বাংলায় একটি প্রবাদ অতি প্রচলিত, ‘সুস্থ জীবনকে ব্যস্ত করে তোলা’। তার রেশ ধরেই যেন বলা যায়, ব্যস্ত জীবনে আমরা নিজেরাই অনেক সময় জেনে কিংবা অজান্তে বিপদ ডেকে আনি। সময়ের অভাব, কিছুক্ষেত্রে নিরুত্তাপ থাকা কিংবা ‘আলসেমি’! এর ফলে এমন কিছু খাবার কিনে খাই, যা সহজেই পাওয়া যায়। অনেকটা সময়ও বেঁচে যায়। পকেটের জন্যও ‘স্বাস্থ্যকর’! কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য এই সমস্ত খাবার কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে হয়তো ভেবেই দেখি না। সমীক্ষা বলছে, আমাদের দেশে ১০ কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। প্রতি বছর সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ফ্যাক্টরিজাত এই সমস্ত খাবার। খেতে সুস্বাদু, সহজেই পাওয়া যায় বলে অনেকের ব্যস্ত জীবনে হয়তো একটু সময় বাঁচে। কিন্তু স্বাস্থ্যের বড় ক্ষতি হয়। এই সমস্ত খাবারে ক্যালোরির মাত্রা অনেক বেশি রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ফাইবার, ভিটামিন এবং নিউট্রিশন নেই। যার ফল ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সার্বিক ভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হিমসিম খেতে হচ্ছে এই কারণেও।
কোন খাবারে বিপদের এই সম্ভাবনা বেশি?
এই সমস্ত খাবারে ডায়াবেটিসের ভয় কেন? এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ICMR-এর সমীক্ষায় ধরা পড়েছে ওজন বৃদ্ধি, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (যেমন গলা-বুক জ্বালা করা), ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষতা কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সমস্ত খাবারের পারদর্শীতা প্রশ্নাতীত। ইনসুলিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়লে রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায়, শরীরের বিভিন্ন কোষ কাজ করা বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে।
এই সমস্ত খাবারে অ্যাডভান্স গ্লিকেশন এন্ড-প্রোডাক্ট থাকায় দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ যেমন হতে পারে, শরীরের মেটাবলিক প্রক্রিয়াতেও ব্যাঘাত ঘটায়। ওজন, মেদ বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে প্রবেশ করলেও তার সঙ্গে সামঞ্জস্য অনুযায়ী ফাইবার-প্রোটিন না থাকায় বড়রকমের ক্ষতি হয়।
শরীরে এই ক্ষতি এড়ানোর উপায়?
খুব সহজে বললে, এই সমস্ত খাবার নিজের দৈনন্দিন জীবন থেকে সরিয়ে ফেলতে না পারলেও যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলা। ফল, শাকসব্জি, শস্যজাত খাবার, বিভিন্ন ডালের পরিমাণ বাড়ানো। কারণ, এই সমস্ত খাবারে যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে তেমনই সার্বিকভাবে মেটাবলিজম ঠিক রাখে। আরও একটা উপায়, যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা। একান্তই যদি উপায় না থাকে, প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময় দেখে নিতে হবে, তাতে কী কী সরঞ্জাম রয়েছে। যে সমস্ত খাবারে শরীরের ক্ষতি হতে পারে, সেগুলি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।