ডায়াবেটিস থাকলে সেখান থেকে একাধিক শারীরিক সমস্যার সূত্রপাত হয়। বিশ্বজুড়ে নিঃশব্দ ঘাতকের মতো থাবা বসাচ্ছে এই অসুখ। ডায়াবেটিসে হার্ট, চোখ এবং কিডনির উপর প্রভাব পড়ে সবথেকে বেশি। প্রথম থেকেই সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে পরবর্তীতে তৈরি হয় একাধিক জটিলতা। যার মধ্যে অন্যতম হল দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা। টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস—এই দুইয়ের ক্ষেত্রেই আসতে পারে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। যাঁদের পারিবারিক ইতিহাসে সুগার রয়েছে বা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের প্রতি ৬ মাস অন্তর চোখের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। বিষয়টি নিয়ে TV9-এর তরফে বেশ কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছিল মেডিসিন-বিশেষজ্ঞ শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে।
ডায়াবেটিস থেকে কখন চোখের সমস্যা তৈরি হয়?
যাঁদের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে এবং তা অনিয়ন্ত্রিত, সেখান থেকেই আসে চোখের সমস্যা। যদিও ডায়াবেটিসের রোগীদের চোখের সমস্যার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। চোখের মধ্যে যে ল্যাক্রাইমাল গ্রন্থি থাকে, তার ক্ষরণ কমে গেলে সেখান থেকে শুষ্কতার সমস্যা আসে। ড্রাইনেস দীর্ঘদিন ধরে থাকলে সেখান থেকে আসে ক্যাটারাক্ট (Cataracts)-এর সমস্যা। অর্থাৎ চোখে ছানি পড়ে। তখন অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি থাকে না।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কাকে বলে?
ডায়াবেটিস দীর্ঘদিন ধরে থাকলে সেখান থেকে রেটিনায় চাপ পড়ে। রেটিনার ক্ষতি হওয়া খুবই খারাপ। কারণ চোখের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর সঙ্গে যোগ থাকে রেটিনার। আমাদের ইমেজ তৈরি হয় রেটিনায়। এই রেটিনায় যখন ছোট-ছোট সাদা ছোপ (ইডিমা) পড়ে, তখন স্পষ্ট ইমেজ তৈরি হয় না। দৃষ্টিশক্তি ঘোলাটে হয়ে যায়। এই সমস্যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।
কতটা জটিল আকার ধারণ করতে পারে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ?
রেটিনার শিরার মধ্যে অ্যাথেরোক্লেরোসিস হওয়ার দরুণ, অর্থাৎ রেটিনায় কোলেস্টেরল জমতে শুরু করলে তা শক্ত হয়ে যায়। সেখান থেকে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা চিকিৎসা-পরিভাষায় সেন্ট্রাল রেটিনাল ভেনাস অক্লুশন (central retinal venous occlusion) নামে পরিচিত। এবার এই রেটিনাল লেয়ারে রক্তপাতের সম্ভাবনা থেকে যায় বেশির ভাগ সময়ে, যা Proliferative retinopathy নামে পরিচিত। এখান থেকে আজীবন অন্ধত্ব আসতে পারে।
কোন ডায়াবেটিসে এই চোখের সমস্যা সবচাইতে বেশি?
টাইপ ১ আর টাইপ ২—এই দুই ধরণের ডায়াবেটিসেই আসতে পারে চোখের এই সমস্যা। টাইপ ২ ডায়াবেটিস তুলনায় পরে আসে। এক্ষেত্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিস জিনগত। এই সমস্যা অনেক কম বয়স থেকে জাঁকিয়ে বসে রোগীর শরীরে। ফলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অনেকটাই বেশি।
ডায়াবেটিস কি সম্পূর্ণ ভাবে সেরে যেতে পারে?
ডায়াবেটিসে নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, কিন্তু কখনই তা সম্পূর্ণ ভাবে সেরে যায় না। তবে অনেক সময় থাইরেডের সমস্যা বাড়লে সেখান থেকেও ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে পরবর্তীতে থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসলে এই ডায়াবেটিস সেরে যায়। এই ধরণের ডায়াবেটিসকে সেকেন্ডারি ডায়াবেটিস (Secondary Diabetes) বলা হয়।