শরীরের কার্য সম্পাদনের জন্য সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন। এই পুষ্টির মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ও মিনারেল হল এমন দুটি উপাদান যা হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে সাহায্য করে। সেই ভিটামিন ও মিনারেল হল ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। এই দুটো উপাদানই হাড়কে মজবুত করে এবং বয়সের সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়কে রোধ করে। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি একইভাবে বা একই সঙ্গে কাজ করে। তাহলে আসুন জানা যাক ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর মৌলিক পার্থক্য সম্পর্কে।
ক্যালসিয়াম কী?
ক্যালসিয়াম এক প্রকার মিনারেল, যা হাড় তৈরি এবং মজবুত রাখার জন্য দায়ী। আমাদের শরীরের প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় এবং দাঁতে রয়েছে। প্রতিদিন আমরা আমাদের ত্বক, প্রস্রাব, ঘাম এবং মলের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামকে শরীর থেকে নির্গত করি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে আমাদের শরীর নিজে থেকে ক্যালসিয়াম উৎপাদন করতে পারে না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট খাবারের দ্বারাই আমরা আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদাকে পূরণ করি।
ক্যালসিয়ামের উৎস
আমাদের কাছে এমন কিছু খাদ্য রয়েছে যার দ্বারা শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। যেমন দুগ্ধজাত পণ্য হিসাবে দুধ, দই, চিস, ছানা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। বিশেষত এই খাবার গুলি শিশুদের বিকাশ এবং দাঁত ও হাড়ের জন্য খুব উপকারী। যেহেতু শিশু অবস্থায় তারা অন্য কোনও খাদ্যের দ্বারা ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারবে না তাই এই পণ্য গুলির মাধ্যমে তাদের শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হবে। সবুজ শাক সবজি যেমন পালং শাক, ব্রকোলি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাই এগুলিকে আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন। ড্ৰাই ফ্রুট এবং সামুদ্রিক খাবারও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। এছাড়াও তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
তাহলে, ভিটামিন ডি কী?
ভিটামিন ডি হল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যা আপনার হাড়ের স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য শরীর দ্বারা খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন। কিন্তু ভিটামিন ডি সূর্যের আলোর দ্বারা আমাদের শরীরে সংশ্লেষিত হয়। তবে কিছু খাবার এবং সাপ্লিমেন্ট রয়েছে যার দ্বারা আপনি শরীরে ভিটামিন ডি-এর চাহিদাকে পূরণ করতে পারেন। যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব হয়, তাহলে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামেরও অভাব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভিটামিন ডি-এর উৎস
ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হল সূর্যের আলো। এছাড়াও, ভিটামিন ডি কয়েকটি খাবারে পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে স্যামন, টুনা, দুধ, পনির, ডিম এবং সয়া দুধের মতো দুগ্ধজাত পণ্য। চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
মূলত, ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য একটি কাঠামোগত বিল্ডিং ব্লক হিসাবে কাজ করে, যেখানে ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণের সুবিধা প্রদান করে। ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিন অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমিক্স অনুসারে, একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৬০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত। উভয়ই শরীরের সমান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অতএব আপনি প্রতিদিন ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি উভয়ই পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করছেন কিনা তা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ব্রণর সমস্যা কেন দেখা যায় জানেন?