International Men’s Day 2021: ‘পুরুষ’ গড়তে বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই পাশে থাকুন বাবা-মায়েরা! ভরসায় থাকুক আত্মবিশ্বাস-সচেতনতা

megha |

Nov 19, 2021 | 11:26 AM

ছেলেদের মধ্যে এই পরিবর্তনগুলি দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে। এটি জীবনের এমন একটি সময়, যখন তার মধ্যে বোঝার ক্ষমতা গড়ে ওঠে, ইচ্ছা জাগে আত্মপ্রকাশের।

International Mens Day 2021: পুরুষ গড়তে বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই পাশে থাকুন বাবা-মায়েরা! ভরসায় থাকুক আত্মবিশ্বাস-সচেতনতা
একটি কিশোর বয়সের ছেলেকে ধীরে ধীরে পুরুষে পরিণত করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে সমাজকে

Follow Us

আজ ১৯ নভেম্বর, বিশ্ব পুরুষ দিবস। পুরুষদের জন্যও ধার্য রয়েছে বছরে এই একটি দিন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একাধিক সুবিধা থাকলেও, মানসিক জায়গা থেকে ‘পুরুষ’ করে তোলার ভূমিকা পালন করে এই সমাজই। শিশু বয়স থেকে সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে নানাবিধ পরিবর্তন হয় শরীরে। তার মধ্যে কিছু থাকে মানসিক, কিছু শারীরিক আর কিছু আচরণগত। এই সব পরিবর্তনগুলো আদতে একে অপরের পরিপূরক। ছেলেদের মধ্যে এই পরিবর্তনগুলি দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে। এটি জীবনের এমন একটি সময়, যখন তার মধ্যে বোঝার ক্ষমতা গড়ে ওঠে, ইচ্ছা জাগে আত্মপ্রকাশের।

কিশোর বয়সের ছেলেদের লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে নানা কারণে সমস্যা তৈরি হয়। কখনও পড়াশোনা নিয়ে, কখনও বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে ইত্যাদি। পড়াশোনার চাপও কম-বেশি থাকে। এই সব জায়গা থেকে তাদের মধ্যে রাগ বা উদ্বেগ তৈরি হয়। বেশির ভাগ ছেলেরাই সেই রাগ বা উত্তেজনাকে নিজের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যার ফলে উচ্চস্বরে কথা বলে ফেলে, রেগে যায় এবং রেগে গিয়ে এমন কোনও কান্ড ঘটিয়ে বসে, যার জন্যে পরে সে নিজেই আক্ষেপ করতে থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সামলাবে সে নিজেকে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে TV9 বাংলাকে মনোবিদ প্রশান্ত কুমার রায় জানান, এই ধরনের ঘটনাগুলি ঘটে তিনটি শারীরিক পরিবর্তনের কারণে। প্রথম হরমোনের পরিবর্তন, দ্বিতীয় জ্ঞানীয় পরিবর্তন এবং তৃতীয় হল মানসিক পরিবর্তন। এই সময় রাগ, উত্তেজনা, উদ্বেগ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। তবে এগুলিকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর প্রতিকার হিসাবে প্রশান্ত বাবু জানিয়েছেন, ”কিশোরদের তাৎক্ষণিক কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। কিছুটা সময় নিক, ১০ মিনিট, ১ ঘণ্টা- তারপর সে বিবেচনা করুক আমি এই কাজটা করব কিনা। তার সঙ্গে রাগ হলে বা উদ্বেগ হলে কাজে আসতে পারে মিউজিক। সেই সময় সে সফট মিউজিক শুনতে পারে। এতে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।” এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন মনোবিদ সোমদ্যুতি রায়। তিনি জানিয়েছেন, “এই সময় সে ক্লে নিয়ে খেলতে পারে বা নিজের ইচ্ছামত জিনিস তৈরি করতে পারে। গান এখানে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। প্রয়োজনে সে গান শুনতে পারে। এতে ধীরে ধীরে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।”

