কোভিড রোগীর মৃত্যুর জন্য কি সাইটোকাইন স্টর্মই দায়ী? লক্ষণগুলি ধরা পড়লে উপেক্ষা করবেন না

aryama das |

May 20, 2021 | 4:32 PM

চিকিৎসকরা বলছেন, আসলে মোট কোভিড রোগীর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার অতিসক্রিয়তা বা সাইটোকাইন স্টর্মের জন্যই! কীভাবে?

কোভিড রোগীর মৃত্যুর জন্য কি সাইটোকাইন স্টর্মই দায়ী? লক্ষণগুলি ধরা পড়লে উপেক্ষা করবেন না
প্রতীকী ছবি

Follow Us

চিকিৎসকদের কাছে রহস্যময় হয়ে উঠেছে কোভিড (Coronavirus)। সমগ্র বিশ্বজুড়েই দেখা যাচ্ছে অদ্ভুত ঘটনা। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন রোগীর অসুখের উপসর্গের তেমন বাড়বাড়ন্ত লক্ষ করা যাচ্ছে না। তারপর হঠাৎ করেই যেন একটা ঝড় এসে তছনছ করে দিচ্ছে সবকিছু। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে দ্রুত। কেন এমন হচ্ছে? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন বহু রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ (Cytokine Storm) যা নষ্ট করছে একাধিক অঙ্গের কার্যক্ষমতা। এড়ানো যাচ্ছে না অকাল প্রাণহানি ( COVID deaths)।

কী এই সাইটোকাইন স্টর্ম (cytokine storm)?

সহজভাবে ভাবে বললে, আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুটি স্তরে বিভক্ত। প্রাথমিক স্তরে থাকে ম্যাক্রোফাজ, ডেনড্রাইটিস সেল, ন্যাচারাল কিলার সেল ইত্যাদি। এরা সরাসরি শরীরে প্রবিষ্ট জীবাণুকে ধরে খেয়ে ফেলে। যে কোনও ভাইরাস প্রাথমিক স্তরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারলে, প্রথমেই সে বাসা বাঁধে কোষের অন্দরে। এরপর নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে শুরু করে। কোষের অন্দরে এমন বাইরের জীবাণু ঢুকলে তার খবর যায় শরীরের দ্বিতীয় স্তরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কাছে। এই স্তরে থাকে বি সেল, সিডি৪ পজিটিভ সেল, সিডি৮ টি সেল, রেগুলেটরি টি সেল, ন্যাচারাল কিলার সেল ইত্যাদি। এরা চায় নানাভাবে জীবাণুকে গলিয়ে ধ্বংস করতে। এদের মধ্যে বি সেল তৈরি করে অ্যান্টিবডি। আর টি সেল তৈরি করে বিশেষ রাসায়নিক বা ‘সাইটোকাইন’। সাধারণত অ্যান্টিবডি এবং সাইটোকাইনের সাঁড়াশি আক্রমণে রোগজীবাণু পরাস্ত হয়। শরীর হয়ে ওঠে সুস্থ।

আরও জানুন: কোভিডের জন্য বেশি সাবধানে থাকুন সুগারের রোগীরা! কী করবেন এই পরিস্থিতিতে, জেনে নিন

প্রশ্ন হল অন্যান্য রোগজীবাণুর ক্ষেত্রে যেখানে রোগীর ভোগান্তি হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যাচ্ছেন সেখানে কোভিডের ক্ষেত্রে এত প্রাণহানি হচ্ছে কেন?

  • শরীরে করোনা ভাইরাসের মূল প্রবেশ পথ হল নাক, মুখ বা চোখ। এই সমস্ত মাধ্যমে শরীরে ঢোকার পর করোনা ভাইরাস বংশবিস্তার করতে শুরু করে। এভাবে ভাইরাস পৌঁছয় ফুসফুসের কোষগুলিতে। প্রায় দিন সাতেক ধরে হু হু করে ফুসফুসের কোষে কোষে নিজেদের সংখ্যা বাড়াতে থাকে তারা।

 

  • তবে করোনা ভাইরাস অতি দ্রুত বংশবিস্তার করতে সক্ষম। তাই একসঙ্গে একাধিক কোষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। সাধারণ নিয়মে একসঙ্গে এতগুলি কোষ নিজেদের ধ্বংস করে ফেললে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

  •  ফুসফুসে তৈরি হচ্ছে নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ। এই ঘটনায় শরীরের ইমিউন সিস্টেম হঠাৎ করেই হয়ে উঠছে অতিসক্রিয়। রোগ প্রতিরোধী কোষগুলি হঠাৎই বেশি মাত্রায় সাইটোকাইন বের করতে শুরু করে দিচ্ছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে রক্তে দেখা দিচ্ছে সাইটোকাইন মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি বা ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’।

আরও জানুন: করোনাকালে ফুসফুস কতটা সুস্থ, ঘরে বসে বুঝবেন কীভাবে?

  • অতিরিক্ত মাত্রায় সাইটোকাইন তখন আলাদা করে ভাইরাসে ধ্বংস করছে না। বরং অতিসক্রিয় হয়ে ফুসফুসের স্বাভাবিক কোষগুলিকেও ধ্বংস করতে শুরু করছে। ফলে রোগী আর ফুসফুসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করতে অপারগ হয়ে পড়ছেন। শুরু হচ্ছে প্রবল শ্বাসকষ্ট।

 

  • শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও দেখা দিচ্ছে অক্সিজেনের। অক্সিজেনের অভাবে হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে! হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক এবং একসঙ্গে একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ছে। দেখা যাচ্ছে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাও। রোধ করা যাচ্ছে না হঠাৎ প্রাণহানি।

আরও জানুন: শ্বাসকষ্ট, কিডনির সমস্যা থেকে ডায়াবেটিস, সব নিয়ন্ত্রণ হবে আম পাতার গুণে!

  • চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর তাই প্রথম সাতদিন কেটে গেলেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে না। নজরে রাখতে হবে রোগীকে। কোনও সমস্যা হলেই সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে।
Next Article