Bangla NewsHealth On this world autism awareness day know the 10 signs of autism which would help to fight this disease
World Autism Day: বিশ্ব অটিজ়ম সচেতনতা দিবস: অটিজ়মের লড়াইয়ের জন্য জানুন এই রোগের ১০টি লক্ষণ
World Autism Day: আপনার সন্তানের কি অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার আছে? চিনে নিন এই ১০টি লক্ষণ। এরাই জানতে আর চিনতে সাহায্য করবে অটিজ়মকে।
Follow Us
অটিজ়ম একটি মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা যার শুরুয়াত হয় শিশুর জিনের গঠনগত অস্বাভাবিকতা থেকে। আজ সারা দুনিয়া পালন করছে ওয়ার্ল্ড অটিজ়ম অ্যাওয়ারনেস ডে। চলুন আজ জেনে নিই অটিজ়মকে। প্রথমেই এই রোগ সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারনা ও প্রকৃত ঘটনা দেখে নেব।
অটিজ়মকে জানুন: অটিজম বিষয়ক তথ্য
১. প্রতি ৭০ থেকে ৮০ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের অটিজ়ম হয়। প্রতিদিন রোগ নির্ণয়ের সংখ্যা বাড়ছে। তাই জনপ্রতি অটিস্টিক মানুষের সংখ্যার হেরফের হচ্ছে। কখনও ওই সংখ্যা প্রতি ৫০ জনেও ১ জন হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে প্রতি ৭০ জনে ১ জন অটিস্টিক।
২. ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে অটিজ়মের অনুপাত ৩:১
৩. একজন মা সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন তাঁর সন্তান অন্যরকম
৪. সন্দেহ হলেই গুরুত্ব দিন। সন্তানকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কাছে নিয়ে যান। তাঁরা সহজেই অটিজ়ম নির্ণয় করবেন।
৫. চাইল্ডহুড ডিপ্রেশন,অ্যাটাচমেন্ট ডিজ়অর্ডার, সিলেক্টিভ মিউটিজ়ম, অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম, বধিরতা কিংবা দৃষ্টির সমস্যায় শিশু কথা কম বলে বা পড়াশুনোয় পিছিয়ে পড়ে। এগুলোর লক্ষণ অটিজ়মের মতো হলেও অটিজ়ম নয়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, “কোনও শিশুর ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি অটিজ়মকে চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করতে পারা যায়, ভবিষ্যতে তার জীবনযাপন ও আউটকাম ততই সহজ এবং সুগম হবে।”
আপনার সন্তানের কি অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার আছে? চিনে নিন এই ১০টি লক্ষণ। এরাই জানতে আর চিনতে সাহায্য করবে অটিজ়মকে।
১. বয়স অনুযায়ী ঠিকঠাক কথার বিকাশ ঘটে না।
২. শিশু কানে শুনতে পাচ্ছে অথচ কথা বলছে না।
৩. চোখে চোখ রেখে কথা বলে না।
৪. আড় চোখে তাকায়।
৫. ডাকলে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।
৬. একই খেলা বারবার খেলে।
৭. পাখা, গাড়ির চাকার মতো গোল ঘুরন্ত জিনিস একদৃষ্টে দেখে।
৮. খুশি হলে হাত-পা ঝাঁকায়।
৯. পায়ের পাতা না ফেলে বুড়ো আঙুলের ওপর ভর দিয়ে হাঁটে।
১০. অন্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা করে না।