এখানে আরেকটি বড় ভূমিকা পালন করতে হবে বাবা-মাকে। ১৩ বছর বয়স থেকেই একটু একটু করে বোঝার ক্ষমতা গড়ে ওঠে কিশোরদের মধ্যে। এই সময় থেকেই বাবা-মাকে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। ছোট ছোট বিষয়ে ছেলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। গুরুত্ব না থাকলেও তার মতামত নিতে হবে। এটি করলে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক ভাল থাকবে এবং বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যাগুলির সঙ্গে লড়াই করতে তারও সুবিধা হবে। এই থেরাপি সুফল আনবে আরও দুবছর পর, যখন সে স্কুলের গন্ডি পার করে কলেজে যাবে।

বয়সটা ১৭-১৮। ইতিমধ্যেই সে সমাজ সম্পর্কে অনেক ধারণাই লাভ করে নিয়েছে। এরই সঙ্গে তার মধ্যে তৈরি হয়েছে পিয়ার প্রেসার, কেরিয়ার সম্পর্কিত চাপ, যৌন অভিমুখতা ইত্যাদি। এই বয়সে অনেকেই সম লিঙ্গ বা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটি আকর্ষণ অনুভব করে। তবে তার আগেই যৌনতা সম্পর্কিত নানা বিধ প্রশ্ন ঘিরে ধরে কিশোর মনকে। এই কৌতূহলের বশেই সেই সব প্রশ্নের উত্তর সে নিজেই কোনও না কোনও ভাবে খুঁজে বার করে। তার মধ্যে থাকে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, আবার তৈরি হয় অনেক ভুল ধারণাও। এই বিষয়ে সচেতনতা নিয়ে মুখর সোমদ্যুতি।

তাঁর বক্তব্য, “যদি ১৪-১৫ বছর বয়স থেকেই সেক্স এডুকেশন দেওয়া যায়, তাহলে জীবনে পুরুষ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে সহযোগিতা পায় ওই ছেলেটি। এমন অনেক সময় হয়, যেখানে ১৭ বছর বয়সে এসে হঠাৎ একদিন সে স্বপ্নদোষের শিকার হল। সেই সময় সে বুঝতে পারে না তার সঙ্গে কী ঘটছে। এই বিষয় নিয়ে কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলবে সেটাও সে বুঝতে পারে না, যার ফলে ধীরে ধীরে মনের ভিতর একটা অপরাধ বোধ জন্মায়। এই একই ঘটনা ঘটে যখন সে বয়ঃসন্ধিকালে প্রথম হস্তমৈথুনের মুখোমুখি হয়। সেই সময় সে জানে না এই বিষয়টা তার জন্য ভাল না খারাপ। কিন্তু সে ক্রমাগত হস্তমৈথুন করতে থাকে এবং পর মুহূর্তেই নিজেকে অপরাধী মনে করে। এই ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়াকে প্রতিরোধ করতে পারবে বাবা-মা এবং শিক্ষক। এই যৌন শিক্ষাটা দিতে হবে ওই কিশোর বয়সেই।”

ঘুরে ফিরে আবারও চলে আসছে সামাজিক দায়দায়িত্বের কথা। একটি কিশোর বয়সের ছেলেকে ধীরে ধীরে পুরুষে পরিণত করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে সমাজকে। পুরুষদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলি নিয়ে খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করতে হবে। এই কাজটা শুরু করতে হবে কিশোর বয়স থেকেই। তবেই ‘পুরুষ’ হয়ে ওঠার পথে কোনও বাধা আসবে না ওই কিশোরের।

আরও পড়ুন: শিশুরাও আক্রান্ত হয় মৃগী রোগে! কীভাবে যত্ন নেবেন আপনার সন্তানের, পরামর্শ বিশিষ্ট চিকিত্‍সকের

Next Article