ডায়াবেটিস (Diabetes) রোগের বিস্তার নিয়ে ভারত হল বিশ্বে সবার শীর্ষে। রোগের প্রকোপ ক্রমাগত যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে ২০২০ সালে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (IDF) সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বে ৪৬৩ মিলিয়ন লোকের ডায়াবেটিস এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ৮৮ মিলিয়ন লোকের ডায়াবেটিস রয়েছে। এই ৮৮ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৭৭ মিলিয়নই হল ভারতের। তার অর্থ হলে দেশে ৫৮ কোটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এতে যদিও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ দেশের প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন এই রোগে আক্রান্ত।
অধিকাংশ জানেনই না যে গ্লুকোজের মাত্রা (Sugar Levels) বেড়ে গেলে কার কাছে যেতে হবে? বিজয়ওয়াড়ার মনিপাল হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ড. গিরিধর আদাপা এই বিষয়েই কিছু কথা জানিয়েছেন নিউজ৯-কে।
আপনার ডায়াবেটিস থাকলে কার সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত?
– শরীরে যখন একবার ধরা পড়ে যে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি, তখন একজন সাধারন চিকিত্সক বা এন্ডোক্রিনোলজিস্টের কাছে যাওয়া আবশ্যক। এর কারণ হল শুধুমাত্র একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান বা একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এই ধরনের রোগীর চিকিৎসা করতে পারবেন। একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট তার এই নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসায় ।”
আপনি কেন ডায়াটিশিয়ানের কাছে যাবেন?
– অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন ডায়াটিশিয়ানের প্রয়োজন। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। আজীবনের সঙ্গী। সাধারণ রোগ হলেও একটু এদিক ওদিক হলেই তা অত্যন্ত জটিল রোগে পরিণত হতে পারে। একজন ডায়েটিশিয়ান ঠিক করতে পারেন না যে রোগী কী ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাইপ ১ নাকি টাইপ ২। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথম ধাপ হল সঠিক রোগ নির্ণয়। শুধুমাত্র এর পরেই আপনি পরের ধাপে যেতে পারবেন। আর পরের ধাপ হল, রোগের টাইপ অনুসারে ওষুধ নির্ধারণ করা, জীবনধারার খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন করা।
কীভাবে একজন ডায়েটিশিয়ানের থেকে একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্টকে আলাদা করবেন?
– সাধারণত একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সঠিক ডায়েটের পরামর্শ দেন। কখনও কখনও হাসপাতালের একজন ইন-হাউস ডায়েটিশিয়ান থাকে যিনি একসঙ্গে একটি ডায়েট চার্ট নিয়ে আসেন। তিনিই বোঝেন রোগীর জন্য সেই ডায়েট চার্ট উপযুক্ত কিনা। সেই ডায়েটে অবশ্যই চিনি নেই ও কম কার্বস-যুক্ত খাবারকেই প্রাধান্য দেবেন। খাবারে বিশাল পরিবর্তন করার দরকার পড়ে না। এমনকি সাদা চাল সেদ্ধ খাওয়া থেকে ব্রাউন রাইস খাওয়ার মত অকটি ছোট পরিবর্তনও শর্করার মাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারে। যখন দেখা যায় রোগী কোনও ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন না, তখন সেই রোগীর ডায়েটে গম ছড়া অন্য বিকল্পের কিছু যোগ করা হয়। যেমন রাগি, বাজরা, জোওয়ারের তৈরি রুটি খেতে পারেন।
একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট রোগীর জীবনযাত্রার দিকে তাকিয়ে একটি ডায়েটের পরামর্শ দেবেন। রোগী কি অবসরপ্রাপ্ত নাকি কর্মরত? এর জন্য ডায়েটে চাই সামান্য পরিবর্তন । তবে এমন রোগী আছেন যারা খুব বেশি গ্লুকোজের মাত্রাযুক্ত হোন। এঁদের কমপক্ষে তিন মাসের জন্য কঠিন ডায়েট অনুসরণ করতে হবে। একবার গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে, ডায়েট পরিবর্তন এবং ওষুধের মাধ্যমে স্বাভাবিক খাদ্যে ফিরে আসতে পারেন।