সুনামির মতোই আছড়ে পড়ছে ওমিক্রন। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন কোভিডে। একদিনের মধ্যেই আক্রান্তের সংক্যাটা প্রায় তিনগুণ হয়ে যাচ্ছে। সংক্রমণের হারে কলকাতায় প্রতি ১০০ জনের করোনা পরীক্ষায় প্রায় ৪৫ জনেরই রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বৃহস্পতিবারের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ হাজার ৯২৮ জন। যা বুধবারের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি। বুধবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৯৭। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে মৃত্যুহার।
ওমিক্রনের রোগ-লক্ষণ এখনও পর্যন্ত বিশেষ জটিল নয়। সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া এসবই। সাধারণ ফ্লু এর মতই ক্লান্তি, মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা সর্দি এই সব উপসর্গই থাকছে। যে কারণেই কিন্তু সকলে সাধারণ ফ্লু আর ওমিক্রনের উপসর্গগুলি গুলিয়ে ফেলছেন। ওমিক্রনে এবারে মানুষ খুব বেশি যে কাহিল হয়ে পড়ছে তেমন নয়, কিন্তু শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত কোনও সমস্যা নেই। বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। আর সেখানেই বলা হয়েছে ওমিক্রনকে একেবারেই হালকা ভাবে না নিতে।
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ওমিক্রনের চারটি সাধারণ লক্ষণ হল- কাশি, সর্দি, নাক দিয়ে অনবরত জল পড়া এবং পেশির ব্যথা। আবার সেখানকার Zoe Covid অ্যাপে উঠে এসেছে কিছু মানুষের মধ্যে বমি ভাব, খিদে মন্দা বা খেলেই গা গোলানো এরকম কিছু সমস্যাও রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভাইরাসের হদিশ মিললেও পরবর্তী সময়ে তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই ওমিক্রনের সংক্রমণ ভয়াবহ। আমেরিকা, ইংল্যান্ডেও ওমিক্রনের পরিস্থিতি খারাপের দিকে। এখনও পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এরকম খবর কিন্তু পাওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মারিয়া ভ্যান কেরখোভ একটি ট্যুইটের মাধ্যমে জানিয়েছেন, ওমিক্রন কিন্তু সাধারণ সর্দি নয়।
বেশ কিছু রিপোর্ট বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, যাঁরা ডেল্টা আর ওমিক্রনের জোড়া ফলায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের মধ্যে সমস্যা সবচাইতে বেশি। এবং সেখান থেকে কিন্তু বেশ কিছুজনের মৃত্যুও হয়েছে। আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে ১ জন। তবে যাঁরা এই জোড়া ফলায় সংক্রমিত এবং মৃত্যু হয়েছে তাঁদের কারোরই কিন্তু কোভিডের কোনও টিকা নেওয়া ছিল না। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলছেন, সমস্যা হলেই কোভিড পরীক্ষা করান। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কোভিডের ঢেউ যে ভাবে আসছে তাতে যে কোনও দিন হতে পারে বড়সর বিপত্তি। আরও বেশ কিছু রিপোর্ট হাতে এসেছে চিকিৎসকদের। সেখানেই তাঁরা দেখেছেন শ্বাসযন্ত্রের উপরের দিকে প্রভাব ফেলছে ওমিক্রন। যে খান থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া। তবে সংক্রমণ যে ভাবে বাড়ছে তাতে ওমিক্রনের রূপ পদলে আরও জটিল কোনও ভ্যারিয়েন্টের সম্ভাবনাও রয়েছে। যা হতে পারে প্রাণনাশী।
ইতিমধ্যেই ফ্রান্সে খোঁজ মিলেছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট IHU. নতুন এই ভ্যারিয়েন্টি এখনও পর্যন্ত ৪৬ বার মিউটেশন হয়েছে এবং সেই ভ্যারিয়েন্টে ১২ জন আক্রান্তও হয়েছেন। যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁরাও কিন্তু নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন।