কোভিড ঝড়ে কাঁপছে বিশ্ব। প্রতিদিন অগুণতি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসের কবলে। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এমনকী বাদ পড়ছেনা শিশুরাও। ওমিক্রন নিয়ে প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু তথ্য উঠে আসছে গবেষণায়। ভারতীয় বংশশোদ্ভূত গবেষকদের নেতৃত্বে একটি পরীক্ষা চালানো হয় ব্রিটেনে। আর সেই গবেষণাতেই বলা হয় যাঁরা সর্দি-কাশি-ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সাধারণ ঠান্ডা লাগার সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের কিন্তু SARS-COV-2-তে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম। কারণ যাঁরা সাধারণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তাঁদের শরীরে টি-কোশের সংখ্যা বেশি থাকে। যে কারণেই তা কোভিডের বিরুদ্ধে জেরদার প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
সম্প্রতি নেচার কমিউনিকেশনস থেকে প্রকাশিত একটি জার্নালে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক ঠাণ্ডা-সর্দি থেকে সেরে ওঠার পর যাদের শরীরে নির্দিষ্ট কিছু টি কোশ তৈরি হয়েছে তাই কিন্তু সুরক্ষা বলয় হিসেবে কাজ করে। যে কারণে তাদের কোভিড হওয়ার ঝুঁকি কম। যদিও এর আগে কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছিল করোনাভাইরাসের অন্যান্য টি-সেলগুলো এই কোভিডের টি-সেলকেও চিনতে পারে। ফলে তখন কোভিডের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এই গবেষণা চালানো হয়েছে একেবারেই ছোট পরিসরে। মোট ৫২ জনের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছে, যারা কোনো কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন কিন্তু নিজেরা আক্রান্ত হননি।
গবেষকেরা বলছেন, জ্বর-সর্দি থেকে পাওয়া সুরক্ষা যদি সত্যিই কোভিডে কার্যকর হয়, তারপরও শুধু এর ওপর নির্ভর করার কথা ভাবা ঠিক হবে না; এখন পর্যন্ত টিকাই এক্ষেত্রে কিছুটা নির্ভরযোগ্য উপায়। এবং যা ওমিক্রন সহ- পরবর্তী কোভিড ভ্যারিয়েন্টকেও রুখে দিতে সক্ষম। টি কোশের স্পাইক প্রোটিনই এই ভাইরাসকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। স্পাইন প্রোটিন থেকেই ভাইরাস রুখে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয় শরীরে। এই অ্যান্টিবডিগুলোই আমাদের কোভিড থেকে রক্ষা করে- বললেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের রেসপিরেটরি ইনফেকশন হেলথ প্রোটেকশন রিসার্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক অজিত লালভানি। বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও অনেক বেশি বাড়বে বলা তিনি জানিয়েছেন।
এই সমীক্ষাটি লন্ডনে চালানো হয়েছিল ২০২০-এর সেপ্টেম্বরে। তখন অধিকাংশ মানুষেরই টিকা ছিল না। সেই সঙ্গে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যাও ছিল বেশি। ওই পরীক্ষাতেই দেখা যায় যাদের মধ্যে রোগ লক্ষণ ছিল, যাঁরা কোভিড আক্রান্তের সঙ্গে একঘরে থেকেছেন কিন্তু তাঁদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় কোনও সংক্রমণ ধরা পড়েনি। এমনকী আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার প্রথম ৪ দিন পর এবং আবারও ৭ দিন পর তাঁদের পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু পজিটিভ রিপোর্ট আসেনি।
গবেষণা বিষয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজের হার্ট অ্যান্ড লাংস ইন্সিটিউটের তরফে রিয়া কুন্ডু যেমন বলেন, ‘কেন সব সময় ‘SARS-CoV-2’ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলেই সংক্রমণ হয় না সে বিষয়ে আমরা একাধিক গবেষণা চালিয়েছি। সেখানেই দেখা গিয়েছে সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় সংক্রমিত হলে আমাদের শরীরে আগে থেকেই যে টি-কোশ থাকে তাই আমাদের রক্ষা করে। এটি এক ধরনের সুরক্ষা। তবে শুধুমাত্র এর ভরসায় থাকলে কিন্তু চলবে না। টিকার সম্পূর্ণ ডোজ সবাইকে নিতেই হবে। এমনকী বুস্টার ডোজও খুব গুরুত্বপূর্ণ’।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।