World Alzheimer’s Day: অ্যালঝাইমার সচেতনতা দিবসে 5 A কে চিনুন

TV9 Bangla Digital | Edited By: দীপ্তা দাস

Sep 21, 2021 | 4:47 PM

স্নান করা, জামাকাপড় পরা, জলের গ্লাস মুখে তুলে নেওয়ার মত ‘মামুলি’ কাজগুলোও কীভাবে করতে হয়, ভুলে বসে মস্তিস্ক। সামনের মানুষটার সঙ্গে কী কথা বলব! মাথা কোনও সংকেত পাঠায় না জিভ কে। শ্রবণ, ঘ্রান, স্পর্শ, দৃষ্টি, স্বাদ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের ওপর একটা পরতের মত প্রলেপ পড়ে বিস্মৃতির। যাকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে পারে না মানুষটা। অ্যালঝাইমার থেকে একমাত্র আক্রান্ত জীবনকে কিছুটা টেনে তুলতে পারে মানুষের যত্ন। আজ বিশ্ব অ্যালঝাইমার সচেতনতা দিবস।

World Alzheimer’s Day: অ্যালঝাইমার সচেতনতা দিবসে 5 A কে চিনুন
ছবিটি প্রতীকী

Follow Us

বয়স বাড়লে স্মৃতিরা সব হারিয়ে যায়। কিন্তু অ্যালঝাইমার এমন এক অসুখ যাতে চেনা মুখ গুলো অচেনা লাগতে লাগতে ভুলে যাওয়া কোনও এক মুখে পরিণত হয়। স্নান করা, জামাকাপড় পরা, জলের গ্লাস মুখে তুলে নেওয়ার মত ‘মামুলি’ কাজগুলোও কীভাবে করতে হয়, ভুলে বসে মস্তিস্ক। সামনের মানুষটার সঙ্গে কী কথা বলব! মাথা কোনও সংকেত পাঠায় না জিভ কে। শ্রবণ, ঘ্রান, স্পর্শ, দৃষ্টি, স্বাদ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের ওপর একটা পরতের মত প্রলেপ পড়ে বিস্মৃতির। যাকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে পারে না মানুষটা। অ্যালঝাইমার থেকে একমাত্র আক্রান্ত জীবনকে কিছুটা টেনে তুলতে পারে মানুষের যত্ন। আজ বিশ্ব অ্যালঝাইমার সচেতনতা দিবস। রেডিও জকি মীর আশরাফ আলি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তাঁর আব্বার কথা লিখেছেন। ডিমেনসিয়া আক্রান্ত মীর সুলতান আহমেদ তাঁর ব্যস্ত ছেলের কাছে সবচেয়ে দামি জিনিসটার আবদার করেছিলেন বছর পাঁচেক আগে, “একটু সময়”। একটি তথ্য বলছে অ্যালঝাইমার কিংবা ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত যত মানুষ এই মুহূর্তে আছেন এই পৃথিবীতে তাঁদের মধ্যে মাত্র ১০% এরও কম মানুষ প্রয়োজনীয় যত্ন বা কেয়ার পান।

এই মুহূর্তে ভারতে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ অ্যালঝাইমার আক্রান্ত। সারা দুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫ কোটি। ২০১৬ এ ডাঃ এস কে দাস একটি স্টাডিতে যে তথ্য সংগ্রহ করেন সেই তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে তখন অ্যালঝাইমার রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার যার মধ্যে ৪১ হাজার কলকাতাবাসী এই রোগে আক্রান্ত।

অ্যালঝাইমারে আক্রান্ত মানুষটির ব্যবহারিক জীবনের চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং সামাজিক গুন ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যালঝাইমার রোগাক্রান্তদের মধ্যে পাঁচটি মানসিক রোগের বা ডিজঅর্ডারের লক্ষণ দেখা যায়। অ্যামনিজ়িয়া, আফেজ়িয়া, অ্যাপ্রাক্সিয়া, অ্যাগনোসিয়া এবং অ্যানোমিক অ্যাফেজ়িয়া। তাঁরা সংক্ষেপে এই ৫টি রোগকে 5 As of Alzheimer’s Disease বলে চিহ্নিত করেছেন।

অ্যামনিজ়িয়া (Amnesia)- এক্ষেত্রে রোগী স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। যত সময় যায় কমতে থাকে স্মৃতির ভাঁড়ার। ধীরে ধীরে সমস্ত স্মৃতি লোপ পায়। চেনা মানুষ এমন কি সন্তান হয়ে পড়ে অপরিচিত। অ্যামনিজ়িয়া দুই ধরনের, রেট্রোগ্রেড অ্যামনিজ়িয়া (Retrograde Amnesia) এবং অ্যান্টিরেট্রোগ্রেড অ্যামনিজ়িয়া (Anterograde Amnesia)। অনেক আক্রান্ত মানুষ চোখের সামনে যা ঘটছে তাও মনে রাখতে পারেন না এই পরিস্থিতিতে।

আফেজ়িয়া (Aphasia)- আফেজ়িয়ায় আক্রান্ত মানুষদের কথা বলার ভীষণ সমস্যার হয়ে পড়ে। কী বলবেন, তার জন্য কোন কোন শব্দ প্রয়োজন, কীভাবে সেই শব্দ উচ্চারণ করবেন তা অনেক সময়ে বুঝতে না পেরে মানুষটি হয় ডুবে যান নৈশব্দের অতলে নয়ত এলোমেলো কথা বলতে শুরু করেন। প্রশ্নাতীত ভাবেই সেই কথা বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত। এক তীব্র কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন আক্রান্ত মানুষটি।

