বিশ্বজুড়েই বাড়ছে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা। মারণ এই রোগের জন্য যেমন আমাদের জিন দায়ী তেমনই কিন্তু দায়ী প্রতিদিনকার অভ্যাসও। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আজকাল অনেক রোগ-সমস্যাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। খাওয়ার অভ্যাসেও এসেছে বদল। কাজের সুবিধার্থে অনেকেই এখন বাড়ির তৈরি রান্নার পরিবর্তে চটজলজদি স্যান্ডউইচ, বার্গারে কামড় বসাচ্ছেন। এছাড়াও চিপস, কেক, পেস্ট্রি সবই চলছে দেদার তালে। ইদানিং কালে খাবারে ভেজালের পরিমাণ বেশি। আর এসবই কিন্তু প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে।
বর্তমানের বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের তুলনায় পশ্চিমের দেশগুলিতে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন তাদের খাদ্যাভ্যাসের কথা। সেখানকার মানুষরা উদ্ভিজ প্রোটিন খুবই কম খান। প্রাণীজ প্রোটিন এবং প্যাকেট ফুডের উপরই অধিক নির্ভরশীল। এসবের জন্যই বাড়ে ক্যানসারের সম্ভাবনা। এছাড়াও ভারতীয়দের ত্বকে মেলানিনের প্রভাবের জন্য সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি তেমন ক্ষতি করতে পারে না। ভারতীয়রা কেন পশ্চিমের দেশগুলোর তুলনায় কম ক্যানসারে আক্রান্ত হন, সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রথমেই ধন্যবাদ দেন ভারতের পূর্বপুরুষদের। কারণ ভারতীয় রান্নায় যে সব মশলা ব্যবহার করা হয় তার ওষধি গুণ অনেক। এসব কারণের জন্যই কিন্তু ভারতীয়দের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা অনেক বেশি।
ভারতে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা কেন কম, এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লন্ডনের চিকিৎসক মাইকেল হার্শেল গ্রেগার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পয়েন্টস তুলে ধরেছেন। সেখানেই তিনি বলেন, ভারতীয়রা প্রায় সব রান্নাতেই হলুদ ব্যবহার করেন। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন যৌগটিই ক্যানসার প্রতিরোধ করে। যে কারণে ভারতে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা কম। পশ্চিম বিশ্বেরও এমন কিছু অঞ্চল আছে যেখানে হলুদ বেশি খাওয়া হয়। সেই সব জায়গাতে আবার ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা তুলনায় কম। এমনকী বিদেশে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্তের হারও ভারতের তুলনায় প্রায় ২৩ গুণ।
এমনকী এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার, মূত্রাশয় ক্যানসার, স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক বেশি সে দেশে। এবিষয়ে গ্রেগার আরও বলেন, উদ্ভিজ প্রোটিন মার্কিন মুলুকে কেউই তেমন প্রায় খায় না। সকলেই ভরসা করে প্রাণীজ প্রোটিনের উপরেই। সেই সঙ্গে প্যাকেট ফুডও অনেক বেশি খান। আর এসব কারণেই কিন্তু সে দেশে ক্যানসার আক্রান্তের হার অনেকটাই বেশি।
আরও বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিদিন ১০০- ২০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কিউকারমিন খাওয়া খুব ভাল। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়াও ভারতীয় মশলার আরও অনেক গুণাগুণ রয়েছে। প্রাচীনকালে এই সব মশলা থেকেই কিন্তু ওষুধ তৈরি হত।
দারুচিনি এমন একটি মশলা যা প্রায় সল রান্নাতেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গরম মশলা থেকে চা সবেতেই দেওয়া হয় দারুচিনি। এছাড়া খুব ভালো ঔষধী হিসেবেও পরিচিত দারুচিনি। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যা ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস এমনকী ক্যান্সারের মতন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে।
মশলা ও ওষুধ হিসেবে গোলমরিচ ব্যবহার করা হয়। গোলমরিচ হল সব থেকে উপকারী মশলা। এটি ডায়রিয়া, হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে দাঁতের অসুখ অ্যানিমিয়া এমনকি সর্দি-কাশিতেও উপকারী। গোলমরিচের মধ্যে পিপারিন নামক উপাদান থাকে, সেই জন্যই এটি ঝাঁঝালো স্বাদের হয়। যা হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও ওজন কমানোয় ভূমিকা রয়েছে দারুচিনির।
চা থেকে রান্না এলাচ সর্বত্র জনপ্রিয়। এছাড়াও মিষ্টি থেকে পায়েস ব্যবহার হয় এলাচের। শুধু আমাদের দেশেই নয় ভুটান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার মত দেশগুলিতে বেশি করে চাষ হয় এলাচের। সাধারণত সবুজ এলাচই সব থেকে বেশী প্রচলিত ও রান্নায় এই সবুজ এলাচ বেশি ব্যবহার করা হয়। ভারতবর্ষে এই সবুজ এলাচের চাষ হয়ে থাকে ও মালেশিয়ার মত দেশে এই এলাচ ভারত থেকে পাঠানো হয়। সবুজ এলাচ আপনি নানারকমের মিষ্টি অথবা নোনতা স্বাদের খাদ্যে ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন: Diabetes: বারবার এই তিন সংক্রমণ ঘুরে ফিরে আসছে শরীরে ? হতে পারে আপনি হাই ব্লাডসুগারে ভুগছেন!