*শুধুমাত্র তথ্যের জন্য লিখিত। অসুবিধা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়রঞ্জন রামের ক্লিনিকে প্রতিদিন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসছে রোগী। ডাঃ রাম অটিজ়মের মোকাবিলায় শিশু বিশেষজ্ঞ ও আমাদের রাজ্যে বাবা-মায়েরা একজোট হয়ে যে লড়াইটা করছেন, তাকে কুর্নিশ করছেন। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, “অটিজ়মকে জেনে প্রথম বাধাটা পার করা গিয়েছে। এখনও বাকি অনেকটা পথ চলা। সচেতনতা, এই স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার মোকাবিলায় একটা বড় হাতিয়ার।”
তবে এই বাংলাতেও রয়েছেন এমন অনেক দম্পতি যাঁদের সন্তানের অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার কারণ হয়েছে তাঁদের বিবাহ-বিচ্ছেদের। অনেকে আবার বেছে নিয়েছন সিঙ্গল পেরেন্টিং-এর পথ। আসলে আমাদের সামাজিক জড়তার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাবা-মা তাঁদের সন্তানের অসুস্থতা গোপন করে যান।
আবার অনেকেই লড়েছেন সন্তানদের জন্য। সন্তানদের নিয়ে একদম সামনে থেকে। যেমন শুভ্রনীল দাসের মা ডাঃ জ্যোতিশুভ্রা দাস। শুভ্রনীলের বয়স এখন ১৯। ওকে আজও বুঝিয়ে দিতে হয় সারা দিনে ওর জীবনে কী-কী ঘটতে চলেছে। ওর বয়স যখন আড়াই তখন ধরা পড়ে অটিজ়ম। ছোট্ট ছেলে মনের ভাব আর আবেগ ব্যক্ত করত রবীন্দ্রসঙ্গীতের অক্ষরের মাধ্যমে। “রোলের দোকান তখনও খোলেনি। দোকানদার জিনিসপত্র গোছাচ্ছে দোকান খুলবে বলে, এ দিকে ছেলে অধৈর্য। গলা ছেড়ে গান গাইতে লাগল ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো-আগুন জ্বালো’। তখন আমরা জানতাম না অটিজ়ম কী? সেই শুরু হল আমার শেখা,” বলছিলেন ডাঃ জ্যোতিশুভ্রা। একমনে তখন ছবি আঁকছিল শুভ্রনীল। ওর আঁকা অটিস্টিক আর্ট ছবি আঁকার নতুন একটা ধারা তৈরি করেছে। দেশে আর বিদেশের বেশ কিছু প্রদর্শনীতে প্রশংসিত হয়েছে সেই ছবি।
অটিস্টিক বিনায়ক রুকু তার অধ্যাপক বাবা রণেনবাবু আর মা সুমনদেবীর সঙ্গে থাকে রিষড়ায়। রুকু ছবি আঁকে কবিতা লেখে। কবিতায় ঝিঁ-ঝিঁ পোকাদের ব্যথা সারায়, ঝিঁ-ঝিঁ পোকার ডাক্তার হব—বলে রুকু। ছবিতে আঁকে গ্যালাক্সির বিস্ময়। গ্যালাক্সিটা ওর কাছে ছানার পায়েস হয়ে ধরা দেয়। ওর লেখা আর ছবির দু’টি বই ‘রুকুর ডায়েরি’ আর ‘রুকুর গ্যালাক্সি’ প্রকাশিত হয়েছে। এবারের বইমেলায় সই বিলিয়ে দেদার খুশি যুবক রুকু ভট্টাচার্য (১৯)। ওর বাবা আর মায়ের অক্লান্ত লড়াই আজ এনেছে তাঁদের ছেলের এই সাফল্য। ওঁরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়া এখন একটা বড় হাতিয়ার। যেখানেই যেভাবে সুযোগ পান, অটিজ়মের কথা বলেন সুমন। তা সেটা ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর সেটই হোক কি পাড়ার সরস্বতী পুজোর মঞ্চ। রুকুর মতো মানুষদের কথা আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সুমন চাইছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে।
অটিজ়মকে বিষয় করে বিশ্ব জুড়ে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু সিনেমা আর ওয়েব সিরিজ়। তবুও প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই কম। দরকার আরও বেশি জন-সচেতনতার। আর প্রয়োজন মনোরোগ এবং প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সমাজের মূল ধারার সহমর্মিতা।