কোভিডের নয়া স্ট্রেন ওমিক্রন যে ডেল্টার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি সংক্রামক তা আগেই প্রমাণিত। সুনামির আকারে আছড়ে পড়েছে ওমিক্রন। রোগ লক্ষণ এখনও পর্যন্ত সামান্য হলেও এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে অনেক তথ্যই অজানা। দিন চারেক আগে একটি নির্দেশিকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ওমিক্রনকে কোনও ভাবেই হেলাফেলা করবেন না।
নভেম্বর মাসের একেবারে শেষের দিকে ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মেলে ওমিক্রন আক্রান্তের। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে রিপোর্ট করে দক্ষিণ আফ্রিকা। WHO-(বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) ২৬ নভেম্বর নতুন এই ভ্যারিয়েন্টকে কোভিডের ভ্যারিয়েন্ট হিসেবেই উল্লেখ করে। তারপর প্রায় ৪ সপ্তাহের মধ্যেই বিশ্বের ৫৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই নয়া ভ্যারিয়েন্ট। ওমিক্রন এতটাই সংক্রামক যে একদিনের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমের দেশগুলিতেই ওমিক্রনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
সম্প্রতি ইউরোপের পাস্তুর এবং ভ্যাকসিন গবেষণা ইন্সটিটিউটের সমীক্ষায় উঠে এসেছে নতুন একটি তথ্য। বিজ্ঞানীরা নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কোভিডের দুটো টিকা পেয়েছেন এমন ব্যক্তিদেরই বেছে নেন। সেখানে এমন কিছু জনও ছিলেন যাঁরা সদ্য ওমিক্রনে আক্রান্তও হয়েছেন। সেখানেই তাঁরা দেখেন ভাইরাসের আক্রমনে অ্যান্টিবডির মধ্যেকার প্রোটিনের পরিবর্তন হয়েছে। সেই সঙ্গে কোভিড ভ্যাকসিনের প্রভাবে শরীরে যে সমস্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল মনোক্লোনাল পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ছটি অ্যান্টিবডির অ্যান্টিভাইরাল কার্যকলাপ হারিয়ে গিয়েছে কিন্তু তিনটি অ্যান্টিবডি ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রন আটকাতে ৩ থেকে ৮০ গুণ কার্যকর ছিল।
এক বছর আগে যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকী দুটো টিকা নেবার পর যাঁরা কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদেরও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে যাঁরা ছ মাস আগে কোভিডের দুটো টিকা পেয়েছেন এবং মাত্র এক মাস আগে বুস্টার ডোজ পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে ওমিক্রন প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। কোশ কালচার করে দেখা গিয়েছে ওমিক্রন প্রতিরোধ করতে আরও ৩১ গুণ বেশি অ্যান্টিবডির প্রয়োজন। যে কারণে বুস্টার ডোজ দেওয়ার উপর এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একমাত্র ভ্যাকসিনই পারে সংক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে।
তবে ওমিক্রন আক্রান্তদের জিনোম পরীক্ষার পর বিজ্ঞানীজের দাবি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে আরও বিশদে কিন্তু গবেষণার প্রয়োজন। বুস্টার ডোজও কতটা দীর্ঘমেয়াদি সেই বিষয়ে আরও তথ্য প্রয়োজন গবেষকদেরও। তবে স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনই অ্যান্টিববডির কার্যকারিতা কমিয়ে দিয়েছে একথা অনেকেই বলেছেন। ওমিক্রন আরও কতখানি সংক্রমণ ছড়াতে পারে সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই গবেষণা শুরু হয়েছে।