অ্যাপ্রাক্সিয়া (Apraxia)- স্বাভাবিক মোটর স্কিলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই পরিস্থিতিতে। যার ফলে জলের গ্লাস ধরে মুখ পর্যন্ত তুলে আনা, স্নান করা বা জামাকাপড় পরার মত সহজ কাজ গুলো হয়ে ওঠে দুরুহ, কষ্টকর। আর তাই ধীরে ধীরে রোগীর হাঁটা চলাও হয়ে যায় কম। আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে পড়ে যাবার ঝুঁকি বাড়ে। সারাক্ষণের দেখভালের লোক বা কেয়ার গিভার অত্যন্ত প্রয়োজন এই ধরনের মানুষদের জন্য।

অ্যাগনোসিয়া (Agnosia)- এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত ব্যাক্তি হয়ত কিছুটা ঠিকঠাক কথাবার্তা বলতে পারছেন কিন্ত অপর দিক থেকে তাঁকে যা বলা হচ্ছে তা বুঝতে পারেন না। অর্থাৎ তাঁর কমিউনিকেসন স্কিলের ক্ষেত্রে সিগনাল রিসিভ করতে অসুবিধা হয়। এর ফলে প্রায়শই দেখা যায় ওই ব্যক্তির শ্রবণশক্তি, ঘ্রানশক্তি, স্বাদ, স্পর্শের অনুভুতি এবং দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

অ্যানোমিক অ্যাফেজ়িয়া (Anomic Aphasia)- এই পরিস্থিতিতে অ্যাফেজ়িয়ার লক্ষণগুলো ছাড়াও মানসিক আঘাত পাওয়া বেড়ে যায় এবং কথা বলা প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। মস্তিস্কের বাঁ দিক আক্রান্ত হয়। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে মস্তিস্কের কোষগুলি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।

অ্যালঝাইমার এন্ড রিলেটেড ডিজরডারস সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার কলকাতা চ্যাপ্টারের সচিব এবং এআরডিএসআই এর জাতীয় কো-অরডিনেটর নীলাঞ্জনা মৌলিক বলছেন- আমরা সাধারণ মানুষ পরিকল্পনা করতে পারি। কিন্তু অ্যালঝাইমার আক্রান্তদের মস্তিস্কের ক্ষতির কারণে তাঁরা কোনও পরিকল্পনা করতে পারেন না। অ্যালঝাইমার এন্ড রিলেটেড ডিজরডারস সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার কলকাতা চ্যাপ্টারের ডে কেয়ার সেণ্টারে যারা থাকেন তাঁদের মধ্যে অনেকে ওই জায়গাটাকে তাঁদের প্রাক্তন কর্মস্থল বলে ভাবেন। যারা ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন তাঁরা ভাবেন তাঁরা রোজ ব্যাঙ্কে আসছেন। করোনা পরিস্থিতির লকডাউনে সকলে গৃহবন্দী হয়ে পড়ায় ওঁদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্য খুব ভেঙে পড়ে। সেক্ষেত্রে আমরা ভিডিও কলের মাধ্যমে কেয়ার গিভারদের সঙ্গে রোগীদের যোগাযোগ করাই। ওনাদের মধ্যে অনেকেরই মানুষকে চিনতে অসুবিধে হয়। তার ওপর মাস্ক পরিহিত কেয়ার গিভারদের দেখে অ্যালঝাইমার আক্রান্ত মানুষরা প্রশ্ন করতে থাকেন, “মুখে এটা কী পরে আছো? তোমাকে আরও অচেনা লাগছে”। কেয়ার গিভাররা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন এই অতিমারির সময়ে। অনেক অ্যালঝাইমার আক্রান্ত মানুষ করোনায় মারা গিয়েছেন সেই মুহূর্তে তাঁদের অনেকের সন্তানরাও বিদেশে ছিলেন। এই অবস্থায় কেয়ার গিভাররা ছাড়াও এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় মানুষজন। যাঁদের পাশে থাকা এই অতিমারি সময়েও অ্যালঝাইমার মোকাবিলাতে সাহায্য করেছে।

আজ এই ভুলে যাওয়া সরণীতে হাঁটতে থাকা মানুষদের পাশে থাকার উদ্যোগ নিয়েছে অ্যালঝাইমার এন্ড রিলেটেড ডিজরডারস সোসাইটি অব ইন্ডিয়া রবীন্দ্র সেতু রেঙে উঠেছে নীল রঙে। সমস্ত স্মৃতির সরণী পার করে ওঁরা যেন বলতে চাইছেন,“যদি জল আসে আঁখি পাতে, একদিন যদি খেলা থেমে যায় মধুরাতে, তবু মনে রেখো”। সেই বার্তা নিয়ে বয়ে চলেছে সেতুর অনেকটা নীচে গঙ্গার জল।

আরও পড়ুন: World Alzheimer’s Day: অ্যালজাইমারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি কী কী, জেনে রাখা সকলেরই উচিত!

আরও পড়ুন:  World Alzheimer’s Day: মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন এই খাদ্যগুলিকে!

Next Article