সমস্যা নেই। কিন্তু ভ্যাকসিনের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ার জন্য এবার বুস্টারডোজ বাধ্যতামূলক হয়ে যেতে পারে, এমনই আশঙ্কা হচ্ছে আমার। সংক্রমণ রুখতে শরীরে টি-সেলের ভূমিকাই কিন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভ্যাকসিনের সংখ্যা বেশি হলে তখন জোর দেওয়া হবে এই বুস্টার ডোজেই’।
ন্যাশন্যাল ইন্সটিটিউট অফ ইমিউনোলজির বিজ্ঞানী চিকিৎসক বিনিতা বল যেমন বললেন, ‘ভ্যাকসিনের মজুদ বাড়ছে কিন্তু তাই বলে যাতে ভ্যাকসিনের অপচয় না হয় বা জোর করে বিক্রির প্রচেষ্টা না করা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। তবুও ভ্যাকসিনগুলির যথাযথ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দরকার। সেই সঙ্গে আমাদের হাতেও যে উপযুক্ত সব তথ্য রয়েছে এমনও কিন্তু নয়। যদি আশানুরূপ কোনও ফল পাওয়া যায় তবেই ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য এগিয়ে যান। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত তাড়াহুড়োর কিন্তু কোনও প্রয়োজন নেই। সময়মতো টিকা নিলেই চলবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে এখনও পর্যন্ত ভারতে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মোট ৭৭ শতাংশ কোভিডের টিকা পেয়ে গিয়েছেন। কোভিডের দুটো ডোজই পেয়ে গিয়েছেন ৯৫ শতাংশ। বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১, ৪১, ৫৭, ১২৬ জন। ১৫-১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ কোভিড টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। আর এই টিকার মধ্যে ৯৩ শতাংশেরও বেসি রয়েছে কোভিশিল্ড। বাকি ৫ শতাংশ পেয়েছেন কোভ্যাক্সিন।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশ অর্থাৎ ১৮ বছরের নীচে যারা রয়েছে তারা কিন্তু কোভিড টিকার একটাও ডোজ পায়নি এখনও পর্যন্ত। এই প্রসঙ্গে আইসিএমআরের তরফে চিকিৎসক সমীরকণ পাণ্ডা নিউজ ৯-কে জানান, ‘আমাদের দেশে টিকার যোগান যথেষ্ঠ পরিমাণে রয়েছে। যার ফলে টিকা পেতে কোনও সমস্যা হবে না। সেই সঙ্গে তিনি জানান, ১৫ বছরের নীচে যে সব শিশুরা রয়েছে তাদের জন্যই শীঘ্রই চালু করা হবে টিকাকরণ কর্মসূচী। তবে ভ্যাকসিন যত বেশি সংখ্যায় দেওয়া যাবে ততই কিন্তু ভাল। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভ্যাকসিন ছাড়া গতি নেই। যদিও কমছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। কোভিডকে কোনও অবস্থাতেই হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না। কারণ কোভিড ভাইরাস কিন্তু প্রায়শই তার মিউটেশন করে রূপ বদল করছে। ফলে ভাইরাসটিকে নিয়ে যেমন গবেষণা প্রয়োজন তেমনই কিন্তু টিকাকরণ কর্মসূচীও চালিয়ে যেতে হবে’।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।