দেশজুড়ে আবার মাথাচাড়া দিল ‘নিপা ভাইরাসে’র সংক্রমণ। কোভিড-১৯ এর পরিবেশের সঙ্গে নিপা ভাইরাসও খাপ খাইয়ে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই কেরালা রাজ্যের কোঝিকোড় এবং মালাপ্পুরাম জেলার কিছু অংশে এই ভাইরাসের দেখা মিলেছে। নিপা ভাইরাসের আগমন নিয়ে চিন্তিত কেরালা সরকার। ১২ বছরের শিশুর মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়ার পর বেশ সতর্ক হয়ে উঠেছে কেরালা সরকার। ইতিমধ্যেই আরও দুজন স্বাস্থ্য কর্মীর দেহে পাওয়া গেছে এই ভাইরাসে হদিস। একদিকে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা, অন্যদিকে নিপা ভাইরাসের উৎপত্তি, কীভাবে মেনে চলবেন স্বাস্থ্য বিধি?
জুনটিক ভাইরাস হিসাবেও পরিচিত এই নিপা ভাইরাস বা এনআইভি প্রাণী থেকে মানুষ (বিশেষত বাদুড় বা শূকর) বা সংক্রামিত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রামিত হয়। এই ভাইরাস শূকর এবং অন্যান্য প্রাণীতেও গুরুতর রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মতে, মানুষ যদি এই বাদুড়ের প্রস্রাব বা লালা দ্বারা দূষিত খেজুর, পেয়ারা, আম এবং লিচুর মতো ফল গ্রহণ করে তবে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। হু-এর মতে সংক্রামিত প্রাণীর নিঃসৃতির সংস্পর্শে এলে মানুষের মধ্যে এই সংক্রমণ সঞ্চারিত হতে পারে।
কেরালা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “আমরা এখনও অবধি ১৮৮ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছেন। এদের মধ্যে ২০ জনকে হাই রিস্ক গ্রুপে চিহ্নিত করা হয়েছে, এদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা দুজনের মধ্যে ইতিমধ্যেই নিপা সংক্রমণের উপসর্গও দেখা দিয়েছে। ওনারা দুজনেই স্বাস্থ্যকর্মী। একজন বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী এবং আরেকজন কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কর্মী।”
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার প্রথম এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। মালয়েশিয়ায় শুয়োরের প্রতিপালনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। সেই সময় মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়। হু-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত নিপা ভাইরাসের কারণে পাঁচশোরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
১৯ মে, ২০১৮ সালে ভারতে প্রথম কেরালার কোঝিকোড় জেলায় নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তারপর থেকে ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু এবং ১৮ জনের নিশ্চিত কেস দাখিল করা হয়েছিল। পরে এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রিত হয় এবং ১০ জুন, ২০১৮ এর মধ্যে ঘোষণা এটি করা হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসে কোচি থেকে একটি নতুন মামলার খবর পাওয়া যায়। সেই সময় ২৩ বছর বয়সি একজন ছাত্রের মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। সর্বশেষ মামলাটি ভারতে পঞ্চমবার এবং কেরালায় তৃতীয়বার ভাইরাসটি সনাক্ত করেছে।
নিপা ভাইরাসে উপসর্গ
নিপা ভাইরাসে সেভাবে নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া এনসেফেলাইটিসের প্রকোপও দেখা দিতে পারে। সংক্রমিত হওয়ার ৪ থেকে ১৪ দিনের মাথায় এর লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়।
চিকিৎসা
নিপা ভাইরাসের সঠিক চিকিৎসা এখনও আবিষ্কার হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই ভাইরাসের কোনও টিকাও আবিষ্কার হয়নি। এর একমাত্র উপায় হল শরীরকে সব সময় হাইড্রেট রাখা। এই নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে পশু-পাখির উচ্ছিষ্ট ফল খাবেন না। বিশেষ করে যে সব এলাকায় এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: এই আয়ুর্বেদের উপায়গুলি গ্রহণ করুন আর হৃদ রোগের ঝুঁকি কমান!