ডায়াবেটিস সাধারণত তিন প্রকার, টাইপ ১, টাইপ ২ ও গ্যাস্টাশনাল ডায়াবেটিস। সাধারণত টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে কিছু বাজে অভ্যাসের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। যে যে বদভ্যাসগুলি চিহ্নিত করলে বোঝা যাবে আপনি ডায়াবেটিসের শিকার হতে চলেছেন, সেগুলি জেনে নিন এখানে…
উচ্চ রক্তচাপ
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হল উচ্চ রক্তচাপ। গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে, প্রবীণদের মধ্যে এই অসুখের প্রবণাতা বেশি থাকে। ব্লাড প্রেশার বেশি থাকলে শুধু ডায়াবেটিসের আশঙ্কাই নয়, হৃদরোগের নানান সমস্যাও দেখা যায়। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ওবেসিটির প্রবণতা
ওবেসিটি বা স্থূলতার কারণে ডায়াবেটিসের মতো মারাত্মক রোগের প্রবণতা বাড়তে পারে। ডায়েটের সঙ্গে সঙ্গে যোগব্যায়ামের অভ্যেস তৈরি না হলে ওজন ক্রমশ বৃদ্ধি হতে থাকবে। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখুন, যাতে ৫-১০ শতাংশ ওজন কমে যায়।
ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা
ডায়েটের গোলমেলের কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রবণতা বাড়ায়। মিষ্টি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে ফল, টাটকা সবজি, শস্যজাতীয় খাবার খান। রেড মিট ও প্রশেসড ফুড এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। ব্রাউন সুগার, মধু বা গুড়ের ক্যালোরি চিনির চেয়ে কম৷ কাজেই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে চিনির বদলে মাঝেমধ্যে এ সব খেতে পারেন। নরম পানীয়তে থাকে কর্ন সিরাপ, যা নিয়মিত খেলে রক্তে ফ্রুকটোজের পরিমাণ বাড়ে। তার হাত ধরে ওজন বেড়ে সূচনা করতে পারে বিপদের৷ প্যাকেটের ফলের রসেও থাকে চিনি। নিয়মিত খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে৷ কমতে পারে ইনসুলিনের কার্যকারিতা।
আরও পড়ুন: এই ৭টি খাবার খেলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে পুরুষদেরও ! সতর্কবার্তা গবেষকদের
যোগব্যায়ামের অভ্যেস তৈরি না হওয়া
সুস্থ শরীরের জন্য প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য যোগ-ব্যায়ামের অভ্যেস করা প্রয়োজন। শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে, ব্লাড সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখতে দরকার এক্সারসাইজ। সপ্তাহে পাঁচদিন ৩০ মিনিট ধরে শারীরিক কসরত করলেই ফিট ও সুস্থ শরীর রাখা সম্ভব। প্রতিদিনের যোগাভ্যাসে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
ধূমপান করা
রক্তচাপ বাড়ানোর মূলে ধূমপানের বিরাট অবদান। তার হাত ধরে ডায়াবেটিস হওয়ার ও তার জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। রক্তচাপ বেশি থাকলে কফি কম খান। কারণ রক্তচাপ বেশি হলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা এমনিই বাড়ে, তার ওপর কফি খাওয়ার ফলে গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়ায় গোলমাল হলে তা আরও বাড়বে।
টানা নাইট ডিউটি করলে
সুস্থ জীবনের শত্রু হল নাইট ডিউটি। দীর্ঘ বছর ধরে রাতে কাজ করলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে ১৭ শতাংশ। ৩–৯ বছর রাতে কাজ করলে ২৩ শতাংশ ও ১০ বছর পেরিয়ে গেলে ৪২ শতাংশের মতো ঝুঁকি থাকে। এর প্রধান কারণ হল মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যাওয়া, যার পরিণতিতে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বলে সমস্যা হয়। এ বিপদ এড়াতে ঘুমানোর আধ ঘণ্টা আগে ডাক্তারের পরামর্শমতো মেলাটোনিন খান।
আরও কয়েকটি কারণ…
অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ে। নিয়মিত এমন হলে রোগের সূচনা হতে পারে৷ কাজেই সঠিক সময়ে খাওয়া–দাওয়া করুন। দুপুরে ১০–১৫ মিনিট একটু ঘুমিয়ে নিলে যেখানে ক্লান্তি কমে, বিকালে কাজের উৎসাহ বাড়ে, সেটিই দু-এক ঘণ্টা পার করে দিলে বিপদ হয়। বাড়ে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা। নিয়মিত এক ঘণ্টা টানা টিভি দেখলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে প্রায় ৩.৪ শতাংশ। সারাদিন এতে মশগুল থাকলে ওজন ও ভুঁড়ি বাড়ার হাত ধরে আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।